প্রোটিনের যতগুলো উৎস আছে তার মধ্যে ডিম হচ্ছে সবচাইতে সহজলভ্য। ছোট-বড় সবার স্বাস্থ্যের জন্য ডিম একটি উপকারী খাবার। ডিমে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা দিয়ে শরীর অনেকাংশেই সুস্থ রাখা সম্ভব। ডিমের তরকারি, পোচড এগ, ভাজা ডিমের চাইতে ডিম সেদ্ধ করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ডিম খেলে শরীর সারাদিনের জন্য এনার্জি পায়, তার সাথে বিভিন্ন রোগবালাইও দূর হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতাঃ
১. চুল পড়া কমায়ঃ
আপনার যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলে প্রতিদিন সকালে অবশ্যই একটি করে সেদ্ধ ডিম খাবেন। ডিমের ভিটামিন এ এবং ই চুলের গোড়ায় পুষ্টির যোগান দেয়। এতে চুল পড়ার হার কমে যায়। এছাড়াও ডিমের প্রোটিন চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে।
২. দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেঃ
বড় থেকে ছোট সবার দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে সেদ্ধ ডিম। কারণ এতে আছে লুয়েটিন এবং জিয়াক্সেনথিন নামক দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট৷ এগুলো ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচায় এবং রেটিনার কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রেটিনা সুস্থ থাকলে ছানি সহ অন্যান্য চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
৩. হাড় শক্ত হয়ঃ
ব্রেকফাস্টে একটি করে সেদ্ধ ডিম হাড় ও দাঁত সুগঠিত করতে সাহায্য করবে। এটি ভিটামিন ডি-এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ফলে হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য থাকে অটুট।
৪. অ্যামাইনো অ্যাসিড বাড়ায়ঃ
অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীর সুস্থ রাখার জন্য অতীব জরুরি একটি উপাদান। আর ডিমে এই অ্যাসিডের কমতি নেই। তাই ডিম খেলে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যাবে খুব সহজে৷ আবার ডিমে যে ৯ ধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে তা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি থেকে মন ভালো থাকে। তাই প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ডিম খাদ্য তালিকায় রাখুন আর থাকুন প্রফুল্ল।
৫. মস্তিষ্ক সচল করেঃ
ডিমে বিদ্যমান কোলিন নামক এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্ট ব্রেইন পাওয়ার বাড়ায়। ফলে মস্তিষ্ক আগের চাইতে বেশি সচল হয়। আর মস্তিষ্ক সচল থাকলে মনোযোগ বাড়ে, বুদ্ধি প্রখর হয়, এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তাই বলা চলে কোলিনের উপরই অনেকাংশে নির্ভর করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা। যখন দেহে কোলিনের ঘাটতি দেখা দেয় তখন আলজেইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয় ব্রেইন। ডিমের কারণে মস্তিষ্কের মেমব্রেন ও পেশি সুগঠিত হয়। ফলে মস্কিষ্কের ঝিল্লির গঠন হয় এবং স্নায়ু থেকে পেশিতে সংবেদন পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়।
৬. কোলেস্টেরল কমায়ঃ
কোলেস্টেরল যে সবসময় খারাপের ইঙ্গিত বহন করে তা কিন্তু না। এটি ভালো ও খারাপ দুই ধরণেরই হয়। অনেকেই মনে করেন যে ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায়, তাই ডিম খাওয়া উচিত না। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ডিমে যে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায় তা আসলে ভালো কোলেস্টেরল। সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশে এই উপকারী কোলেস্টেরল বেশি থাকে। এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আর খারাপ কোলেস্টেরল কম থাকলে হার্টও সচল থাকে। ফলে হৃদরোগ ও ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমে। আবার হৃদযন্ত্রে রক্ত জমাট বাঁধাও আটকায় ডিম।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
ডিমে আছে সেলেনিয়াম যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আবার এই উপাদানটি শরীরে থাইরয়েড হরমোন ক্ষরণের দিকে খেয়াল রাখে। ফলে বিভিন্ন ক্রোনিক এবং থাইরয়েড ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ঘন ঘন জ্বর, সর্দি, কাশি হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ডিমের জিঙ্ক ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা কম হয়। লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সেদ্ধ ডিম অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।
৮. ওজন কমায়ঃ
কম খরচে সহজে ওজন কমানোর চিন্তা থাকলে প্রতিদিন সকালে একটি বা দুইটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিত। এতে পেট ভরে যায় এবং পরবর্তীতে জাঙ্ক ফুড বা নরমাল ফুড খেয়ে পেট ভরানোর দরকার পড়ে না। ফলে ওজন বাড়ারও কোন আশঙ্কা থাকে না। সেদ্ধ ডিম খেলে দুই সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১১ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে, তবে যেটুকু থাকে তা দিয়েই শরীরের প্রয়োজন মিটে যায়। সকালে এই ক্যালরি শরীরে ঢুকলে সারাদিনে আর বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯. রক্তশূন্যতা কমায়ঃ
সেদ্ধ ডিমে যে আয়রন থাকে তা রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। কারণ এই আয়রন শরীরে লোহিত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। আর লোহিত কণিকার পর্যাপ্ততা থাকলে রক্তশূন্যতা হয় না। ডিম কিন্তু হিমোগ্লোবিন বাড়াতেও সাহায্য করে।
১০. সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ
ডিম সালফারের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। সালফার নখ মজবুত করে, নখ ভাঙ্গা ঠেকায়, এবং নখ সাদা ও সুন্দর রাখে। ভিটামিন ডি এবং বি কমপ্লেক্সে ভরপুর ডিম ত্বক ও চুল সুন্দর করে এবং পেশি ব্যথা কমায়। আবার ডিমের ভিটামিন ই ত্বকে থাকা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে। এতে নতুন কোষ তৈরি হয়ে ত্বক তো সুন্দর দেখায়ই, সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে যায়। হাড় ও দাঁত সুগঠিত করে ডিম।
সতর্কতাঃ
তবে ডিম সেদ্ধ করে খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুসিদ্ধ না হলে ডিমের ব্যাকটেরিয়া অক্ষত থাকে। ফলে শরীরের উপকার হওয়ার বদলে উল্টো ক্ষতিই হয় বেশি। দৈনিক ৩টি পর্যন্ত ডিম খাওয়া যায়। বেশি খেলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড থাকলে ডিম এড়িয়ে চলা উচিত। ডিম খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি কোন ক্রোনিক ডিজিজে ভুগতে থাকেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন।