skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

লবণ কম পরিমাণে খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন

সালাদে নুন দিচ্ছে

লবণ ছাড়া রান্না করা একেবারেই অসম্ভব। অনেক সুস্বাদু খাবারও বিস্বাদ লাগে যদি তাতে লবণের পরিমাণ ঠিকঠাক না থাকে। কিছু কিছু খাবার, যেমন ভর্তা, শুঁটকি, পান্তাভাতে একটু লবণ বেশি না হলে ঠিক জমে না। সাদা দানাদার এই খাদ্য উপকরণটি যেমন খাবারের স্বাদ নির্ধারণ করে তেমনি এর উপর শরীরের সুস্থতাও নির্ভর করে। 

লবণের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই সমান। শরীর ঠিক রাখতে চাইলে লবণ হিসাব করে খাওয়া বাঞ্ছনীয়, অন্যথায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কম লবণ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ জেনে নিন৷ আরো জানতে পারবেন লবণ খাওয়ার সঠিক মাত্রা সম্পর্কে। 

কম পরিমাণে লবণ খাওয়ার ৭টি উপকারিতা 

খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনলে একসাথে অনেকগুলো রোগ প্রতিহত করা সম্ভব। দৈনন্দিন লবণ গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেখুন কি কি উপকার হতে পারে।

১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবেঃ 

এমনিতে সোডিয়াম দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। বেশি লবণ খেলে রক্তের পরিমাণ ও চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তের স্বাভাবিক সঞ্চালন ব্যাহত হয়। কম লবণ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর প্রেসারের ওষুধ খাওয়ারও দরকার পড়ে না। তবে আপনি যদি আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শে প্রেসারের ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে ভিন্ন কথা। তখন নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ করবেন না, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলবেন। 

২. হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবেঃ

রক্তচাপ যখন নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন হার্টকে রক্ত পাম্প করার সময় বেগ পেতে হয় না। কিন্তু ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে হার্ট তখন অতিরিক্ত হারে রক্ত পাম্প করে। এতে হার্টের উপর চাপ পড়ে, ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের শিকার হতে হয়। লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনলে হৃদযন্ত্র তার আপন গতিতে চলমান থাকে। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের সাথে হৃদরোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেহেতু লবণ খাওয়া কমিয়ে আনলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২০% পর্যন্ত কমানো যায়। 

৩. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবেঃ 

শরীরে বাড়তি ওজনের জন্য শুধু মেদ দায়ী থাকে না, পানিও দায়ী থাকে। অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে পানি বেশি জমে থাকে। আবার ফাস্টফুড জাতীয় খাবারে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও সোডিয়াম থাকে প্রচুর পরিমাণে। এগুলো খেলেও মেদ জমে ওজন বেড়ে যাবে। এসব খাবার পরিহার করলে বাড়তি ওজন কমে যাবে।

৪. কিডনি সুস্থ থাকবেঃ

মানবদেহে কিডনি সোডিয়াম ও ইলেক্ট্রোলাইটের অনুপাত বজায় রাখে। আপনি যখন লবণ বেশি খাবেন তখন সোডিয়াম বেড়ে যাবে ও ইলেক্ট্রোলাইটের সাথে অনুপাত নষ্ট হবে। আপনার কিডনি তখন ব্যালেন্স করার জন্য বেশি পরিমাণে পানি ধরে রাখবে শরীরে৷ এতে করে শরীরে পানি জমে হাত, পা, মুখ ফুলে যাবে। আর বাড়কি পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে কিডনিতে জটিলতার সৃষ্টি হবে। লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে সোডিয়াম-ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং কিডনির উপর চাপ কম পড়বে।

৫. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবেঃ

শুধুমাত্র লবণ খাওয়ার পরিমাণ ঠিক রাখলে আপনি একইসাথে রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা, এবং হৃদরোগ থেকে মুক্তি পাবেন। লবণের কারণে হাড় ক্ষয় ও মস্তিষ্কের সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই সময় থাকতে সচেতন হলে অস্টিওপোরোসিস ও ব্রেইন ডিজিজ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কম লবণ খাওয়া লোকেরা বেশি লবণ খাওয়া লোকেদের তুলনায় মাথাব্যথায় কম ভোগে। 

৬. প্রস্রাবের বেগ কম থাকবেঃ 

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। ফলে তৃষ্ণা বেশি পায়, অনেক ঘাম হয়,  এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য তখন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হয়। আর বেশি পানি পান মানেই ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা। লবণ কম করে খাবেন, তাহলে ঘাম ও প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে। আর রাতে বারবার ঘুম থেকে উঠে বাথরুমেও যেতে হবে না। তাতে ঘুমের সাইকেল ঠিক থাকবে।  

৭. স্টোমাক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবেঃ

স্টোমাক বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের জন্য দায়ী মূলত কিছু অন্ত্র ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হাই সোডিয়াম সার্কামস্ট্যান্সে ভালোভাবে এবং তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। কম লবণ খেলে এসব ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটানোর সুযোগ পায় না। ফলে স্টোমাক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

লবণ খাওয়ার সঠিক মাত্রাঃ

সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক ২৩০০ মিলিগ্রাম লবণ গ্রহণ যথেষ্ট। এর বেশি খাওয়া একেবারেই উচিত না, তা সে রান্নাতেই হোক বা কাঁচা হোক। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ণ বয়স্কদের জন্য দৈনিক ২ চা চামচ লবণ হচ্ছে আদর্শ মাত্রা। 

ভারতীয় পুষ্টিবিদ তানিয়া কাপুরের মতে, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরের জন্য ৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম দরকার যা ১০ গ্রাম লবণ থেকে পাওয়া যায়। তবে সাধারণ হিসাব হচ্ছে, 

• প্রাপ্ত বয়স্করা দৈনিক ৬ গ্রাম (১ চা চামচ) 

• ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুরা দৈনিক ২ গ্রাম

• ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুরা দৈনিক ৩ গ্রাম

• উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা দৈনিক মাত্র আধা চা চামচ লবণ

বিশেষ কথাঃ

  • রান্নায় নুন যতটুকু খাওয়া হয় ততটুকুই শরীরের জন্য যথেষ্ট। বাড়তি করে আর খাওয়ার দরকার নেই। তবুও যদি বাড়তি খাওয়ার দরকার হয় তাহলে ‘সেন্ধা’ লবণ খাবেন। এই লবণ প্রক্রিয়াজাত থাকেনা তাই এটি কাঁচা খাওয়া নিরাপদ। 
  • সবসময় আয়োডিনযুক্ত লবণ খাবেন। এটি শরীরে থাইরয়েড ও হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক লবণে সিলিকন, ক্যালসিয়াম, কপার, নিকেল প্রচুর পরিমাণে থাকলেও আয়োডিন থাকে না। তাই সাধারণ লবণের পরিবর্তে সামুদ্রিক লবণ শরীরের ব্লাডসেল রক্ষা করতে তৎপর থাকে। আবার আয়োডিন অনুপস্থিত থাকায় সামুদ্রিক লবণ গ্রহণে তেমন উপকার পাওয়া যায় না।
  • রান্নায় সাদা লবণের পরিবর্তে গোলাপি হিমালয়ান লবণ ব্যবহার করুন। অনেকে টক ফল খাওয়ার জন্য মরিচ ও সাদা লবণ ব্যবহার করে থাকেন। ফল খাওয়ার জন্য সাদা লবণের বদলে বিটলবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • মাঝে মাঝে লো সল্ট রেসিপিতে রান্না করতে পারেন, তাতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার তাগিদ এমনিই কমে যাবে। নানা রকম ভেষজ উপাদান ও মশলা দিয়ে রান্না করলে ভালো হয়। গাজর, ব্রোকলি, ভুট্টা, শসা ইত্যাদিতে সোডিয়াম ও ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে৷ তাই এসব খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। 
  • প্যাকেটজাত খাবার, ফ্রোজেন ফুড, রেডিমেইড স্যুপ পাউডার, টমেটো স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ, আচার ইত্যাদি খাবারে সোডিয়াম লেভেল হাই থাকে। আবার এসব খাবারে ডায়বেটিস ও ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাতে পারে৷ কাজেই এসব আইটেম যতোটা সম্ভব পরিহার করুন। প্যাকেটজাত খাবার কিনতে হলে লেবেল দেখে তারপরে কিনুন। চেষ্টা করুন বাড়িতেই লো সোডিয়াম স্যুপ বানিয়ে খাওয়ার। 
Article Tags:
Article Categories:
Lifestyle

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *