ছানার কাঁচাগোল্লাই সাধারণত আমরা খেয়ে থাকি। কয়েকদিন আগে দোকান থেকে নিয়ে এসে খেতে খেতে ভাবলাম ছানা ছাড়া যদি এরকম কাঁচাগোল্লা বানানো যায় তাহলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। করে ফেললাম সুজি দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট। বিশ্বাস করুন এত ভালো খেতে হবে আমি ভাবতেও পারিনি। আমার রোজকার কাজে সাহায্য করে যে দিদি তাকে কিছু না বলে টেস্ট করতে দিয়েছিলাম। খেয়ে বললও কোন দোকানের এটা? এরকম দারুন খেতে মিষ্টি তো আগে খাইনি।
আমি নিজেই অবাক হয়েছিলাম এটি খেয়ে। বাকিদেরও যে এত ভালো লাগবে আশা করিনি। আর পরিবারের সবার যখন খেতে ভালো লেগেছে আমি ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেলি তাহলে এর রেসিপি। আপনারাও তো কাছের মানুষই। চলুন কথা আর বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক সুজির কাঁচাগোল্লা বানানোর পদ্ধতি।
উপকরণঃ
- সুজি হাফ বাটি
- দুধ হাফ লিটার
- চিনি হাফ বাটি
- কাস্টার্ড পাউডার বড় ৪ চা চামচ
- এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ
- কাজুবাদাম ২৫ গ্রাম
- কিসমিস ২৫ গ্রাম
- পেস্তাবাদাম ২৫ গ্রাম
- কেশর এক চিমটে
- ঘি ২ চা চামচ
- ড্রাই কোকোনাট হাফ বাটি
সুজির কাঁচাগোল্লা বানানোর পদ্ধতিঃ
সুজির কাঁচাগোল্লা বানানো খুবই সহজ আর কম সময়ও লাগে এটি বানাতে। প্রথমে একটি কড়াই হাল্কা গরম করে ঘি ২ চা চামচ দিয়ে দিন। ঘি গরম হয়ে গেলে হাফ বাটি সুজি তাতে দিয়ে লো থেকে মিডিয়াম আঁচের মধ্যে তা ভাজতে থাকুন ৩ মিনিট মত। সুজি ভাজা হয়ে গেলে তাতে হাফ বাটি চিনি দিয়ে তা আরও ৪ মিনিট কম আঁচে নাড়তে থাকুন।
চিনি সুজির সাথে ভালো করে মিশে গলে গেলে এতে দিয়ে দিন কাস্টার্ড পাউডার বড় ৪ চা চামচ। এটা দিয়ে ২ মিনিট মত নাড়াচাড়া করার পর হাফ লিটার দুধ হাল্কা গরম করা অবস্থায় একটু একটু করে মেশাতে থাকুন।
দুধ মেশানোর পর ২ মিনিট কম আঁচে পাকাতে থাকুন অনবরত। এরপর এতে এলাচ, কেশর, কাজুবাদ, কিসমিস, ও পেস্তাবাদাম মিশিয়ে দিন। সুজি সেদ্ধ হতে দিন ভালো করে। আর দুধ শুকিয়ে গিয়ে সুজির মণ্ড হওয়া অবধি এটি ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
দুধ শুকিয়ে সুজির মণ্ড ভালো করে তৈরি হয়ে এলেই রান্নার কাজ শেষ। এবার একটি পাত্রে হাল্কা ঘি মাখিয়ে তাতে গরম গরম সুজির মণ্ড ছড়িয়ে দিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন এটি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে হাতের তালুতে সামান্য ঘি মাখিয়ে নিয়ে সুজির মণ্ড থেকে অল্প পরিমান মিশ্রণটি নিয়ে কাঁচাগোল্লার মত আকার দিন। গোল সেপ দেওয়ার পর তা ড্রাই কোকোনাট দিয়ে কোট করুন। ব্যাস এই ভাবে পুরো মিশ্রণটি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন সুজির এই কাঁচাগোল্লা।
যেকোনো সময় বা যেকোনো অনুষ্ঠানে নিজের হাতে মিষ্টি বানানোর শখ হলে বানিয়ে ফেলতে পারেন আমার বানানো এই সুস্বাদু মিষ্টিটি। কথা দিচ্ছি আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে গোটা পরিবার। তাহলে দেরি না করে এই পুজোর একদিন বানিয়ে ফেলুন সুজির কাঁচাগোল্লা। আর মিষ্টিমুখ করুন বাড়ির সকলে মিলে একত্রিত হয়ে।
উপকরণে বলা পরিমান অনুযায়ী ১২ থেকে ১৪টি সুজির কাঁচাগোল্লা তৈরি হবে। যা ৬-৭জন মত খেতে পারবেন অনায়াসে।
বিশেষ কথাঃ
এই মিষ্টিটি বানানোর আয়োজন ও বানানোর সময় নিয়ে মোট ২৫ থেকে ৩০ মিনিট মত সময় লেগেছে।
এই মিষ্টিটি হওয়ার সাথে সাথেই খেতে পারেন। কিন্তু বেশি টেস্ট পাবেন এক থেকে দু ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে খেলে। ফ্রিজ না থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। বানানোর দুঘণ্টা পরে আরামসে এর স্বাদ নিতে পারেন। ফ্রিজে রেখে খেলে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মিষ্টি খাওয়ার ফিল নেওয়া যায় এই আর কি!
ঘি দিয়ে বানানো খাবার অনেকেই খেতে পারেন না নানা কারনে। তাদের জন্য এই মিষ্টিটি বানানোর সময় ঘি এর পরিবর্তে সাদা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।তেলের পরিমাপ ২ চামচ মত লাগবে সেক্ষেত্রে।
আমার মত যারা ফ্যাট কম খান অর্থাৎ ঘি তারা এটি বানানোর সময় একদম নাম মাত্র ঘি’এর ব্যবহার করতে পারেন। আমি তাই করেছি।
বিশেষ টিপসঃ
সুজির কাঁচাগোল্লা একেবারে অনেকটা বানিয়ে চার থেকে পাঁচদিন মত ফ্রিজে রেখে খাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভালো করে পরিষ্কার কৌটোর মধ্যে বা টিফিন বক্সের মধ্যে রাখবেন।
চিনি যারা খান না বা যাদের চিনি খাওয়া বারণ তাদের জন্য সুগার ফ্রি দিয়ে এটি বানানো যেতে পারে। সুগার ফ্রি চিনি পাওয়া যায় অনলাইনে। তা দিয়ে এটি বানাতে পারেন। আবার সুগার ফ্রি ট্যাবলেট হলে তা ২০ থেকে ২৫ পিস মত ভালো করে গুঁড়ো করে নিয়ে তা ব্যবহার করা যেতে পারে চিনির বদলে।