বার মাসে তের পার্বনের দেশে খাওয়ার শেষে ক্ষীর থাকবে না পাতে তা তো চিন্তাই করা যায় না। ক্ষীর আমাদের দেশের নিজস্ব মিষ্টি, আমাদের ঐতিহ্য। খাটি দুধের তৈরি এত মজাদার ও সুস্বাদু ক্ষীর বোধহয় বাংলা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু বাংলার মিষ্টান্নেই নয় ক্ষীরের কথা উল্লেখ আছে বাংলার সাহিত্যে আর লোকমুখে প্রচলিত কথায়ও।
ক্ষীরের আছে নানান ধরন। তালের ক্ষীর, ডেলা ক্ষীর, সেহুই ক্ষীর, খোয়া ক্ষীরসহ আরও অনেক পদের ক্ষীর তৈরি হয়ে এদেশে। এরা প্রত্যেকেই স্বাদে অতুলনীয় এবং নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে বাংলায় প্রচলিত। এর মধ্যে সবচেয়ে মজার ক্ষীর হচ্ছে খোয়া ক্ষীর। এক বাটি সুস্বাদু খোয়া ক্ষীর আপনার পেট ও মন দুটোই ভরিয়ে রাখতে পারে, পাবেন তৃপ্তিও। বানানোর পদ্ধতি জানা না থাকায় অনেকেই বাজার থেকে কিনে এনে খেয়ে থাকেন এই ক্ষীর। নানান উৎসবে মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি করা হয় খোয়া ক্ষীর। ঘরে খুব সহজেই তৈরি করা যেতে পারে আপনার এই প্রিয় ক্ষীরটি। চলুন জেনে নেই ঘরেই কিভাবে তৈরি করবেন খোয়া ক্ষীর।
ঘরে খোয়া ক্ষীর বানাতে যা যা লাগবেঃ
- আধা লিটার গরুর দুধ (জল মেশানো ছাড়া)
- এক কাপ পরিমান গুড়ো দুধ
- পরিমান মত কনডেন্সড মিল্ক
- পরিমান মত চিনি
- এক চা চামচ এলাচের গুড়ো
- হাফ চা চামচ জাফরানের গুড়ো
- দুই চা চামচ ঘি
- হাড়ি বা ননস্টিক প্যান
- ছোট বাটি বা ছোট হাড়ি
- চামচ বা খুন্তি
যেভাবে তৈরি করবেন খোয়া ক্ষীরঃ
প্রথম ধাপঃ
প্রথমেই জল মেশানো ছাড়া হাফ লিটার গরুর দুধ ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন এবং দুধের হাড়ি হালকা আঁচে চুলোয় বসিয়ে দিন। চামচ অথবা খুন্তি দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন যেন হাড়ির তলায় দুধ লেগে না যায়। হাতের কাছে ননস্টিকের প্যান থাকলে তাতেও বসাতে পারেন। এতে দুধ জ্বাল দেবার সময় লেগে যাবার ভয় থাকবে না।
দ্বিতীয় ধাপঃ
দুধে বলক উঠতে শুরু করলে তাতে এক কাপ পরিমান গুড়ো দুধ মিশিয়ে নিন। এক্ষেত্রে গুড়ো দুধ সরাসরি তরল দুধের হাড়িতে ঢেলে দিলে অনেক সময় দানা দানা হয়ে থাকে বা ল্যাম্পস ওঠে। তাই অন্য একটি ছোট বাটি কিংবা হাড়িতে সামান্য গরম তরল দুধ নিয়ে তাতে গুড়ো দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর গ্যাসে বসানো দুধের হাড়িতে তা ঢেলে দিন এবং নাড়তে থাকুন। এতে করে গুড়ো দুধ দানা দানা হয়ে যাবে না বা হাড়িতে লেগে যাবে না।
তৃতীয় ধাপঃ
দুধ মিশানো হয়ে গেলে এতে হাফ কাপ পরিমান চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। চাইলে চিনির বদলে পরিমান মতন কনডেন্সড মিল্ক দিতে পারেন। এতে দুধ জলদি ঘন হবে। যে যেমন মিষ্টি পছন্দ করেন সে অনুযায়ী কনডেন্সড মিল্ক বা চিনি মেশাবেন। কনডেন্সড মিল্ক বা চিনি যেটাই দিন না কেন দুধ নাড়তে থাকুন। নয়ত লেগে যাবে।
চতুর্থ ধাপঃ
দুধে চিনি বা কনডেন্সড মিল্ক ভালো ভাবে মিশে গেলে এবার এতে এক চা চামচ এলাচের গুড়ো মিশিয়ে দিন। এবারে এতে হাফ চা চামচ জাফরানের গুড়ো মিশিয়ে দিন। এতে অন্যরকম একটা সুন্দর ঘ্রাণ আসবে। এবার দুধ ঘন হতে দিন। দুধ ফুটে উঠতে থাকলে খুন্তি বা চামচ দিয়ে হাড়ির গায়ের চারপাশে লেগে থাকা দুধ হাড়ির মাঝের তরল দুধের সাথে মিশিয়ে দিন। ভুলেও দুধ চুলায় রেখে সামনে থেকে সরে যাবেন না। লাগাতার নাড়তে থাকুন।
পঞ্চম ধাপঃ
দুধ একদম ঘন হয়ে মন্ডের মত হয়ে এলে তাতে দুই চা চামচ ঘি দিয়ে ভালো মত মিশিয়ে নিন। খুন্তি বা চামচ দিয়ে হাড়ির গায়ে লেগে থাকা দুধের অংশও মন্ডের সাথে মিশিয়ে দিন। মন্ডটি এবারে হালকা বাদামী রঙের হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
ব্যাস! তৈরি হয়ে গেলো মজাদার খোয়া ক্ষীর। এবার এই ক্ষীর দিয়ে সেমাই, পায়েস, মিষ্টি বানিয়েও খেতে পারেন তৃপ্তি করে। বানানোর পদ্ধতি জানা থাকলে এই ক্ষীর আপনি ঘরেই বানাতে পারবেন যখন-তখন এবং একবার বানিয়ে নিলে এই ক্ষীর ফুড গ্রেড বক্সে ভরে রেফ্রিজারেটরের নর্মালে রেখে দিলে মোটামুটি এক মাস ভালো থাকবে।