সারা বিশ্ব জুড়ে জলের ঘাটতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই সমস্যা সমাধান শুধু প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না। মানুষের প্রকৃতির প্রতি কিছু কর্তব্য আছে, তাই জল নষ্ট না করে তা সংরক্ষণ করা উচিত। সংরক্ষণ মানে বালতি বালতি জল ভরে রাখা না। জল সংরক্ষণ মানে জল অপচয় না করে তা সঠিক ভাবে ব্যবহার করার কিছু উপায়। আজ তা শেয়ার করছি আপনারাও তা কাজে লাগান।
১. গাছে জল দেওয়ার সঠিক উপায় প্রয়োগ করুনঃ
গাছে জল দেওয়ার সময় মাটি জল দ্রুত শোষণ করতে পারে। গাছে জল দেওয়ার সময় তাই দ্রুত জল ঢালুন। বালতিতে জল ভরে মগে করে দেওয়ার পরিবর্তে জলের পাইপ দিয়ে জল দিন। এতে জলের প্রবাহ দ্রুত থাকার দরুন মাটি জলদি জল শুষে নেয়। ফলে বালতি বালতি জল দেওয়ার দরকার পড়ে না। জলের অপচয় কমে।
২. জলের কল অযথা খুলে রাখবেন নাঃ
জলের বালতি, গামলা কলের নিচে বসিয়ে অনেকেই অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে যান। ফলে জল ভরে গিয়ে উপচে পড়ে। এটা করা বন্ধ করুন। খেয়াল রাখুন জলের কলে বসানো বালতি ভরেছে কিনা। যদি অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকেন ঘরের কাউকে বলে রাখুন জল ভরেছে কিনা খেয়াল রাখতে।
দাঁত মাজতে মাজতে বেসিনের কল অনেকেই খুলে রাখেন। এতে জল নষ্ট হয়, আমরা ভাবি মাত্র ২ মিনিটই তো। কিন্তু রোজ এই দু-মিনিট করে করে বছরে কত মিনিট জল অপচয় হয় একবার ভাবুন। বাচ্চারা এই কাজটা খুবই করে। তাই তাদেরকে বলুন এটা না করতে। বুঝিয়ে বলুন কেন করবে না এটা। জলের অপচয় সম্পর্কে তাদের বুঝিয়ে বলুন।
৩. জল সংরক্ষণ করুন রান্নাঘরে জলের ব্যবহারের মধ্যে দিয়েঃ
- শাক সবজি ধোয়ার জন্য জলের ব্যবহার স্মার্ট ভাবে করুন। জলের কল খুলে তার নিচে ধুতে থাকলে অনেক জল ফালতু ফালতু অপচয় হয়। একটি বড় গামলায় জল নিয়ে তাতে শাক সবজি ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে নিন। এতে জল অনেক কম খরচ হয়।
- বাসন ধোয়ার সময় অযথা জলের কল খুলে তাতে বাসন মাজতে মাজতে বাসন ধুতে থাকেন অনেকেই এটা বন্ধ করুন। আগে একবারে সব বাসন মেজে নিন তারপর ধুন। জল অনেক কম খরচ হয়।
- মাছ মাংস ডিফ্রস্ট করার জন্য অনেকেই কল খুলে তার নিচে রেখে দেন। এতে জল নষ্ট হয়। এটা না করে বরং একটা গামলায় জল ভরে তাতে রাখুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাছ মাংস ডিফ্রস্ট হয়ে যাবে।
৪. ওয়াটার পিউরিফায়ারের বর্জ্য জল ব্যবহার করুনঃ
আজকাল বেশির ভাগ বাড়িতেই ওয়াটার পিউরিফায়ার থাকে। তার থেকে যে জল বেরোয় তা সংরক্ষণ করে রাখুন। যেখান থেকে ওই জল বেরোয় সেখানে একটি পরিষ্কার ছোট বালতি রাখুন। ওই জল গাড়ি ধোয়ার কাজে বা বাড়ির সামনের চাতাল ধুতে ব্যবহার করুন।
এসি থেকে যে জল বেরোয় তাও এইভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজেই।
৫. বৃষ্টির জল সংরক্ষণঃ
অনেক বাড়িতেই আজকাল বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা হয়। বাড়িতে জায়গা থাকলে ছোট কুয়ো বানিয়ে তাতে এই জল সংরক্ষণ করতে পারেন আপনারা। এটি প্রাকৃতিক ভাবে জল সংরক্ষণের পর্যায় পড়ে। এতে মাটির নিচের জলের স্তরও বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে তা রোজকার নিত্য নৈমিত্তিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
যদি কুয়ো বানানোর জায়গা নেই তাহলে বর্ষাকালে বালতি, গামলাতে জল ধরে ব্যবহার করুন। দেখবেন এটা করতেও বেশ মজা লাগবে।
৬. জল সংরক্ষণের বিষয়ে বাচ্চাদের বোঝানঃ
ছোট বাচ্চারা জল খুবই অপচয় করে। তাদের ছোটবেলা থেকেই জল সংরক্ষণের বিষয় গল্পের ছলে বলুন। দেখবেন এতে তাদের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার সাথে সাথে ছোটবেলা থেকেই একটা দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে। জল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝান।