ছুরি ভোঁতা হয়ে গেলে সেটা দিয়ে আরামে কাজ করা যায় না। যদি কাটাকাটির কাজে ভোঁতা ছুরি ব্যবহার করেন, তাহলে যা কাটছেন তার শেইপ সুন্দর হবে না। ফল বা সবজি কাটতেও অনেক সময় লাগবে। ভোঁতা ছুরি ব্যবহারে কাজেও অনেক দেরি হয়ে যায়।
এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতে দরকার ধারালো ছুরি। কিন্তু প্রতিবার ধারালো ছুরি কেনা সম্ভব না। আবার নতুন কেনা ছুরি সবসময় ধারালো রাখাও সম্ভব না। তাহলে উপায়? জেনে নিন বাড়িতেই ছুরি ধার করার সহজ উপায়। এতে নিত্য ব্যবহার্য ছুরি-বটি থাকবে নতুনের মতো অনেকদিন।
১. পাথরঃ
শক্ত পাথর দিয়ে ১ মিনিটের মধ্যে ঘরের ছুরি-বটি ধার করতে পারবেন। তবে সাবধান, ছুরি ধার করতে গিয়ে আবার হাত না কেটে যায় সেটা খেয়াল রাখবেন। আপনার ঘরে যদি গ্রানাইট পাথর থাকে, তাহলে তাতে ছুরির ধারালো দিকটা ২০ সেকেন্ড ধরে ঘষুন। ঘষতে ঘষতে যদি দেখেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে পাথর থেকে তাহলেই বুঝবেন ছুরি ধার করা হয়ে গেছে। গ্রানাইটের পৃষ্ঠ মসৃণ থাকে, তাই তাতে ছুরি ধার করা যায় সহজে৷ এই পাথর পাবেন নদীর নীচে বা এর আশেপাশে। যদি মসৃণ পাথর না পান, তাহলে দুইটি পাথর একসাথে ঘষে মসৃণ পৃষ্ঠ বানিয়ে নিতে পারেন।
২. লোহার রডঃ
লোহার রড দিয়ে ছুরি ধার করতে পারবেন। তবে ছুরি ধার করার রড দেখতে আলাদা। বিল্ডিংয়ে যে ধরণের রড ব্যবহৃত হয় সেটা ছুরি ধার করার উপযুক্ত না। বাজারে কিনতে পাবেন এই নাইফ শার্পেনিং আয়রন রড। এর আরেক নাম হোনিং রড। অনেক রেস্টুরেন্টে এই রড দিয়েই ছুরি ধার করা হয়। হোনিং রডে আপনার ছুরি বা বটি ২০° অ্যাঙ্গেলে উপর-নিচ মোশনে ঘষতে থাকুন। এক পাশ ঘষা হয়ে গেলে ছুরি উল্টে আরেক পাশ ঘষবেন। কয়েকবার ঘষলে ছুরি ধার হয়ে যাবে। হোনিং রডের পরিবর্তে বারবিকিউ রডও ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেই রডই ব্যবহার করুন না কেন, সেটি যেন জং ধরা না হয়। হোনিং বা বারবিকিউ রডের পরিবর্তে অন্য যেকোন ভালো রড ব্যবহার করতে পারেন।
3. ছুরিঃ
হোনিং রডের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে ছুরি। ছুরি দিয়েই ছুরি ধার করতে পারবেন। একটি ছুরির মসৃণ অংশে ভোঁতা ছুরিটি ঘষুন, কাজ হয়ে যাবে। উভয় ছুরির ধারালো অংশ একে অন্যের সাথে ঘষলে ভেঙে যেতে পারে। তবে যে ছুরির সাথে ভোঁতা ছুরিটি ঘষবেন সেটি যেন তুলনামূলকভাবে মোটা এবং মজবুত হয়।
৪. স্টিলঃ
আপনার ঘরে যদি এক টুকরা স্টিল থাকে, তাহলে সেটা দিয়ে অনায়াসে আপনার ভোঁতা ছুরিটি ধার করতে পারবেন। তবে তার আগে কিছু কাজ করতে হবে। স্টিলের টুকরাটি প্রথমে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন৷ তারপর সেটা মুছে কড়া রোদে আধা ঘন্টা রেখে দিন। চাইলে চুলায় রেখেও কিছুক্ষণ গরম করতে পারেন। স্টিল যখন গরম হয়ে আসবে তখন এতে ভোঁতা জিনিসটি ঘষে ধার করুন। ধার করার সময় গরম স্টিল ও ছুরি থেকে হাত সাবধানে রাখবেন।
৫. কফি মগঃ
বাড়িতে নিশ্চয়ই সিরামিকের কফি মগ আছে? তাহলে ওটা দিয়েই ছুরি ধার করা যাক, কি বলেন? শুধু মগটা উল্টে রাখুন টেবিলের উপর। মগের নিচের দিকে রুক্ষ দিকটা মূলত কাপ যাতে পিছলে পড়ে না যায় সেটা নিশ্চিত করে। আর এই অংশ দিয়েই ছুরি ধার করতে হবে৷ ২০° অ্যাঙ্গেলে প্রথমে ছুরির এক পাশ কয়েকবার ঘষবেন। তারপরে আরেক পাশ একইভাবে আবার ঘষবেন। একসময় দেখবেন মগের নিচের অংশের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে সিরামিক বাড়তি স্টিল ঝেড়ে ফেলে ছুরি ধারালো করছে।
৬. লাল ইটঃ
ভোঁতা ছুরি-বটি ধারালো করার সবচেয়ে সহজ উপায়গুলোর মধ্যে লাল ইট একটি। ইটের উপর ছুরিটি কয়েকবার ঘষুন যতক্ষণ না পর্যন্ত ধারালো হচ্ছে।
৭. পাটাঃ
মশলা পেষার পাটাতেও ছুরি ধার করতে পারবেন। পাটার পিছনের দিকটায় ছুরি বা বটিটা ঘষুন। কয়েক স্ট্রোকেই কাজ হয়ে যাবে নিশ্চিত। মশলা পেষার অংশে ছুরি ঘষলে ছুরি ধার হবে না। উল্টো সেই অংশের পৃষ্ট নষ্ট হয়ে যাবে। পরবর্তীতে মশলা পেষা কঠিন হয়ে যাবে।
৮. কংক্রিটঃ
কংক্রিটের টুকরা দিয়ে খুব সহজে ভোঁতা ছুরি ধার করা সম্ভব। এটি যেকোন জায়গায় পাবেন, তবে সমস্যা হচ্ছে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে কংক্রিট ছুরির বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। খুব বেশি মসৃণ এমন একটি কংক্রিটের টুকরা খুঁজে বের করুন। এরপরে এতে ভোঁতা ছুরিটা ঘষতে থাকুন।
৯. শিরিষ কাগজঃ
শিরিষ কাগজ দিয়েও কিন্তু ছুরি ধার করা সম্ভব, জানেন কি সেটা? ছুরি অল্প একটু ধার করতে চাইলে খুব বেশি জোরে ঘষার দরকার নেই। মোটামুটি জোরের সাথে দুই-তিনবার ঘষলে যথেষ্ট। তবে যদি ছুরিটি অনেক বেশি ভোঁতা থাকে তাহলে অনেকক্ষণ ধরে ঘষতে হবে। প্রথমে জোরে জোরে বেশ কয়েকবার ঘষে আস্তে আস্তে জোর কমিয়ে আনুন। এতে ছুরি ভালো ধার হবে।
১০. নেইল ফাইলঃ
যে ফাইল দিয়ে নখ ঘষে শেইপ করেন সেই ফাইল দিয়ে ছুরি ধারও করতে পারবেন। নেইল ফাইল বা এমেরি বোর্ডে ছুরি ধার করার প্রক্রিয়া শিরিষ কাগজের মতোই। ফাইলের সাথে ছুরির ধারালো অংশটি ঘষতে থাকুন।
১১. গাড়ির জানালাঃ
নরম স্টিলের ছুরির জন্য গাড়ির জানালা হোনিং রডের মতো কাজ করবে। এর রুক্ষ এবং প্রায় গোলাকার কিনারাতে ছুরি ধার করা যাবে। গাড়ির জানালা অর্ধেক নামিয়ে ভোঁতা ছুরিটা ৮-১০ বার স্লাইড করে ঘষুন। এক পাশ ঘষা হলে ছুরিটা উল্টে আরেক পাশ ৮-১০ বার করে ঘষুন। ছুরি আগের চাইতে বেশি ধারালো হবে।
১২. কাগজ ও কালিঃ
কাগজ এবং কালি দিয়েও কিন্তু ছুরি-বটি ধার করা যায়। খবরের কাগজে প্রয়োজনমতো কালো কালি দিয়ে নিন। এবার এই কাগজের উপর ছুরিটি আস্তে আস্তে ঘষতে থাকুন। কার্বনের উপস্থিতির কারণে কালি আপনার ছুরিতে ভালো পলিশিং ইফেক্ট আনবে আর ধারালো করতে সাহায্য করবে। ঘষা হয়ে গেলে ছুরিটা ধুয়ে ফেলুন।
উপরের যেকোন পদ্ধতিতে ছুরি ধার করার পর সেটা প্রথমে ১৫ মিনিট উষ্ণ সাবান জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ১ কাপ জল ও আধা কাপ ভিনেগারের মিশ্রণে ছুরিটি আবারও ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে ছুরির ধার অনেকদিন অটুট থাকবে।