রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধি করতে ধনেপাতার ব্যবহার চলে সারা বছর। তাই প্রতিদিনই চাই ধনেপাতার যোগান। আর এই যোগানটি যদি আপনার ঘর থেকেই পাওয়া যায় তবে কেমন হয় বলুন তো? অবাক হচ্ছেন? এমনটা আপনি খুব সহজেই করতে পারেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। চলুন তাহলে আজ বলবো কিভাবে ঘরে ধনেপাতার চাষ করা যায়।
ধনে পাতার গুণাগুণ শুধু স্বাদেই নয় এর বহু ভেষজ গুণও আছে যা উল্লেখ না করে পারলাম না। ধনেপাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখের আলসার জনিত ঘা নিরাময় করে। এটি আমাদের চোখের জন্যও উত্তম। যাদের রক্ত শূন্যতা আছে তারা নিয়মিত ধনেপাতা খেলে উপকার পাবেন। ধনেপাতার পুষ্টি উপাদান স্মৃতিশক্তি ভালো রাখা ও মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখতে সহায়তা করে।
আপনার পরিবারের জন্য ধনেপাতার পুষ্টি সজলভ্য ও সাশ্রয়ী করতে আপনি চাইলে ঘরের এক কোণেই এ বহু গুনাগুনসম্পন্ন উদ্ভিদটি চাষ করতে পারেন। সৌখিন বৃক্ষ প্রেমিক যারা তাদের জন্য তো এটা ‘সোনায় সোহাগা’ একসাথে ঘরে প্রকৃতির পরশ আবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সহজলভ্যতা।
যে উপকরণগুলো প্রয়োজন হবেঃ
- পুরানো বা পরিত্যাক্ত কন্টেইনার বা ছোট কোন গামলা যা সহজেই ঘরে রাখা যায়। ছিদ্রযুক্ত হলে জালি হলে বেশ ভালো হয়।
- সতেজ ধনে বীজ বা ধনিয়া অথবা ব্যবহৃত ধনেপাতার শিকড়
- মাটি ও সাধারণ জল
- দড়ি
ধনেপাতা চাষের পদ্ধতিঃ
আপনি চাইলে ধনেপাতা দুটি উপায়ে চাষ করতে পারেন। প্রথমটি বীজ থেকে চারা তৈরি করে এবং দ্বিতীয়টি শিকড় সংগ্রহ করে। প্রথম উপায়টি কিছুটা সময় বেশি লাগবে কারণ বীজ থেকে চারা হওয়া কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তবে বীজ থেকে যে নতুন চারা জন্মাবে তা যথেষ্ট উন্নত ও হৃষ্টপুষ্ট হবে।
ধনেপাতা চাষ ঘরে বারোমাসঃ
প্রথম ধাপঃ
পরিত্যাক্ত পাত্র বা গামলাটিতে মাটি ভর্তি করুন। ঝরঝরে এবং দানাদার মাটি হলে ভালো হয় তবে যেকোন মাটিই ব্যবহার করা যাবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ
ধনিয়া বীজগুলো আলতো করে পিষে নিন যাতে দুই ভাগ হয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপঃ
যেদিন বীজগুলো রোপন করবেন তার আগের দিন সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। এত অঙ্কুরোদগমন সহজ হবে।
চতুর্থ ধাপঃ
গামলার মাটিগুলো সামান্য ভিজিয়ে কাদার মতো করে নিন। বীজগুলো মাটির উপর আস্তে আস্তে ছড়িয়ে দিন। সবগুলো বীজ ছড়ানো হয়ে গেলে এর উপর আবার কিছু মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। এবার মাটির উপর দিয়ে হালকা জল ছিটিয়ে দিন। তবে বেশি জল দিতে যাবেন না। কারণ মাটি যদি বেশি ভিজা থাকে তবে অঙ্কুর পচে যাবে।
গামলাটি দড়ির সাহায্যে নিরাপদ জায়গায় ঝুলিয়ে দিন যাতে পর্যাপ্ত রোদ ও বাতাস পাওয়া যায়। এরপর অপেক্ষার পালা…যখন ৫/৭ দিন অতিবাহিত হয়ে যাবে তারপার আপনার কাঙ্ক্ষিত ধনিয়ার ছোট ছোট চারা দৃশ্যমান হবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে আপনি আপনার ব্যবহার উপযোগী ধনেপাতা পেয়ে যাবেন।
বিশেষ সর্তকতাঃ
- অতি উৎসাহী হয়ে বীজের উপর বারবার জল দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়া সম্ভবনা শত ভাগ। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। বীজের মান যত ভালো হবে ফলাফল তত ভালো পাবেন। তাই সঠিক বীজগুলো বেছে নিন।
- ১৫/২০ দিন পর যখন গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করবেন তখন শিকড়সহ না তুলে উপর থেকে পাতা কেটে নিন। কারণ এ থেকে আরেক বার প্রোডাক্টশন পাওয়া যেতে পারে।
বিশেষ টিপসঃ
- অঙ্কুরে পিঁপড়ার আক্রমণ হতে পারে তাই বিষয়টি খেয়াল রাখুন। কোন কীটনাশক ব্যবহার না করে হোম রেমিডি প্রয়োগ করুন।