আচার এমন একটি জিনিস যার নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসার মতো পরিস্থিতি হয়। খাবারে স্বাদ বাড়াতে আচারের কোন জুড়ি নেই। বছরের প্রায় সব সময় নানা রকম খাবারের সাথে আচার খেতে মজাই লাগে। তবে অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘসময় আচার সংরক্ষণ করতে পারেন না। অনেকের আচারে আক্রমন ঘটে ছত্রাকের, আবার গন্ধ হয়ে যায় অনেকের আচার।
আচার নষ্ট হওয়ার কারন কি?
সাধারণত টকজাতীয় ফলে থাকা জল বা বাতাসের উপস্থিতির জন্য ইস্ট বা ছত্রাকের আক্রমন ঘটে। যার ফলে আচারের স্বাভাবিক স্বাদ ও ধর্ম নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষার ঋতুতে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে আচার দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায় না। অনেকেই জানতে চান দীর্ঘদিন আচারকে ছত্রাকমুক্ত রাখার উপায় কি। কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজেই সারাবছর আচার ভালো রাখা যায়। চলুন জেনে নেই কিছু পদ্ধতি আচার বেশী দিন সংরক্ষণ করার।
দীর্ঘদিন আচার ছত্রাকমুক্ত রাখার পদ্ধতি নিয়ে কিছু টিপসঃ
সবসময় কাঁচের পাত্র ব্যবহার করবেন আচার সংরক্ষণ করার জন্য। এতে আচার দেরীতে নষ্ট হয়। প্লাস্টিকের জারে আচার রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
আচার রাখর জন্য যে পাত্র ব্যবহার করবেন তা অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন, এবং তা জল ঝরিয়ে রোদে শুকিয়ে নেবেন।
বেশি পরিমাণে তেল ব্যবহার করতে হবে এতে করে আচার ভালো থাকে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে আচারের ওপরে তেলের একটা আস্তরণ থাকে। তেল আচারে বাতাস ঢুকার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। এতে করে অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকতে পারে না।
লবণ খুব ভালো প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। এটি আচারের গন্ধ ঠিক রাখে এবং সেই সাথে লবণ আচারের স্বাদও বাড়ায়। তবে যদি সঠিক পরিমাপে লবণ ব্যবহার না করা হয় তাহলে আচারে ব্যাকটেরিয়া সহজে বাসা বাঁধতে পারে এবং তা নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
লবণ ছাড়াও কিছু উপাদান খুব ভালো প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। যেমন হলুদ, মেথি পাউডার এবং হিং। এছাড়াও সোডিয়াম বেনজোয়েট অ্যাসিড ও সোডিয়াম বেনজোয়েট ব্যবহার করলে আচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে। আচার যদি লবণ, চিনি, ভিনেগার, মসলা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় তবে তা অনেক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
দীর্ঘদিন আচার ভালো রাখতে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। কারন ঠাণ্ডা স্থানে ফাঙ্গাস লাগতে পারে না।
দিনে অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও যদি আচারের বয়ামটি সূর্যের আলোয় রাখতে পারেন তাহলেও তা অনেক দিন ভালো থাকবে। কোন ফাঙ্গাস হবে না।
যদি আচারে তেল কম হয় বা তেল কমে যায় তাহলে তেল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে দিতে পারেন। এভাবে দিলে আচারে তেলের কোন গন্ধ হয় না।
আচারে কখনোই জল ব্যবহার করবেন না। কারণ জল ব্যবহার করলে আচার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
ভুল করেও কখনো আচার হাত দিয়ে নাড়বেন না, এর জন্য একটি চামচ ব্যবহার করুন। এবং বয়াম থেকে আচার নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোন জল না থাকে চামচে।
আচার দীর্ঘদিন ভালো রাখতে এতে কিছু পরিমাণ সিরকা ব্যবহার করতে পারেন।
চাটনি তৈরির পর তা নিশ্চিন্তে ডীপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাটনিতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে কোন সিরকা বা সোডিয়াম বেনজোয়েট না দিলেও চলবে। চাটনি এভাবে রাখলে নষ্ট হবে না।
আচার যদি একটু বেশি পুরানো হয়ে যায় তাহলে তাতে নতুন করে সরিষার তেল যোগ করে ভালো করে জ্বাল দিন। এরপর তা ঠাণ্ডা হলে পুনরায় বয়াম পরিষ্কার করে, আচার ভরে সংরক্ষন করুন।
আমের আচার বানানোর সময় যদি আমগুলো চুনের জল, ফিটকিরিতে ভিজিয়ে রাখেন তাহলে আচার বানানোর সময় আম ভেঙ্গে যাবে না।
চেষ্টা করবেন আচারের বয়ামকে সবসময় শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করতে, স্যাঁতসেঁতে কোন স্থানে আচার সংরক্ষণ করতে যাবেন না।
আচার সংরক্ষনের জন্য সবসময় তা ভারী কাঁচের বয়াম ব্যবহার করুন। আচার তোলার জন্য সবসময় একটি লম্বা হাতল ওয়ালা চিকন চামচ ব্যবহার করুন। এতে করে আচার তোলার সময় আপনার হাতের স্পর্শও আচারে লাগবে না। এবং ঐ চামচটি শুধু আচার তোলার জন্য আলাদা করে ব্যবহার করুন, তা দিয়ে অন্য কিছু করবেন না। আচারের চামচটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ধুয়ে, মুছে, শুকিয়ে নিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।
বিশেষ কথাঃ
আচারে জল থাকলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় তাই আচারে তেল দেয়ার পূর্বে তেলটাকে কড়াইতে জাল দিয়ে তারপর আচার সংরক্ষণ করুন। এবং বয়াম থেকে আচার তোলার পর অবশ্যই চামচ দিয়ে আচারটা সমান করে দেবেন, এরপর চেপে তেল ভাসিয়ে দেবেন।