অবশেষে গড়াতে শুরু করেছে ট্রেনের চাকা। বাঙালিও দ্বিগুণ উৎসাহে আবার বেরিয়ে পড়েছে ঘুরতে। কিন্তু ট্রেন চলতে শুরু করলেও একরাতের বা দিন দুয়েকের ট্রেন জার্নিতে ট্রেনের খাবার অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। ফলে ট্রেনে কী খাবেন, বা ঘুরতে গিয়ে কী এমন খাবার সঙ্গে রাখবেন, যা মুখরোচক, অথচ দীর্ঘক্ষণ টাটকা থাকবে, তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না।
এদিকে বেড়াতে যাবার সময় গোছগাছের তাড়া থাকে। ফলে খাবার যাতে চটজলদি তৈরি হয়, সেদিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। আজকে তাঁদের জন্যেই মুশকিল আসান নিয়ে হাজির হয়েছি আমি। দেখে নিন দীর্ঘ জার্নিতে কী কী খাবার আপনি আপনার সঙ্গে রাখতে পারেন।
১. মেথি থেপলাঃ
আজ্ঞে হ্যাঁ, ট্রেনে অবাঙালিরা কিন্তু এইধরনের শুকনো খাবার নিয়ে উঠতেই পছন্দ করেন। থেপলা খেতে ভাল, দীর্ঘক্ষণ টাটকা থাকে। ফলে এটি আপনারা ট্রেনে খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন। থেপলা খুব পুষ্টিকরও বটে। যদি যথাযথভাবে বানাতে পারেন, তাহলে শুকনো এই খাবারটি কিন্তু চার-পাঁচদিন পর্যন্তও টাটকা থাকে।
২. পুরি-আঁচারঃ
লুচি নয়, এ হল বিশুদ্ধ অবাঙালি পুরি। লুচির তুলনায় পুরি একটু মোটা হয়। ট্রেনে বা কোনও লং জার্নিতে নিয়ে যেতে হলে সঙ্গে ঝাল-ঝাল লঙ্কার আঁচার বা আমের আঁচার রাখুন। দেখবেন লাঞ্চ বা ডিনার, যাই হোক না কেন, জাস্ট জমে গিয়েছে! পুরি কিন্তু দিন দুয়েক অনায়াসে টাটকাও থাকে।
৩. পুরভর্তি পরোটাঃ
যদি তরকারি বানানোর ঝামেলা না করতে চান, তাহলে পুর বানিয়ে পরোটা তৈরি করে নিন। দেখবেন, শুধু-শুধুই খেতে ভাল লাগছে। পনির, আলু, মুগ ডাল, ছাতু ইত্যাদি যে-কোনও কিছু দিয়ে পুর বানিয়ে নিতে পারেন। এই পরোটা সেঁকে নিয়ে প্যাক করলে দেখবেন দু’দিন পর্যন্তও ঠিক থাকছে।
৪. পিনাট বাটার চকোলেট গ্র্যানোলা বারঃ
নাম শুনে যেরকম খটোমটো মনে হচ্ছে, ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। আজকাল চটজলদি স্ন্যাক্সে গ্র্যানোলা বার ভীষণভাবে ইন। পুষ্টিতে ভরপুর এই গ্র্যানোলা বার খেতেও মুখরোচক হয়, এবং বাচ্চারাও ভালবাসে। গ্র্যানোলা বার বানাতে খুব কম সময় লাগে। শুধু পিনাট বাটার চকোলেটই না, রেসিপি দেখে ও আপনার পছন্দের উপকরণ মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে ইচ্ছেমতো ফ্লেভারের গ্র্যানোলা বার বানিয়ে ফেলুন। দীর্ঘসময়ের জার্নিতে টাটকা থাকবে তো বটেই, সেইসঙ্গে আপনার পেটকেও দীর্ঘক্ষণ ভর্তি রাখবে।
৫. খাকরাঃ
খাকরা গুজরাতি স্ন্যাক্স। অনেকটা পাঁপড়ের মতো মচমচে ফ্লেভার যুক্ত। এই স্ন্যাক্স যদি সঙ্গে নেন, তাহলে বেশি জায়গাও লাগবে না। এছাড়া দীর্ঘদিন এটি টাটকা থাকে। অনেকে শুধু-শুধুই খাকরা খান, তবে আপনার ইচ্ছে হলে আঁচার বা চাটনিও সঙ্গে রাখতে পারে।
৬. শুকনো তরকারিঃ
অনেকেই এক রাত্রের জন্য ট্রেন জার্নিতে সঙ্গে পরোটা বানিয়ে নেন। কিন্তু তরকারি কী বানাবেন, বা কোন তরকারি বানালে তা চট করে নষ্ট হবে না, তা বুঝতে পারেন না। এক রাত্রের জার্নির জন্য শুকনো যে-কোনও তরকারিই বানাতে পারেন। তবে শুকনো ঝাল আলুর তরকারি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। শুকনো করে আলুর তরকারি বানালে দুই দিন মত খাওয়া যায়। তাছাড়া পরোটাই বলুন কি পুরি, সবকিছুর সঙ্গেই এটা জমে যায়।
৭. চিঁড়েঃ
দীর্ঘক্ষণ টাটকা থাকে, এমন শুকনো খাবারের লিস্টে অনায়াসে যোগ করতে পারেন চিঁড়ের নাম। এমনি চিঁড়ে প্যাক করে নিয়ে সেটা যেমন জল, চিনি দিয়ে গুলে খেয়ে নেওয়া যেতে পারে, তেমনই সঙ্গে রাখতে পারেন মশলা চিঁড়েও। বিকেলবেলার জলখাবারটা না হয় এই মশলা চিঁড়ে দিয়েই সেরে ফেললেন!
৮. বিস্কুট ও কুকিজঃ

বড়রা তো বটেই, নানারকম বিস্কুট ও কুকিজ কিন্তু বাচ্চারাও খেতে ভালবাসে। অনেকসময়েই বেড়াতে বেরিয়ে বাচ্চারা বাড়ির একঘেয়ে খাবার খেতে চায় না। তাদের ভোলাবার জন্যে সঙ্গে নানারকম ক্রিম বিস্কুট রাখুন। গোছগাছ করে সময় পেলে বাড়িতেই বানিয়ে নিন তাদের পছন্দের কুকিজ। এটি দীর্ঘদিন টাটকাও থাকবে এবং প্রয়োজনে পেট ও মন, দুইই ভর্তি রাখবে।
৯. মুড়ি মিক্সঃ
বাড়িতে সন্ধেবেলা বা সকালের জলখাবারে অনেকেই মুড়ি খেতে পছন্দ করেন। মুড়ি খেতে যদি ভালবাসেন, তাহলে অনায়াসে লং জার্নিতে সঙ্গে মুড়ি রাখতে পারেন। সঙ্গে পছন্দের চানাচুর, বাদাম আর নুন রাখুন। যখন মনে হবে, মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে মেখে খেয়ে নিন। মুড়ি হালকা, ফলে ক্যারি করাও সহজ। এছাড়া পুষ্টিকরও বটে। তাই বেড়াতে গেলে একে সঙ্গে অবশ্যই রাখুন।
সামনেই আসছে বেড়াতে যাওয়ার মরশুম। তাই এবার বেড়াতে গেলে বাইরের খাবারের বদলে কী খাবেন, তা নিয়ে কিন্তু আর চিন্তা করবেন না। চট করে বানিয়ে নিন আপনার পছন্দের খাবার আর প্যাক করে বেরিয়ে পড়ুন।