আলু ও পেঁয়াজ ছাড়াতো রান্নাই চলে না, তাই না? কিন্তু এই আলু ও পেঁয়াজ নিয়ে আমরা একটি বড় ভুল করে থাকি। এদের একসাথে সংরক্ষণ করি। যা অনেক ক্ষতিকর। জেনে নিন কারনটা কি।
দ্রুত পচতে এবং নষ্ট করে দিতে পারেঃ
- পেঁয়াজ এমন এক উপাদান যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইথিলিন গ্যাস। এটি একটি অন্যতম কারন পেঁয়াজ ও আলুকে আলাদা আলাদা রাখার। কেননা পেঁয়াজ প্রচুর পরিমাণে ইথিলিন গ্যাস উৎপাদন করে থাকে। এবং সেই সাথে এটি অনেকটা ইথিলিন গ্যাস নির্গত করে থাকে বা বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। আর এই ইথিলিন গ্যাস যেকোন ধরনের ফল অথবা যেকোন সবজিকে দ্রুত পাকতে সাহায্য করে বা কাজ করে থাকে। এর জন্য যদি কেউ পেঁয়াজ ও আলুকে একসাথে একটি পাত্রে রাখে তাহলে ইথিলিন গ্যাস আলুকে আরও দ্রুত পচতে এবং নষ্ট করে দিতে পারে।
- পেঁয়াজ থেকে নির্গত হওয়া ইথিলিন গ্যাস আলুর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাকেও অনেক বেশি দ্রুত করতে পারে। যা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতির কারন হতে পারে। কেননা আলুর অংকুরে থাকে গ্লাইকোয়ালকালয়েড। আলুর অংকুরের এই গ্লাইকোয়ালকালয়েড হয়ে থাকে অতি উচ্চ ঘনত্বের। এবং এই উচ্চ ঘনত্বের কারণে আলুর অংকুর অনেক বিষাক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আর এই কারনেই আলুর অংকুর মানুষের শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। যার কারনে আলু ও পেঁয়াজ সবসময় আলাদা আলাদা রাথতে হয়। এদের একসাথে রাখা উচিৎ নয়।
- আলুর অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেড়ে গেলে সেই আলু থেকে দ্রুত অংকুর বের হতে শুরু করে। যার কারনে আলু অনেক তাড়াতাড়ি পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে আলুকে অনেকদিন সংরক্ষণ ও করা যায় না। আবার অংকুর হওয়ার কারনে আলু মানুষের খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যেতে পারে। দেখে অবাক হলেন? তাহলে কারনটি শুনুন, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আশা করি। এর কারন হলো আলুর অংকুরে হয়ে থাকে গ্লাইকোয়ালকেলোয়েড নামক এক অত্যন্ত বিষাক্ত উপাদান, যা মানুষের শরীরের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও দুর্বল স্থান মস্তিষ্কের উপর গিয়ে তার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- আবার অনেক সময় আলু ও পেঁয়াজ একসাথে এক ঝুড়িতে বা একটি টুকরিতে গাদাগাদি করে রাখলে অনেক চাপে গরমেও আলু ও পেঁয়াজ দ্রুত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বা পচে যায়।
- পেঁয়াজ এবং আলু উভয়ের মধ্যে একটি মিল বা একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর সেই সহজাত বৈশিষ্ট্য টি হলো আলু ও পেঁয়াজ উভয়েই তাদের আর্দ্রতা ছেড়ে দেয়। যাতে করে এগুলো খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ফলে এদের একসাথে একটি ঝুড়ি বা টুকরিতে রাখলে তারা উভয়েই দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বা পচে যায়।
আলাদা আলাদা জায়গা খুঁজুনঃ
- পেঁয়াজ ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন হয় এমন কোনো উঁচু স্থানের যেখানে বায়ুচলাচল ব্যবস্থা অনেক ভালো। আবার আলু ভালো রাখার জন্য বা আলু সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন হয় এমন জায়গা যে জায়গাটা অন্ধকার ও শীতল। সেই সাথে হতে হবে শুকনো কোন জায়গা। স্যাত স্যাতে কোন জায়গায় আলু রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে বা পচে যাবে। আমাদের স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা হয়ে থাকে, সে তাপমাত্রার চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রায় আলু সব থেকে বেশি ভালো থাকে। সুতরাং আলু ও পেঁয়াজ উভয়ের জন্য কার্যকর বা প্রয়োজনীয় স্থান বা আবহাওয়া ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই এদের কখনো একসাথে এক ঝুড়িতে সংরক্ষণ করা যায় না। এবং একত্রে এদের সংরক্ষণ করা উচিৎ ও নয়।
- পেঁয়াজ কাগজের ব্যাগে বা নেটের ব্যাগে করে উচু স্থানে ঝুলিয়ে রাখা যায় কিন্তু আলুকে নয়। কারন আলুকে একটি ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে রাখতে হয়। হতে পারে তা কোন ঝুড়ি, র্যাক, মিটসেফ বা কোন তাকে। আবার ভাঁড়ার ঘর বা আলাদা কোন ঘরে যেখানের তাপমাত্রা থাকবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে অনেক কম, কিন্তু তাই বলে আবার রেফ্রিজারেটর নয়, রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রার চেয়ে আবার বেশি তাপমাত্রা, এমন কোন জায়গা সেখানে আলু ভালো থাকে।
বিশেষ সর্তকতাঃ
- যদি আলুতে অংকুর হয়ে যায় তবে সেই আলুকে কখনোই অংকুরসহ রান্না করবেন না বা খেতে যাবেন না। এটা আপনার দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। এই অঙ্কুরিত আলুর বিশেষ উপাদানটি আপনার মস্তিষ্কের উপর গিয়ে তার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে যদি অঙ্কুরিত আলুর এই অংকুরগুলো আপনি ভালো করে কেটে ফেলে দেন তাহলে এরপর তা রান্না করা বা খাওয়া যেতে পারে। অংকুর কেটে ফেলে দেয়ার পর সেই আলু নিরাপদ হয়ে যায় খাওয়ার জন্য।
- আলু ও পেঁয়াজের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম হওয়া প্রয়োজন ঠিক আছে। কিন্তু তা ফ্রিজে রাখতে যাবেন না। কারন ফ্রিজে আলু ও পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে বের করার পর তা নরম হয়ে যায়।