একসাথে অনেকগুলো আলু কিনে তা সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তা করছেন? ভাবছেন কিভাবে অনেক দিন ভালো রাখা যায়? আবার অনেকে মাসকাবারি বাজার করে অর্থ্যাৎ এক মাসের বাজার একে বারেই করে নেন তাদের তো আরো বেশি চিন্তার বিষয়। যারা আলু সংরক্ষণ নিয়ে ভাবছেন যে কিভাবে আলু গুলো ভালো রাখা যায়। আজকের আলোচনা তাদের জন্য। দেখে নিন কিভাবে অনেকদিন আলু সংরক্ষণ করবেন আবার স্বাদ ও পুষ্টি কোনটাই নষ্ট হবে না।
আলু সংরক্ষণের জন্য কি কি করতে হবেঃ
একসাথে অনেকটা পরিমান আলু এবার থেকে যখন খুশি কিনে ফেলতে পারেন। কারন তা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে উপায় আজ আমি শেয়ার করছি। চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি করতে হবে এর জন্য।
১. বাতাস চলাচলের সঠিক ব্যবস্থাঃ
আলু গুদামজাত বা সংরক্ষণের জন্য বাতাস চলাচলের ঠিকঠাক ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তাই যেন অক্সিজেনের অভাব না হয় সে জন্য গুদাম করার পর থেকেই আলুকে ঠিকমতো বাতাস চলাচলের মধ্য রাখতে হবে। আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ঘরটির যেন তাপমাত্রা স্বাভাবিক, অপেক্ষকৃত ঠাণ্ডা, এবং সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে।
২. পরিচ্ছন্ন পরিবেশঃ
যে ঘরে আলু সংরক্ষণ করা হবে সেই ঘরটি অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। যাতে পোকা মাকড় না হতে পারে। ঘর স্যাতস্যাতে হলে আলু দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এইদিকটাও খেয়াল রাখবেন।
৩. ভাগ করাঃ
ধরন অনুযায়ী আলু আলাদা করতে হবে। নষ্ট, কাটা, রোগগ্রস্ত ও ভিজে আলু আলাদা করে বাতিল করতে হবে। দরকার হলে সাইজ বা আকার অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিন। এতে বাছাই করতে সুবিধা হবে ব্যবহার করার সময়।
৪. আলো থেকে দূরে রাখাঃ
সূর্যের আলো আলুর জন্য ভালো না। কেননা আলুতে সূর্যের আলো পড়লে তার রং নষ্ট হয়ে যায়। আলু এতে সবুজ রঙের হয়ে যায় ও চামড়ায় বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়।
৫. ঠান্ডা জায়গাঃ
আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত গুদামঘর কিছুটা ঠান্ডা হলে ভাল হয়। তবে তাই বলে একদম বদ্ধ কোন ঘরের ব্যবহার করবেন না।
৬. কীটনাশক নয়ঃ
কীটনাশক শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আলু যেহেতু খাবার হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তাই সংরক্ষিত আলু সংরক্ষণের সময় কোনও কীটনাশকের ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এতে আলু দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। তবে মাচায় শুকনো নিমপাতা বিছিয়ে দিতে পারেন। এতে পোকার উপদ্রব কমে।
৭. আর্দ্রতা বজায়ঃ
যে কোন সবজি আর্দ্র পরিবেশে ভালো থাকে। আর্দ্র আবহাওয়া পেলে হিমায়িতকরণ ব্যতীতই সবজি অনেকদিন সতেজ থাকে। আলু কে সজিব রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সঠিক আর্দ্রতা। তাই আলু সংরক্ষণের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে উচ্চ আর্দ্রতা বজায় থাকে।
৮. নিম পাতার ব্যবহারঃ
নিম পাতাকে বলা হয় প্রাকৃতিক জীবাণূনাশক। যে মাচা বা পাত্রে আলু সংরক্ষণ করা হবে তার উপর নিম পাতা বা বিষকাটালী বা ল্যান্টানা শুকিয়ে নিয়ে সেই শুকনো পাতা বিছিয়ে দিতে পারেন।এতে করে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারবে না ফলে পোকার উপদ্রব থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। এবং আলু অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
৯. আলু পর্যবেক্ষণঃ
আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করার জন্য জরুরি হলো আলুকে কিছু দিন পরপর পরীক্ষা করা। প্রতি সপ্তাহে একবার বা ১০ থেকে ১২ দিন পরপর আলুগুলো একবার গাদা থেকে বের করে দেখা যে ভালো আছে কি না। যদি পঁচা বা ভেজা বা কোন রকম পোকায় ধরা খারাপ আলু পাওয়া যায়, তবে তা দেখা মাত্র ভালো আলু থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে, যাতে ভালো আলু আক্রান্ত না হয়। আর নয়তো ভালো আলু এই সব খারাপ আলুর সাথে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে।
১০. খোলামেলা পরিবেশে আলু সংরক্ষণঃ
আলু সংরক্ষণের জন্য সব সময় খোলামেলা পরিবেশ নির্বাচন করতে হয়। অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণ আলু একসাথে গাদাগাদি করে রাখা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এতে করে আলুর মধ্যে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এবং সেই সাথে সংরক্ষিত আলুতে কালো কালো দাগ পড়ার রোগ দেখা দিতে পারে। তাই আলু সব সময় ছড়িয়ে রেখে সংরক্ষণ করবেন।
বিশেষ সতর্কতাঃ
এমন কিছু বিষয় আছে যা আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জরুরীভিত্তিতে পালন করতে হয়। এরমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হলো যে গুদাম ঘরে বা স্টোরেজে আলু মজুদ করা হবে সে যেনো আলুতে সরাসরি সূর্যের রশ্মি পড়তে না পারে। আলো পরলে আলুতে রোগের সৃষ্টি হয় এতে আলু সবুজ রংয়ের হয়ে যায় এবং আলুর ত্বকে বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হয়। মজুদকৃত আলু কখন খালি হাতে স্পর্শ করবেন না, হাতে গ্লাস পরে আলু পর্যবেক্ষণ করুন।