রান্না করাকে কিছু কর্মজীবী মহিলারা ধ্যান করার সময় হিসাবে দেখেন যখন অনেকেই আবার এটিকে বিরক্তিকর কাজ হিসাবে দেখেন। যা সর্বদা পছন্দসই ফলাফল দেয় না। তাই আপনি যদি আপনার প্রিয়জনদের জন্য কিছু সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করতে চান এবং একই সাথে রান্নাঘরে বেশি সময় ব্যয় করতে না চান, তবে এখানে কিছু সহজ রান্নার টিপস রয়েছে যা আপনার জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে। কিছু রান্নার হ্যাক রয়েছে যা মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে আপনার জীবনকে কিছুটা সহজ করে তুলবে। যারা প্রায় সবসময় ব্যস্ত থাকেন কাজে তাদের জন্য সেরা ১০টি রান্নার টিপস এবং কৌশল।
ক. কর্মজীবী মহিলাদের জন্য সেরা ১০টি রান্নার টিপসঃ
- পরিকল্পনা করুন এবং আগাম প্রস্তুতি নিন
- অতিরিক্ত ব্যাটার তৈরি করুন
- মশলা, পাউরুটি ও ডিমের স্টক রাখুন
- তাৎক্ষনিক খাবারের স্টক আপ করুন
- ফল, শুকনো ফল এবং বাদাম মজুদ রাখুন
- ইন্ডাকশন ব্যবহার করা
- সময় সাশ্রয়ী রান্নার সরঞ্জাম ব্যবহার করুন
- রান্নার পেস্ট অতিরিক্ত বানিয়ে রাখুন
- অতিরিক্ত সবজি সবসময় কাটা রাখুন
- রান্নার হ্যাক অনুসরণ করুন
১. পরিকল্পনা করুন এবং আগাম প্রস্তুতি নিনঃ
এক সপ্তাহ আগে থেকে আপনার খাবারের পরিকল্পনা করুন। আগে থেকে খাবারের পরিকল্পনা করা একটু বেশি মনে হতে পারে। যারা সপ্তাহান্তে খাবার রান্না করার কথা ভাবেন তাদের জন্য এটা দরকার। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলি টেক-আউটের দিন, তাই না? সপ্তাহে যখন আপনার রান্না করার সময় কম থাকে তখন একটু পরিকল্পনা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনি সপ্তাহে কী রান্না করতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। জিনিসপত্র রেডি রাখা।
২. অতিরিক্ত ব্যাটার তৈরি করুনঃ
অতিরিক্ত ব্যাটার পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য ফ্রিজে রাখলে অনেক সময় বাঁচে। আপনি যদি দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের অনুরাগী হন তবে আপনি আগে থেকে ইডলি বা উত্তাপমের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটার তৈরি করতে পারেন। যা দ্রুত ব্রেকফাস্টের বিকল্প বা সন্ধ্যার নাস্তার বিকল্পের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
৩. মশলা, পাউরুটি ও ডিমের স্টক রাখুনঃ
যাবতীয় মশলার স্টক রাখুন সবসময়। এতে করে প্রতিবার রান্না করার সময় গুরুত্বপূর্ণ মশলার জন্য মুদি দোকানে দৌড়াতে হবে না। পাউরুটি এবং ডিমের মতো জিনিস সবসময় আপনার ফ্রিজে থাকা উচিত। যদি আপনি একজন ব্যস্ত ব্যক্তি হন তাহলে এই পাউরুটি এবং ডিম দিয়ে সহজে নানা রকমের চটজলদি খাবার বানিয়ে নিতে পারবেন।
৪. তাৎক্ষনিক খাবারের স্টক আপ করুনঃ
নুডুলস, মসলা ওটস, সেভাই এবং পোহার মতো তাৎক্ষনিক খাবারগুলি স্টক করে রাখুন। যখন হাতে রান্নার সময় একদম নেই, এই খাবারগুলো আপনার সেরা হাতিয়ার হতে পারে। অন্যান্য মুখরোচক তাৎক্ষনিক খাবারের মধ্যে রয়েছে চিকেন এবং আলুর নাগেটস যা কেবল ডিপ ফ্রাই করলেই হয়ে যায়। বেশি আয়োজনের বা সময়ের দরকার পড়ে না। তবে তাৎক্ষনিক খাবারের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠবেন না কারণ খুব ঘন ঘন খাওয়া হলে সেগুলি অস্বাস্থ্যকর।
৫. ফল, শুকনো ফল এবং বাদাম মজুদ রাখুনঃ
এমন কিছু দিন আছে যখন হাতে একদম সময় থাকে না। ফল সেই সময়ের জন্য উপযুক্ত। সামান্য দুধ এবং দই সহ ব্লেন্ডারে কয়েকটি খোসা ছাড়ানো কলা এবং পছন্দসই ফল দিয়ে স্মুদি বানিয়ে নিন। সম্পূর্ণ সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর এই স্মুদি সময় বাঁচাবে আর পেটও ভরাবে। পানীয়টির পুষ্টিগুণ বাড়াতে এক মুঠো বাদাম, কাজু বা আখরোট স্মুদির উপরে ছড়িয়ে দিন। এছাড়াও আপনি যখন চব্বিশ ঘন্টা কাজ করছেন তখন বাদাম এবং শুকনো ফল চমৎকার স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হতে পারে। এই খাবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে এবং অস্বাস্থ্যকর নোনতা খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
৬. ইন্ডাকশন ব্যবহার করাঃ
গ্যাসের চুলার চেয়ে ইন্ডাকশন ব্যবহার করা অনেক সহজ। প্রথম কারণ গ্যাসের গরমে রান্না করা কষ্টকর ও বিরক্ত। তারচেয়ে ইন্ডাকশনে রান্না করা অনেক আরামদায়ক। দ্বিতীয় রান্নার পর গ্যাসের চেয়ে ইন্ডাকশন পরিষ্কার করা অনেক সহজ। এটি বিশেষ করে যখন আপনার পরিচারিকা কাজে ছুটি নিয়েছে সেইসব দিনের জন্য দারুন ভালো। অনেক সময় বাঁচে। ইন্ডাকশনে নন-স্টিক পৃষ্ঠ থাকায় যা পরিষ্কার করা সহজ এবং এটি আরও কার্যকর কারণ এটি গ্যাসের চেয়ে দ্রুত খাবার রান্না করে।
৭. সময় সাশ্রয়ী রান্নার সরঞ্জাম ব্যবহার করুনঃ
সবজি কাটার জন্য ছুরি ব্যবহার করার পরিবর্তে, পেঁয়াজ এবং টমেটোর মতো সবজি কাটার জন্য একটি চপার, গ্রেটার বা স্লাইসার ব্যবহার করুন। যেহেতু সময় বাঁচানোই এখানে মূল বিষয়, তাই কিছু ভালো ও উদ্ভাবনী রান্না এবং কাটার সরঞ্জামগুলিতে বিনিয়োগ করা আপনার পক্ষে ক্ষতিকর হবে না।
৮. রান্নার পেস্ট অতিরিক্ত বানিয়ে রাখুনঃ
যেহেতু প্রচুর ভারতীয় তরকারি এবং প্রস্তুতির জন্য রান্নার জন্য আদা রসুন বা টমেটো পেস্টের প্রয়োজন হয়, তাই এটিকে প্রচুর পরিমাণে বানিয়ে রাখুন। ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ফ্রিজে রাখা একটি দুর্দান্ত সময় সাশ্রয়কারী হ্যাক। আদা-রসুন পেস্ট বেটে ফ্রিজে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। এছারা টমেটো পিউরি বানিয়ে রেখে দিন ফ্রিজে। যা অনেক নিরামিষ এবং আমিষ কারিতেও ব্যবহৃত হয়।
লঙ্কা, পোস্ত দানার পেস্ট, তেঁতুলের পেস্ট, বাদাম বা কাজুর পেস্ট, মেরিনেশন পেস্ট তৈরি করুন এবং এগুলো কেনা একটি আইস কিউব ট্রেতে রাখুন। পরে সহজেই ব্যবহার করার জন্য এটি ফ্রিজারে রাখুন।
৯. অতিরিক্ত সবজি সবসময় কাটা রাখুনঃ
ফ্রাইড রাইস, নুডুলস এবং অন্যান্য রেসিপি ছাড়াও কিছু অতিরিক্ত সবজি সবসময় কাটা রাখুন। মটরশুঁটি, গাজর, ক্যাপসিকামের মতো সবজি কেটে এক সপ্তাহ ফ্রিজে রাখতে পারেন। সময়ে সময়ে ব্যবহার করতে হবে। আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে আর অনেক সময় বাঁচবে।
১০. রান্নার হ্যাক অনুসরণ করুনঃ
প্রচুর রান্নার ওয়েবসাইট, ব্লগ এবং ইউটিউব চ্যানেল নানা রকমের হ্যাক নিয়ে আসে। যা অনেক সময় বাঁচায়। এই চ্যানেলগুলি, ব্লগ এবং ওয়েবসাইটগুলি অনুসরণ করুন। চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট currynaari’র সাথে থাকুন। এখানে নানা রান্নার টিপস ও সহজ রেসিপি নিয়ে লেখা থাকে।
বিশেষ টিপসঃ
- রাজমা, ছোলা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে ভুলে গেছেন? চিন্তা করবেন না। এক ঘণ্টা আগে ফুটন্ত জলে ভিজিয়ে রাখুন বা কুকারে জল দিয়ে একটু সরিষার তেল মিশিয়ে দ্রুত রান্না করুন।
- ভাজার বদলে কিছু জিনিস মাইক্রোওয়েভ করুন। এতে তেলও লাগে না অতটা আর সময় বাঁচে অনেক।
- যে কোনো খাবারে যোগ করার জন্য এক বাটি ভাজা পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখুন। এতে করে আপনাকে প্রতিবার পেঁয়াজ কাটা এবং ভাজার প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে না।