বাঙালিদের প্রিয় খাবারের তালিকার শুরুতেই থাকে ভাত। ভাতের সাথে রকমারি ভর্তা তো থাকছেই। সে কি শুধু ভর্তা, ঝাল ঝাল রকমারি সব ভর্তা। আর এই ভর্তার প্রধান উপাদান হলো জিভে জল আনা লাল লঙ্কা বা মরিচ। অনেকেই ভাজা শুকনা মরিচ বা লাল মরিচ অথবা পোড়া মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে সেটা দিয়ে ভাত, আবার কেউ একটু ডিম ভেজে নেবেন, কেউ একটা মাছ, কেউ আবার ঘি ভাতে পোড়া মরিচ নেবেন। মোট কথা খাবার হবে ঝোলে-ঝালে।
লাল লঙ্কার গুঁড়োও ভেজাল!
এতো গুনাগুন সম্পন্ন জিনিস হওয়া সত্তেও লাল মরিচের গুড়া কেনার সময় আমাদের মনে খুঁত খুঁতানি থেকেই যায় কেননা বর্তমানে সবকিছুতেই ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। সে তালিকায় গুড়া মশলাও বাদ যায় নি। অনেকেরই মরিচের গুঁড়া কেনার ক্ষেত্রে মন খুঁত খুঁত করে যে আসল হবে তো আদৌও। কেননা তরকারি রান্নার সময় মরিচের গুড়া ব্যবহার করলে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা বোঝার কোন উপায় থাকে না।
ভেজালের ভিড়ে সঠিক লঙ্কা বা মরিচটা চেনা কি খুব সোজা? না কখনই না। এসকল মরিচ প্যাকেটজাত করা হয় মানহীন মরিচ থেকে, অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য থাকে বেশি লাভ করা। তাই অনেকেই মরিচের রঙ গারো করার জন্য কৃত্তিম রঙ মেশায়।
কৃত্তিম বা ভেজাল লঙ্কার গুঁড়ো আসলে কি?
- লাল লঙ্কার গুঁড়ো বা গুড়া মরিচ বানানোর ক্ষেত্রে ইটের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়।
- এছাড়াও ভেজাল হিসেবে ট্যালকম পাউডার, ও সাবানের গুঁড়ো বা রঙ করা বালিও ব্যবহার করা হয় যা মানুষের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
উপায় কি আছে ভেজাল বোঝার?
যদি বাজার থেকে কিনে আনা মরিচের গুড়া ব্যবহার করার আগেই জানা যেত বা বোঝা যেত যে এতে ভেজাল আছে কী না। তাহলে কতই না ভালো হতো। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব, কেন নয়। কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করে এখন আপনি যাচাই করে নেওয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন যে এই মরিচের গুড়া তে কোন ভেজাল আছে কি-না। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক ভেজাল মরিচের গুড়া যাচাই করার উপায়-
- এক গ্লাস পরিষ্কার জলে এক চা চামচ লাল লঙ্কার গুঁড়ো আলতো করে ঢালুন, দেখবেন হুড়মুড় করে অনেক গুলো গুঁড়ো নিচে পড়ে যাবে। এরপর গ্লাসের ওপর ভাসতে থাকবে পাতলা একটি স্তর। সেই স্তরটিকে আলতোভাবে চামচ দিয়ে তুলে হাতের তালুতে উঠিয়ে নিন। এরপর তা ধীরে ধীরে ঘষতে থাকুন। যদি আপনার হাতে খসখসে শক্ত দানাদার কিছু একটা লাগে তাহলে বুঝে নিবেন তাতে ইটের বা বালির গুঁড়ো মেশানো আছে।
- আবার যদি এতে সামান্য পরিমাণ ফেনা উঠে তাহলেও বুঝতে হবে এতে সাবান বা পাউডার এই জাতীয় কিছু মেশানো আছে।
- অথবা একটি কাঁচের পাত্র নিন পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্যে, তাতে জল দিয়ে সামান্য পরিমাণ মরিচের গুঁড়ো দিয়ে দিন। যদি তা নাড়ার আগেই দেখেন পানি লাল রঙের হয়ে যেতে থাকে, তবে বুঝতে হবে মরিচের গুঁড়োয় কৃত্রিম রঙ মেশানো হয়েছে। আবার কৃত্রিম রঙ তাৎক্ষণিকভাবে গলে গ্লাসের জলের নিচের দিকে নামতে শুরু করবে।
- এছাড়াও জলের চেয়ে হালকা, যেমন কাঠের গুঁড়ো বা এ জাতীয় কিছু যদি মেশানো থাকে তাহলে সেটাও পানির ওপরে ভাসতে থাকবে।
ভেজাল লাল লঙ্কার গুঁড়ো শুধু চিনলেই কি হবে? না, বরং পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রথমে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্যাকেটের লাল লঙ্কার গুঁড়োর উপর একবারে নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। আপনি চাইলে বাড়িতেই তাজা লঙ্কা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে গুঁড়া করে রান্নার মশলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। যা আপনার ও আপনার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সাস্ব্যের জন্য খুবই উপকারি। সেই সাথে রান্নার স্বাদের তো কথাই নেই, তা বেড়ে যাবে বহুগুণ। কেননা ভেজাল লাল লঙ্কার গুঁড়ো ব্যবহার করলে তা যেমন সাস্ব্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর সেই সাথে এই ভেজাল মিশ্রিত লঙ্কার গুঁড়ো ব্যবহার করলে রান্নায় সেই আসল পাওয়া যায় না। তাই স্বাস্থ্য ও স্বাদ উভয়ের জন্যই প্রয়োজন আসল বা খাঁটি লাল লঙ্কার গুঁড়ো।