গ্যাসের যা দাম বেড়েছে, তাতে গ্যাসে রান্নার কথা ভাবলেই গায়ে ছ্যাঁকা লাগে মধ্যবিত্তর। ফলে দৈনন্দিন রান্নার কাজে এখন অনেকে গ্যাসে রান্না করার চেয়ে ইন্ডাকশন কিংবা মাইক্রোওয়েভে রান্না করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকেন।
মাইক্রোওয়েভে রান্না করার সুবিধাঃ
- মাইক্রোওয়েভে রান্না করা সহজ, রান্নাঘরে আগুনের আঁচে না ঘেমে দিব্যি পাখার তলায় বসেই চটজলদি রান্না করে ফেলা যায় এতে।
- রান্নায় তেল অনেক কম খরচ হয় বলে অনেকেই মাইক্রোওয়েভে রান্না পছন্দ করেন।
- মাইক্রোওয়েভে রান্নার ক্ষেত্রে কিছু কৌশল জানলে রান্না আরও বেশি সুস্বাদু হয়ে ওঠে।
আজকের লেখায় রইল সেরকমই ১০টি হ্যাক, যা জানা থাকলে বদলে যাবে মাইক্রোওয়েভে আপনার রান্নার ভোল!
১. সবজি পাতলা করে কাটুনঃ
সাধারণত পাতলা করে কাটা সবজি মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে চটজলদি রান্না হয়। তাই কোনও কিছু মাইক্রোওয়েভে রান্নার আগে মোটামুটি এক ইঞ্চির কাছাকাছি টুকরো করে কেটে নিন।
চিকেন বা টার্কি ইত্যাদি গোটা অবস্থায় মাইক্রোওয়েভে রোস্ট না করাই ভাল। মাংস টুকরো টুকরো করে রান্না করলে বেশি জলদি তা সেদ্ধ হয়ে যায়।
২. পাত্রের মাঝের খাবার কি ঠান্ডা থাকছে?
মাইক্রোওয়েভে খাবার সাধারণত পাত্রের বাইরের দিক থেকে রান্না হতে থাকে। ফলে দেখা যায়, পাত্রের ধারের খাবার দ্রুত গরম ও সুসিদ্ধ হয়ে গেলেও পাত্রের মধ্যবর্তী অংশের খাবার ঠান্ডাই থেকে যাচ্ছে। তাই মাইক্রোওয়েভে রান্নার সময় খাবার প্লেটের বাইরের দিকে রাখুন, মাঝখানটি ফাঁকা রাখুন, দেখবেন সমানভাবে রান্না হচ্ছে।
৩. পরে নুন দিনঃ
মাইক্রোয়েভে রান্নার সময় অনেকেই খাবারের উপর নুন ছড়িয়ে দিয়ে মাইক্রোওয়েভে ঢুকিয়ে দেন। এটি করলে খাবারের যে অংশে নুন থাকে, সেই অংশটির জল দ্রুত শুকিয়ে যায়, ফলে রান্না ড্রাই হয়ে যায়। তাই রান্নার সময় নুন হয় ভাল করে খাবারে একেবারে মিশিয়ে দিন, নয়তো রান্নার পরে নুন দিন।
৪ মাইক্রোওয়েভে দুর্গন্ধ মানে খাবারেও তা ছড়াবেঃ
ভিতরে খাবার পড়ে বা দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর পরিষ্কার না করলে মাইক্রোওয়েভ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে, যা আপনার রান্না খারাপ করে দিতে পারে। তাই মাইক্রোওয়েভ ভাল করে পরিষ্কার করার জন্যে এক-দু’কাপ জলে অর্ধেক পাতিলেবুর রস একটি পাত্রে দিন। তারপর পাত্রটি সুতির কাপড় চাপা দিয়ে পাঁচ মিনিট ‘হাই’ করে মাইক্রোওয়েভ চালান। এভাবে বেশ কয়েকবার করলেই আপনার মাইক্রোওয়েভের সব দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
৫. স্টিম করা সহজঃ
অনেকেই সবজি স্টিম করে খেতে ভালবাসেন। তাঁদের জন্য মাইক্রোওয়েভ কিন্তু দারুণ কাজের। ছোট-ছোট টুকরো করে পছন্দের সবজি কাটুন। তারপর পাত্রে ২-৩ চামচ জল দিয়ে পাত্রটি চাপা দিয়ে মাইক্রোওয়েভে বসিয়ে দিন। ‘হাই’ করে ৩-৪ মিনিট চালালেই রেডি হয়ে যাবে স্টিমড ভেজিস! এভাবে স্টিমড চিকেন বা স্টিমড ফিশও বানিয়ে নিতে পারেন।
৬. গোল পাত্র ব্যবহার করুনঃ
আমেরিকান কেমিস্ট্রি কাউন্সেলের মতে, কেবলমাত্র গোল বা ওভাল পাত্রই মাইক্রোয়েভে রান্নার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। চৌকো পাত্র ব্যবহার করলে পাত্রের ধারের অংশে থাকা খাদ্যবস্তু ভিতরের অংশে থাকা খাদ্যবস্তুর তুলনায় দ্রুত রান্না হয়। ফলে খাবার অসমানভাবে রান্না হয়।
৭. একসঙ্গে অনেক রান্না?
আজ্ঞে হ্যাঁ, গ্যাসে আলাদা-আলাদা করে সব রান্না করতে হতো। কিন্তু মাইক্রোওয়েভে সে বালাই নেই! এখানে আপনি একসঙ্গে একাধিক পাত্রে নানারকম রান্নার উপকরণ দিয়ে মাইক্রোওয়েভে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। শুধু সময় অনুযায়ী মাঝে-মাঝে বের করে মশলা মিশিয়ে নিলে বা নেড়ে-চেড়ে নিলেই হল! দেখবেন, এভাবে হয়তো মোটে একঘণ্টার মধ্যেই আপনি ডিনারের সমস্ত আইটেম রেডি করে ফেললেন!
৮. বাসি পাউরুটি গরম করছেন?
বাসি পাউরুটি অনেকসময় শুকনো হয়ে যায়। তাই বাসি পিৎজা ব্রেড বা অন্য কোনও পাউরুটি মাইক্রোওয়েভে গরম করার সময় পাউরুটির টুকরোর পাশাপাশি এক গ্লাস জলও ভিতরে বসিয়ে দিন। জলের থেকে স্টিম বেরিয়ে আপনার পাউরুটিকে নরম করে তুলবে, এবং এটি খেতেও টাটকা লাগবে।
৯. ঢাকা দিয়ে রান্না করুনঃ
ঢাকা দিয়ে রান্না না করলে খাবার মাইক্রোওয়েভের উত্তাপে ড্রাই হয়ে যেতে পারে। ফলে যখনই রান্না করবেন বা কোনও খাবার গরম করবেন, তখনই পাতলা সুতির কাপড় পাত্রের উপরে ঢাকা দিন। দেখবেন, খাবার রান্নাও তাড়াতাড়ি হচ্ছে, এবং খাবার ময়েস্ট থাকছে।
১০. তাপমাত্রার খুঁটিনাটিঃ
কোন তাপমাত্রায় মাইক্রোওয়েভে কী ভাল রান্না হবে, সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। অথচ ভাল রান্নার জন্য যথাযথ তাপমাত্রায় রান্না করা অত্যন্ত জরুরি। সুপ, কিমা এবং অন্যান্য ওয়াটার কনটেন্ট যুক্ত খাবার ‘হাই’-তে রান্না করুন। রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করার জন্য ‘মিডিয়াম হাই’, মাংসের বড় টুকরো, মাছ ইত্যাদির জন্য ‘মিডিয়াম’ ও ডিফ্রস্ট, মাখন নরম করার জন্য, পাউরুটি গরম করার জন্য ‘লো’ হিট ব্যবহার করুন।
এবার থেকে মাইক্রোওয়েভে রান্না করার সময় আমাদের দেওয়া এই ১০টি দুর্দান্ত হ্যাক মেনে চলুন। দেখবেন, আপনার রান্নার ভোলই পালটে যাবে।