জিরে মসলার জগতের একটি প্রধান উপাদান। জিরে ছাড়া মসলাদার রান্না চিন্তাই করা যায় না। রান্নার স্বাদ বাড়াতেও এর ভূমিকা অনেক। কিন্তু যদি এতো দরকারি এই উপাদানটি তরকারি রান্নার মধ্যে বেশি হয়ে যায় তাহলে আর ঐ রান্না মজা লাগে না উল্টো তেতো হয়ে যায় তরকারি। আজ তাই এমন কিছু উপায় বা টিপস বলব যা রান্নায় পড়ে যাওয়া অতিরিক্ত জিরের স্বাদ কমাতে পারে।
১. জলের অনুপাত বৃদ্ধি করেঃ
স্বাভাবিক যে পরিমান জলের দরকার হয় তার চেয়ে কিছু বেশি জল যুক্ত করে নাড়া দিয়ে ঢেকে দিন। ঝোলের ঘনত্ব কমে আসবে। তবে সেক্ষেত্রে জল গরম করে রান্নায় দেবেন। এতে জলসা ভাব থাকবে না। আর অতিরিক্ত জিরের গন্ধ চলে যাবে।
২. নারকেলের দুধঃ
আমরা অনেক খাবারেই নারকেলের দুধ ব্যবহার করি। এর অনেক গুণাগুণ আছে। তবে নারকেলের দুধের একটা সিক্রেট ব্যবহারও আপনাদের জানাচ্ছি। এটি রান্নায় ব্যবহৃত মসলার পরিমানকে ব্যালেন্স করতে পারে। এই ট্রিকটি কাজে লাগিয়ে খাবারের জিরে বা অতিরিক্ত হলুদ বা অন্য যেকোন মসলার তীব্রতা অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা যায়।
৩. টক দইঃ
টক দই সব রাঁধুনীদের নিত্য প্রয়োজনীয় উপাদান। যেকোন খাবার রান্নায় টক দইয়ের ব্যবহার করা যায়। তাই এখন টক দইয়ের মাধ্যমে কিভাবে আপনারা খাবারের দেওয়া অতিরিক্ত জিরের মাত্রাকে কমাতে পারেন তা বলছি। প্রথমে খাবারটি একটি সস প্যানে ঢেলে ফ্রিজে ২/৩ ঘন্টার জন্য রেখে দিন। এরপর ২:১ অনুপাতে টক দই যুক্ত করে অল্প আঁচে গ্যাসে বসিয়ে দিন। এতে আশা করি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবেন। স্পেশাল কোন খাবারে অতিরিক্ত জিরে মসলা পরে গেলে এটি অবশ্যই ব্যবহার করবেন। জল দিয়ে সব খাবারের পারফেক্ট স্বাদ সব সময় বজায় রাখা যায় না।
৪. চিকেন স্ট্রুঃ
রান্নায় জিরে বেশি হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে ভাবছেন? কিভাবে ঠিক করা যায় এই অতিরিক্ততা। তাহলে ফ্রিজের ডিপ খুলে দেখুন চিকেন স্ট্রু পাওয়া যায় কিনা। কারন অনেক সময় দেখা যায় আমরা চিকেন স্ট্রু করে রেখে দেই ফ্রিজে, পরে আর তা মনে থাকে না। এখানে কাজে লাগান এই চিকেন স্ট্রুকে।
কিন্তু যদি চিকেন স্ট্রু না থাকে ফ্রিজে তাহলে খুব সহজে তৈরি করে নিন। এর জন্য আগে সেই লবণ বেশি হয়ে যাওয়া তরকারিটি গ্যাসের থেকে নামিয়ে একটি পাশে রেখে দিন। এরপর গ্যাসে একটি প্যান বসান তাতে দুই টুকরা মুরগীর মাংস দিন। মুরগীর টুকরাগুলো হাড়সহ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে স্ট্রু বেশি ভালো হবে। মাংস ছেঁচে কিছুটা থেতলো করে দিতে হবে।
তারপর এতে ৪ কাপ জল ঢেলে দিয়ে গ্যাসের আঁচ হাই করে দিতে হবে। একটা বলক চলে আসলে বা জল ফুটতে শুরু করলে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে মিডিয়াম টু লো করে দিয়ে কিছু সময় নিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। জলের পরিমাণ ৪ কাপ থেকে ২ কাপ করে নিতে হবে। আপনি চাইলে আরো কম বা বেশি রাখতে পারেন। হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে।
ছেঁকে মাংসগুলো আলাদা করে নিতে হবে। এরপর সেই জিরে বেশি হয়ে যাওয়া তরকারিতে ঢেলে দিতে হবে। হাড়িটি আবার গ্যাসে বসিয়ে ভালো করে আরো কিছু সময় ফুটিয়ে নিতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে। আবার আপনি চাইলে সেদ্ধ করে নেওয়া সেই মুরগীর মাংসও তরকারিতে দিতে পারেন। আবার রেখে দিয়ে পরবর্তিতে অন্য কোন কাজেও ব্যবহার করতে পারবেন। কোন রান্নায় অতিরিক্ত ঝাল হয়ে গেলে তা কমাতে এই টিপসটি ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
৫. সবজি স্ট্রুঃ
অনেক সময় ঘরে একসাথে অনেক বেশি সবজি নিয়ে আসলে তা নষ্ট বা পঁচে যাওয়ার ভয়ে আমরা তা জল দিয়ে সেদ্ধ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে থাকি। কিন্তু সেদ্ধ করা জলটা ফেলে দিই। এই কাজটি আর কখনোই করবেন না। কারন এই জলে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি থাকে। আলাদা করে একটি পাত্রে ঢেলে ডিপে সংরক্ষণ করে রাখুন। রান্নায় জিরে বেশি হলে সেই অতিরিক্ততা কমাতে এই সবজি স্ট্রু দিয়ে দিন। জিরে মসলার পরিমাণ সঠিক মাপে চলে আসবে।
৬. আলুঃ
আলু এমন এক সবজি যা শুধু খেতেই মজা তা কিন্তু নয়। এটা আপনাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচতে সাহায্যও করতে পারে। যেমন ধরেন ভুলে রান্নায় জিরের পরিমাণ বেশি হয়ে গিয়েছে। সেই তরকারি খেতে কিন্তু ভালো লাগবে না। এই ক্ষেত্রে আপনি কিছু আলু টুকরো টুকরো করে কেটে সেই রান্নায় যোগ করে দিন। দেখবেন জিরে সঠিক মাপে চলে এসেছে। আলু জিরে শুষে নিয়েছে। এতে রান্নার স্বাদও বাড়বে আবার তরকারির পরিমানও বেড়ে যাবে।
৭. পেঁপে বাটাঃ
কয়েক টুকরো পেঁপে পাটায় বেটে নিয়ে সেই পেস্টটা তরকারিতে দিয়ে দিন। দেখবেন জিরের পরিমান কমে যাবে সেই সাথে সাথে তরকারির ঝোলও ঘন হবে।
বিশেষ টিপসঃ
- তরকারি রান্নায় জিরে দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট চামচ ব্যবহার করুন। দেখবেন মাপ আপনার হাতে চলে আসবে।