দেশী হোক বা বিদেশী খাবার, সাইড ডিশ বা মেইনকোর্স অথবা অ্যাপেটাইজার – কমবেশী সব রেসিপির জন্য চিজ বা পনির একটি অতি প্রয়োজনীয় আইটেম। গোটা পৃথিবীতে পনিরের ডজন ডজন ফ্লেভার আছে। সব পনির সব ধরণের রেসিপিতে ব্যবহার করা যায় না। এতো এতো ফ্লেভারের মাঝে নির্দিষ্ট একটা ফ্লেভার বাছাই করাটা যেমন কঠিন, তেমনি কিনে আনার পরে সঠিক ভাবে ব্যবহার না করলে খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণ হয় না। চিজের অনেক ফ্লেভার থাকলেও সেগুলোর নির্দিষ্ট কিছু ভাগ আছে। আজকের আর্টিকেলে থাকছে বেসিক ৮ ধরণের চিজ যা সম্পর্কে সবারই জানা উচিত।
বেসিক ৮ ধরণের চিজঃ
- ফ্রেশ চিজ
- মাইল্ড সেমি-সফট চিজ
- সফট-রাইপেনড চিজ
- সারফেস-রাইপেনড চিজ
- সেমি-হার্ড চিজ
- হার্ড চিজ
- ব্লু চিজ
- ওয়াশড-রিন্ড চিজ
১. ফ্রেশ চিজঃ
অন্যান্য পনির একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করার পর খাওয়া হয়। কারণ তাতে পনিরের স্বাদ বাড়ে। কিন্তু ফ্রেশ চিজের জন্য সংরক্ষণের কোন ব্যাপার নেই। বানানোর সাথে সাথেই খাওয়া যায়। এই ধরণের পনিরের স্বাদ থাকে হালকা। দুধকে প্রথমে ছানা করে জল ঝরাতে হয়, তারপর ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলেই ফ্রেশ চিজ তৈরি। তবে ফ্রেশ চিজ খুব বেশী শক্ত থাকে না। ঘন ও জমাট বাঁধা থাকে, কোন কোন ক্ষেত্রে হালকা লাম্পও থাকে। কটেজ চিজ, রিকোটা চিজ এগুলো ফ্রেশ চিজের অন্তর্ভুক্ত। ফল, চিজকেক, লাসানিয়া ইত্যাদির খাবারের সাথে ফ্রেশ চিজ খাওয়া যায়।
২. মাইল্ড সেমি-সফট চিজঃ
এই ধরণের পনির সংরক্ষণ করতে হয় কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত। এতে ময়েশ্চারের পরিমাণ থাকে অনেক বেশী। স্বাদ ও গন্ধ হয় মোলায়েম, অনেকটা মাখনের মতো। তাপের সংস্পর্শে আসলে মাইল্ড সেমি-সফট চিজ সুন্দরভাবে গলে যায়। মন্টারি জ্যাক, হাভার্টি, ফন্টিনা হচ্ছে এই ধরণের পনিরের অন্তর্ভুক্ত। হাভার্টি চিজ স্লাইস করা যায়, গ্রিল করা যায়, অথবা সরাসরি গলানো যায়। আবার মন্টারি জ্যাক চিজের স্বাদটা মাখনের মতো হলেও হালকা কটু ভাব থাকে। মন্টারি জ্যাক চিজ বার্গারের সাথে খাওয়ার জন্য মানানসই৷
৩. সফট-রাইপেনড চিজঃ
সফট-রাইপেনড চিজের ভিতরের লেয়ার আর বাইরের লেয়ারে পার্থক্য থাকে। ফ্রেশ অবস্থায় এই পনিরের বাইরের দিকটা হয় ধবধবে সাদা এবং মখমলের মতো নরম ও কোমল। আর ভিতরের দিকটা হয় ক্রিমি। যতো পুরনো হবে ততো এই পনির আরও নরম হবে। এই পনির দেখতে গোলাকার হয়। ব্রি এবং ক্যামেম্বার্ট হচ্ছে সফট-রাইপেনড চিজ। ব্রি চিজ রুম টেম্পারেচারে রেখে খেতে হয়। ক্যামেম্বার্ট চিজ তাজা অবস্থায় স্বাদহীন এবং শক্ত থাকে। কিন্তু পুরনো হলে ভিতরের ও বাইরের লেয়ার নরম ও তরল হয়ে যায়।
৪. সারফেস-রাইপেনড চিজঃ
সফট-রাইপেনড আর সারফেস-রাইপেনড চিজের মধ্যে পার্থক্য হলো, সফট-রাইপেনড আগাগোড়াই নরম থাকে। আর সারফেস-রাইপেনড চিজের বাইরের দিক শক্ত কিন্তু ভিতরের দিক নরম থাকে। সারফেস-রাইপেনড চিজের বাইরের লেয়ার অমসৃণ থাকে, যেটা ফ্রেঞ্চ এবং আমেরিকান গোট চিজেও দেখা যায়। অনেক সময় বাইরের লেয়ারে মোল্ড থাকে। মোল্ডের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় বাইরের লেয়ার বা সারফেস প্রয়োজন মতো শক্ত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইরের লেয়ারটা পাতলা থাকে আর ভিতরে পনির তরল অবস্থায় থাকে।
৫. সেমি-হার্ড চিজঃ
সুইস চিজ, চেডার চিজ, কোলবি চিজ হচ্ছে সেমি-হার্ড চিজের অন্তর্ভুক্ত। এই ধরণের পনির শক্ত হয় কিন্তু এতে ময়েশ্চারের পরিমাণ অনেক বেশী থাকে। গ্রিলড চিজ স্যান্ডউইচে সেমি-হার্ড চিজের ব্যবহার বেশী দেখা যায়। চেডার চিজের স্বাদ প্রথমে ক্রিমি এবং রং সাদা থাকলেও বয়সের সাথে সাথে স্বাদ, রং, এবং টেক্সচারে পরিবর্তন আসে। পুরনো চেডার চিজের রং হয় মিষ্টি কুমড়ার কমলা রঙের মতো, স্বাদ হয় কড়া। ধরতে লাগে শুকনো ও ছোবা ছোবা বা ক্রাম্বলি টাইপের। কোলবি চিজ দেখতে অনেকটা চেডারের মতো। তবে কোলবি চেডারের চাইতে চিজ তুলনামূলক ভাবে কম কটু স্বাদের এবং বেশী সফট হয়। সুইস চিজের গায়ে ছিদ্র থাকে ও হালকা হলুদ রঙের হয়। ফল, সবজি, এবং স্যান্ডউইচে সুইস চিজ ব্যবহৃত হয়।
৬. হার্ড চিজঃ
হার্ড চিজ বেশ কয়েক বছর যাবৎ সংরক্ষণ করতে হয়৷ এতে চিজেরর স্বাদ হয় নোনতা, টেক্সচার হয় শক্ত এবং ক্রাম্বলি। গৌডা চিজ, এশিয়াগো চিজ, পারমেজান চিজকে বলা হয় হার্ড চিজ। এই ধরণের চিজ সাধারণত ঝুরি করে খাওয়া হয় পাস্তার সাথে অথবা স্যুপে সিজনিং হিসেবে। অন্যভাবেও হার্ড চিজ খাওয়া যায়। এশিয়াগো চিজের স্বাদ বাদামের মতো। তাজা অবস্থায় এশিয়াগো অফ-হোয়াইট রঙের হয় এবং নরম থাকে। কিন্তু পুরনো হতে থাকলে এর রং হলদেটে হয় এবং টেক্সচার ক্রাম্বলি হয়ে যায়। তাজা এশিয়াগো গলিয়ে খাওয়া যায়, ম্যাচিওরড এশিয়াগো স্লাইস বা গ্রেট করে খাওয়া যায়। গৌডা চিজের ফ্লেভারটা স্মুদ থাকে। এটাও স্লাইস, কিউব, গ্রেট করে, গলিয়ে খাওয়া যায়। ফল ও বাদামের স্বাদের পারমেজান চিজ গ্রেট করে স্যুপ ও পাস্তার সাথে খাওয়া যায়।
৭. ব্লু চিজঃ
ব্লু চিজ আসলে নীল রঙের চিজ না। এই ধরণের পনির মূলত অফ-হোয়াইট রঙের হয় কিন্তু এর ভেতরে নীল রঙের মোল্ড থাকে। অনেকটা মানবদেহের শিরার মতো। মোল্ডের কারণে এই পনিরের স্বাদ হয় টক। কখনো কখনো কড়া স্বাদের হতে পারে৷ ব্লু চিজ নরম ও শক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। রোকফোর্ট, গর্গনজোলা, স্টিলটন ইত্যাদি হচ্ছে ব্লু চিজ।
৮. ওয়াশড-রিন্ড চিজঃ
এই ধরণের পনিরের ‘রিন্ড’ বা বাইরের লেয়ারটা বারবার ধোয়ার কারণে কমলা ও গোলাপী রঙের হয়ে যায়। নুন জল, বিয়ার, বা ব্র্যান্ডি দিয়ে পনির ধুলে এরকম হয়। ওয়াশড-রিন্ড চিজ নরম, সেমি হার্ড, বা পুরোপুরি শক্ত হতে পারে। অ্যাপেনজেলার, লিমবার্গার, মুয়েনস্টার ইত্যাদি হচ্ছে ওয়াশড-রিন্ড চিজ। লিমবার্গার চিজের গন্ধ বেশ কটু কিন্তু স্বাদটা হালকা হয়। যতো পুরনো হয় লিমবার্গার ততো নরম হয়। মুয়েনস্টার চিজ হালকা হলুদ রঙের হয়, এর রিন্ড বা বাইরের লেয়ার কমলা রঙের হয়৷ এর স্বাদ কখনো হালকা, কখনো কড়া, আবার কখনো স্বাদহীন লাগে খেতে৷ সহজে গলে যায় বলে স্যান্ডউইচ, চিজবার্গার ইত্যাদি খাবারে মুয়েনস্টার চিজ ব্যবহৃত হয়।