খেজুর খেতে অনেকেই ভালবাসেন। খেজুর পুষ্টিকর, তাছাড়া প্রায় সারাবছরই একে পাওয়া যায় বলে খেজুর সহজলভ্যও বটে। সাধারণত খেজুর কিনে আনার পর বেশিরভাগ মানুষই সেটি পচে যাবে বলে দ্রুত খেতে ফেলেন। তবে অনেকেই জানেন না, দোকান থেকে খেজুর কিনে আনার পরও একে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করব কীভাবে খেজুর সংরক্ষণ করবেন, তার আগে জেনে নেওয়া যাক, খেজুর কেন খাবেন।
খেজুর কেন খাবেন?
খেজুর শুধু সহজলভ্য নয়, পুষ্টিকরও। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ২৮২ ক্যালোরি থাকে। এছাড়া খেজুরে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে থাকে। শরীরে ভিটামিন এ, বি৬, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, আয়রনের যোগান দিতেও এর জুড়ি নেই। যাদের অ্যানিমিয়া থাকে, তাঁদেরকেও ডাক্তাররা বেশি করে খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। মজার ব্যাপার, খেজুর খেতে খুব মিষ্টি লাগলেও এটি কিন্তু ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। খেজুরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায় এবং ক্যানসার, অ্যালজাইমারকে প্রতিহত করে।
ভাল করে খেজুর বাছুনঃ
খেজুর কেনার সময় ভাল করে বেছে খেজুর কেনাটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ফলের দোকানে একসঙ্গে জড়ানো অবস্থায় খেজুরগুলি রাখা থাকে। সেখান থেকে বেছে কেনাটা সমস্যার। তবে সম্ভব হলে খেয়াল রাখবেন, খেজুরগুলি যেন গোটা এবং ভাল থাকে। পচা ও শুকনো যেন না হয়। যদি কোনও চাষীর থেকে টাটকা খেজুর কেনেন, সেগুলিও ভাল করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। তবে প্যাকেটের খেজুর কিনলে এই সমস্যা হয় না। সেগুলি সাধারণত ঠিকঠাকই থাকে। সংরক্ষণের আগে খেজুরগুলিকে ভাল করে ধুয়ে বেছে তবেই সংরক্ষণ করবেন।
১. তাড়াতাড়ি খাবেন?
ধরুন আপনি দোকান থেকে খেজুর কিনে এনেছেন। পরিকল্পনা রয়েছে মোটামুটি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেগুলিকে খেয়ে ফেলবেন। এরকম প্ল্যান থাকলে খেজুরগুলিকে এমনি কোনও এয়ারটাইট কন্টেনারে রাখুন। এক্ষেত্রে কাচ বা প্লাস্টিক যে-কোনওরকম এয়ারটাইট পাত্রই ব্যবহার করতে পারেন। এই পাত্রে ঠেসে-ঠেসে খেজুর ঢোকান। এয়ারটাইট কন্টেনার না থাকলে প্লাস্টিকের ব্যাগেও এয়ারটাইট করে খেজুর রাখতে পারেন। এই কৌটো ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন বা ঘরের তাপমাত্রাতেও রাখতে পারেন।
২. ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণঃ
খেজুরগুলি যদি সেমি ড্রাই হয়, তাহলে সেগুলিকে ঘরের তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করতে পারেন। যে-কোনও কন্টেনারে সেগুলিকে ভরে রেখে দিন। শুধু খেয়াল রাখবেন যেন কৌটোয় সরাসরি সূর্যের আলো না লাগে। গ্যাস স্টোভ বা ওভেনের কাছাকাছি তাপেও খেজুর না রাখা ভাল। তাহলে ওগুলি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. নরম খেজুর?
খেজুর যদি নরম হয়, অর্থাৎ সেগুলিকে যদি কিওর করা না হয়, তাহলে টাটকা ভাব আর ফ্লেভার বজায় রাখার জন্য সেগুলিকে ফ্রিজে স্টোর করাই বাঞ্ছনীয়। একটি এয়ারটাইট পাত্রে খেজুরগুলিকে ভরে রেখে দিন। বেশ কিছুদিন থাকবে।
৪. ফ্রিজে রাখলে একবছর!
হ্যাঁ, খেজুর ফ্রিজে ঠিক করে সংরক্ষণ করলে কিন্তু তা একবছর পর্যন্ত ভাল থাকে। এয়ারটাইট পাত্রে রেখে দিন। যখন মনে হবে, বের করে খেতে পারেন। তবে ফ্রিজে খেজুর রাখলে নরমের বদলে সেমি-ড্রাই খেজুর বেছে নিন। সেগুলি আরও বেশিদিন ভাল থাকবে। আর যদি আরও বেশিদিন স্টোর করতে চান? তাহলে একেবারে জিপলক ব্যাগে ভরে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। খাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে বাইরে বের করে রেখে দেবেন।
৫. তাড়াতাড়ি খাওয়াই শ্রেয়ঃ
যতই সংরক্ষণ করুন না কেন, খেজুর কিনে আনার পর কিন্তু এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই খেয়ে ফেলা ভাল। এমনিতে খেজুর দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, নষ্ট হয় না, এটা সত্যি। তবে যত বেশি সংরক্ষণ করবেন, ফ্রিজে রেখে দেবেন, ততই কিন্তু খেজুরের ফ্রেশনেস আর ফ্লেভার কমবে। এছাড়া বেশিদিন রেখে দিলে খেজুর আস্তে-আস্তে শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তখন খোসার গায়ে সাদা-সাদা দাগ দেখা যায়। এগুলিতে কিন্তু আসলে সুগার ক্রিস্টাল। খেজুরগুলিকে সামান্য গরম করলেই সুগার ক্রিস্টাল গলে যাবে। আর যদি দেখেন খেজুরের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা স্বাদ একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, বা পচা গন্ধ বেরচ্ছে, তাহলে কিন্তু সেগুলিকে ফেলে দেওয়াই ভাল।
৬. শুকনো খেজুর?
বাজারে কিন্তু শুকনো খেজুরও পাওয়া যায়। এই খেজুর দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঠিক থাকে। তবে সাধারণত এমনি খাওয়ার বদলে এগুলিকে বিভিন্ন ধরনের রান্নাতেই ব্যবহার করা হয়। এইধরনের শুকনো খেজুর কিনলে ঘরের তাপমাত্রাতেই রাখলে পারেন। ব্যবহারের আগে শুধু গরম জলে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে দিলে নরম হয়ে যাবে।
তাহলে খেজুর সংরক্ষণ আর কোনও ব্যাপারই নয়! মনে রাখবেন, খেজুর কিন্তু খুবই উপকারী। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁরা প্রক্রিয়া করা সাদা চিনির বদলে খেজুর খান। সুস্থ থাকবেন।