ডুমুর বা ফিগ বা আনজীর এর খাদ্য গুন গুনে শেষ করা যাবে না। ডুমুর একটি মরশুমি ফল। কিন্তু শুকনো বা ড্রায়েড ডুমুর প্রায় সবসময়ই পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, এছাড়া প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি আছে। এছাড়া এতে ফাইবার এর উপস্থিতি এই ফলের খাদ্যগুনকে বাড়িয়ে তুলেছে।আসুন জেনেনি ডুমুর ফলটি আমাদের শরীরকে কি কি ভাবে ভালো রাখতে সক্ষম।
১. কনস্টিপেশনঃ
এই ফলটিতে বর্তমান ফাইবার, আমাদের হজমে সাহায্য করে। এছাড়া এটি কনস্টিপেশনকে দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ডাইরিয়া বা অন্য কোনোরকম পেটের গোলযোগ সহজে হতে দেয় না।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
এতে উপস্থিত ফাইবার গুলি আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়ায় মেটাবলিজমকে ঠিক রাখে এবং শরীরে অকারণ মেদ জমদে দেয় না। তাই ওজন কমাতে ডুমুর খাওয়া খুবই ভালো।
৩. হাইপারটেনশনঃ
অতিরিক্ত লবন খাওয়ার ফলে বা অন্য কোনো শারীরিক দুর্বলতার কারণে আমাদের শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়াম এর অসমতা দেখা দেয়। ফলে হাইপারটেনশন হতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত ডুমুর ফল খেলে আমাদের শরীরে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের সামঞ্জস্য রক্ষা হয়। ফলে হাইপারটেনশন হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।
৪. এন্টিঅক্সিডেন্টঃ
ডুমুর ফলে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে এটি ফ্রি র্যাডিকেল গুলিকে নষ্ট করে। ফলত এটি আমাদের রক্তনালী গুলিকে ক্ষত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। যার ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র কার্যকরী থাকে।শুকনো ডুমুরদের শরীরে ট্রাইগ্লিসারিডসকে কম করে।
৫. আয়রনঃ
ডুমুরে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। একটি ডুমুর আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন এর ২শতাংশ সরবরাহ করতে সক্ষম। আয়রন এর পরিমান কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। শুকনো ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রন এর পরিমানকে স্বাভাবিক রাখে। ফলত রোজ একটি করে শুকনো ডুমুর আমাদের হিমোগ্লোবিন এর পরিমানকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম যোগান দেয় ফলত আমাদের হাড় শক্ত হয় এবং বোনডেন্সিটি স্বাভাবিক থাকে।
৬. সোডিয়ামঃ
বেশি পরিমানে সোডিয়াম আমাদের শরীরে গেলে অনেক সময় আমাদের মূত্র দিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম নির্গত হয়। ডুমুর ফলে ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম থাকে। ফলত এটি আমাদের মূত্র দিয়ে নির্গত হওয়া ক্যালসিয়াম এর পরিমানকে কম করে দেয়।
৭. গলাব্যথা বা ভোকাল কর্ডঃ
আমাদের গলাব্যথা বা ভোকাল কর্ড এর কোনোরকম অসুবিধা আমরা ডুমুর খেয়ে সারিয়ে তুলতে পারি। এতে প্রচুর পরিমানে মুসিলগা থাকে। ফলত এর রস আমাদের গলাব্যথা কমায় এবং ভোকাল কর্ডকে আরাম দেয়। এছাড়া সর্দি কাশি, এস্থেমা সারাতেও এটি সহায়তা করে।
৮. ব্রেস্ট ক্যান্সারঃ
মেনোপজ হওয়া কালীন বা এর পরে মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়। সাধারণত হরমোনের অসামঞ্জস্যের ফলে এই ধরণের সমস্যা তৈরী হয়। যার ফলে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরী হয়, যা যেকোনো ক্যান্সার এর মূল কারণ। ডুমুরে বর্তমান ফাইবার এইধরণের ফ্রি রেডিক্যালস গুলিকে নষ্ট করে। এছাড়া এর উপাদান গুলি শরীরে হরমোনের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৯. ত্বকঃ
শরীরের অন্যান্য অংশের মতো এই ফল আমাদের ত্বকের জন্যও অত্যন্ত সুফলদায়ী। এতে বর্তমান জরুরি নিউট্রিশনস আমাদের ত্বককে ভালো রাখে। এতে উপস্থিত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের ত্বকের নমনীয়তা রক্ষা করে। এছাড়া এই ফল আমাদের স্কিনটোনে কে হালকা করে। এছাড়া এর উপাদান গুলি যেকোনো রকম স্কিন ইনফেকশন এর হাত থেকে রক্ষা করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের টক্সিন গুলিকে দূর করে ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
১০. চুলঃ
ত্বকের মতো ডুমুর চুলের জন্যও উপযোগী। এতে বর্তমান প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন আমাদের চুলকে মজবুত করে, চুল পড়া বন্ধ করে। চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়া এর ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের চুলের স্বাভাবিক কন্ডিশনারের কাজ করে। এই চুলকে ঘনত্ব প্রদান করে এবং চুল মসৃন করে তোলে।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদন একটি শিক্ষামূলক তথ্য। ডুমুর কতটা পরিমাপে খাবেন, রোজ খেতে পারবেন কিনা, কোন সমস্যা যদি থাকে আগে থেকে খাওয়া উচিত কিনা এসব খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন।