সুস্বাস্থ্যের জন্য খেজুরের অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উৎপাদিত এই ফল এশিয়ার দেশগুলোতে ফলন তেমন একটা নেই বললেই চলে। ভিটামিনস, মিনারেল, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সুগার, প্রোটিনে সমৃদ্ধ খেজুর।
খেজুর খেলে শরীর থাকবে ফিট সবসময়। মুক্তি মিলবে হাজারো রোগ থেকে। আজকের লেখায় থাকছে খেজুরের উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
খেজুরের উপকারিতাঃ
- খেজুরে সোডিয়াম পরিমাণ সামান্য কিন্তু পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং দেহে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়।
- যেহেতু খেজুর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু এটি হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে হার্টের সমস্যা সচরাচর হয় না। আবার এতে বিদ্যমান পটাশিয়াম স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রায় ৪০% কমায়।
- শিশুদের খাবারে অরুচির প্রতিকার করতে নিয়মিত খেজুর খাওয়ানো যায়। তাছাড়া এর সলিউবল ও ইনসলিউবল ফাইবার এবং অ্যামিনো অ্যাসিডস হজমশক্তি বাড়ায়। তাই খাবার দ্রুত হজম হয় আর কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে থাকে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য খেজুর খেলে সাথে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে।
- বলা হয়ে থাকে যে খেজুর শরীরের মোট আয়রন চাহিদার ১১ ভাগই পূরণ করতে সক্ষম। এর পাশাপাশি দুধ থেকেও পাওয়া যায় যথেষ্ট আয়রন। দুধ আর খেজুর একসাথে খেলে শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হবে। পাশাপাশি রক্তে হিমোগ্লোবিন ও প্রোটিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ও ফাইবারের কারণে খেজুর ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন উৎপাদনের মাধ্যমে অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- লিউটেন, জিক্সাথিন, এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খেজুর রেটিনা ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
- খেজুরে থাকা ক্যারোটিনয়েডস, পলিফেনলস, এবং অ্যান্থোসায়ানিনস পেটের আলসার, ক্যান্সার, এবং অন্যান্য ক্রনিক ডিজিজ প্রতিরোধ করে।
- শরীরে বিভিন্ন জটিল ও প্রাণঘাতী রোগ যাতে বাসা বাঁধতে না পারে সেটাও খেয়াল রাখে খেজুর। এটি আলজেইমার্স ও অন্যান্য ব্রেইন ডিজিজ, ওবেসিটি, এবং কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ নিরাময় করতে পারে।
খেজুরের অন্যান্য উপকারিতাঃ
- খেজুরে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, এবং অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্য। এগুলো ত্বক শিথিল হওয়া রোধ করে এবং দেহের মেলানিনের সংগ্রহ করা আটকায়। ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না, তারুণ্য বজায় থাকে বহুদিন। পুরুষের কঠিন ত্বককে মোলায়েম এবং উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করে খেজুর।
- বন্ধ্যাত্ব সমস্যার প্রতিরোধক হিসেবে আফ্রিকার লোকজন খেজুর সেবন করে থাকেন। খেজুর ও খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে, এবং অন্ডকোষের শক্তি বাড়ায়। তাছাড়া খেজুরে বিদ্যমান এস্ট্রাডিওল এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস বীর্যের গুণগত মান উন্নত করে।
- খেজুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চুল ও ত্বকের সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
- খেজুরের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনস হাড় মজবুত করে এবং মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে। আবার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে খেজুর।
খেজুর খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
প্রতিদিন সকালবেলা খেজুর খাবেন। এতে সারাদিনের জন্য শক্তি দেহে সঞ্চিত থাকবে।
- খেজুর শুকনা খাওয়ার চাইতে ভিজিয়ে খাওয়া উচিত। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস জলে কয়েকটা খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে সেই জল সহ খেজুর খান। এটা হার্টের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করবে।
- দুধ ফোটানোর সময়ে দুইটি করে খেজুর দিয়ে দেবেন। তারপর খালি পেটে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে এই দুধ খাবেন। স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি টানা ১০ দিন খেলে রক্তস্বল্পতা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি দূর হবে। খেজুর মেশানো হালকা গরম দুধ রাতে ঘুমের আগে খেলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- কাজের চাপে শরীর দুর্বল হয়ে আসলে একটি বা দুইটি খেজুর খাওয়া যেতে পারে। তাতে পুরনো এনার্জি ফিরে আসবে।
- জিমে ওয়ার্কআউট করলে শরীর থেকে ঘামের সাথে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বেরিয়ে যায়। তাই ওয়ার্কআউটের সময়ে শরীর চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে খেজুর। ওয়ার্কআউটের অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা আগে দুই-চারটি খেজুর খাবেন। এতে কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে নিঃসৃত হবে, ফলে সহজে ক্লান্তিবোধ হবে না। আবার পেট থেকে দূষিত পদার্থও বের হয়ে যাবে।
- হুট করে সুগার লো হয়ে শরীরে জটিলতা দেখা দিলে চিনির বদলে খেজুর খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে খেজুর ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে নিয়মিত চিনি খেলে সুগার বাড়ার যে ঝুঁকিটা থাকবে, নিয়মিত খেজুর খেলে সেটা হবে না। তবে ডায়বেটিসের সমস্যা থাকলে খেজুর খেতে হবে সতর্কতার সাথে। তখন দৈনিক একটি বা দুইটির বেশি শুকনা খেজুর খাওয়া উচিত না।
- ওজনহীনতার সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন চার-পাঁচটি খেজুর খাবেন। এতে থাকা শর্করা, প্রোটিন, এবং ভিটামিন ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। খেজুর আর শসা একসাথে খেতে পারলে আরো উপকার পাবেন।
শসা ও খেজুর একসাথে কি খালি পেটে খাব?
হ্যাঁ একসাথে খাওয়া যায়। কোন অসুবিধা নেই। খালিপেটে খাওয়া খুব ভালো।