গ্রাম বাংলার একটি অতি পুরনো খাবার লাউপাতার ভর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক সহপাঠীর দেশের বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম। তার রাঙা ঠাকুমার হাতে বানানো লাউপাতার ভর্তা, প্রথম খাওয়া। কি যে অসম্ভব ভালো খেতে ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। কয়েকদিন আগেই শুনলাম রাঙা ঠাকুমা আর নেই। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে হল ঠাকুমার মত কি একদিন এসব পুরনো খাবারের পদগুলোও হারিয়ে যাবে! না তা হতে দেওয়া যায় না। তাই নিজেই বানিয়ে ফেললাম। আর চলে এলাম আপনাদের সাথে এর রেসিপি শেয়ার করতে। মানুষ চলে যায় কিন্তু তাঁর শিল্পকর্ম থেকে যায়। রান্না করা কোন শিল্পের চেয়ে কম নয়। ভালোবেসে, যত্ন করে বানাতে হয়, যেমনটা আগেকার মানুষগুলো করতেন। যাই হোক এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে আর রেসিপি লিখে শেষ করা যাবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক লাউপাতার ভর্তা কি ভাবে বানাতে হবে। আর হ্যাঁ বানিয়ে খেয়ে ভালো লাগলে রাঙা ঠাকুমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। এটা ওনার রেসিপি।
উপকরণঃ
- লাউপাতা ৫০ টা মত
- রসুন কোয়া ২০-২৫টা
- পেঁয়াজ একটা ছোট সাইজের
- শুকনো লঙ্কা ৬-৭ টা
- কাঁচা লঙ্কা ২-৩ টে
- ধনেপাতা কুচি ছোট এক বাটি
- টমেটো পোড়া দুটো
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
- তেল ৩-৪ চামচ (সরষের তেল)
বানানোর পদ্ধতিঃ
লাউপাতা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর কুচি কুচি করে কেটে নিন। টমেটো পুড়িয়ে খোসা ছাড়িয়ে রাখুন। একটি কড়াইয়ে তেল ৩-৪ চামচ দিয়ে তাতে রসুন, শুকনো লঙ্কা, কাঁচা লঙ্কা আর পেঁয়াজ দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। খুব কড়া করে ভাজবেন না। এর মাঝেই ধনেপাতা কুচি দিয়ে দিন এতে। ভাজা হলে একটি থালায় তুলে রাখুন।
এবার ওই কড়াইয়ে লাউপাতা ঢেলে দিন। ঢাকা দিয়ে কম আঁচে ৫-৬ মিনিট রাখুন। জল দেবেন না। লাউপাতা থেকেই যথেষ্ট জল বের হবে। ঢেকে ঢেকে সেদ্ধ করে নিন পাতা। জল একদম মজে পাতা সেদ্ধ হলে স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। শিল পাটায় প্রথমে লাউপাতা বাদ দিয়ে বাকি সব উপকরণ বেটে নিন। পোড়া টমেটো রসুন লঙ্কা বাটার মধ্যে দিয়ে বেটে নেবেন। এগুলো বাটা হলে লাউপাতা দিয়ে বাটুন। বাটা হয়ে গেলে নুন চেক করে প্রয়োজন অনুযায়ী নুন মেশান। একটি বাটিতে তুলে নিয়ে এক থেকে দু চামচ সরষের তেল ছড়িয়ে দিন। প্রস্তুত লাউপাতার ভর্তা। গরম ভাতের সাথে একটি বারের জন্য হলেও খেয়ে দেখুন। অসম্ভব ভালো লাগবে আপনাদের এটা খেতে।