ওল ও কচুর তরকারি অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মন ভরে খেতে পারেন না গলা চুলকানোর ভয়ে। অনেক সময় গলা ফুলে গিয়ে খাবার খেতে কষ্ট হয়, এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।
ওল বা কচু রান্না করার সময়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে গলা ধরবে না। আর কিভাবে রান্না করলে গলা চুলকাবে না জেনে নিন।
ওল বা কচু খেলে গলা ধরে বা চুলকায় কেন?
ওল ও কচু খেলে গলা ধরে বা চুলকায় এটা আমরা জানি। কিন্তু কেন চুলকায় সেটা কি আমরা জানি? ওল ও কচুর কান্ডে, মূলে, এবং পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক একটি যৌগ থাকে৷ এই যৌগ র্যাফাইড নামে বেশি পরিচিত।
র্যাফাইডের গড়ন সূঁচালো, তারকা আকৃতির, বা গোলাকার হয়। এসব আকৃতির র্যাফাইড গলায় আটকে চুলকায় বা ব্যথা করে। উচ্চ তাপে রান্না করলে র্যাফাইড বেশির ভাগ সময়ে গলে যায়। কিন্তু কিছু র্যাফাইড হাই হিটেও গলে না এবং গলায় অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এমনকি তা কিডনিতে জমে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তবে কিছু কচুতে র্যাফাইড থাকে না, সেগুলো নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়।
ওল ও কচুর গায়ে লেগে থাকা র্যাফাইডের হাত থেকে বাঁচতে টক খাবার খেতে হবে। র্যাফাইড বা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্ষারীয়, এটি টক খাবারের অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড ও তেঁতুলের টারটারিক অ্যাসিড অক্সালেটের প্রশমনের জন্য উপযোগী। তাই কচুর সাথে তেঁতুল বা লেবু খেলে গলা চুলকায় না এবং কিডনিও সুস্থ থাকে।
ওল ও কচু কিভাবে রান্না করলে গলা ধরবে না জানুনঃ
১. ভেজা কচু শুকিয়ে নিনঃ
রান্না করার আগে তো ওল বা কচু হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই হবে। আর তাতেই হবে বিপত্তি। এগুলো তাজা রাখতে দোকানিরা এর উপরে জল ছিটিয়ে দেয়। ভেজা কচু বাজার থেকে এনে সাথে সাথে কাটা শুরু করলে হাত চুলকাবে অনেক। তাই কিনে আনার ২-৩ দিন পরে কাটা ভালো। অথবা ফ্যানের বাতাসে জল শুকিয়ে নিতে পারেন।
২. ধোয়ার সময়ে স্ক্রাবার ব্যবহার করুনঃ
প্রাথমিকভাবে ধোয়ার সময়ে স্ক্রাবার ব্যবহার করে কাদামাটি পরিষ্কার করতে পারেন। সরাসরি হাত না লাগালে চুলকাবে না। পরিষ্কারের পরে যখন ধোবেন, তখন জলটা ভালো করে নিংড়ে নেবেন। নাহলে খাওয়ার সময়ে গলা ধরার সম্ভাবনা থাকবে।
৩. লবণ দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিনঃ
কচু রান্না করার আগে ৩০ মিনিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিন, কষ বের হয়ে যাবে। তারপরে লবণ মাখানো কচু একটি ছিদ্রযুক্ত জালিতে নিয়ে কয়েকবার ঝাঁকিয়ে নিন। এরপর জল দিয়ে আবার ভালো করে ধুয়ে নিন।
লবণের ঝামেলা করতে না চাইলে ওল বা কচু গরম জলে আধা সেদ্ধ করে নিন।
৪. তেঁতুল বা লেবুর রস দিনঃ
রান্না করার সময়ে অনেকটা রসুন কুচি এবং সামান্য তেঁতুল বা লেবুর রস দিন। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে খাওয়ার সময়ে গলা ধরবে না। লেবু বা তেঁতুল রান্না শেষ করার ৫ মিনিট আগে ওল বা কচুতে দেবেন।
৫. রসুন কুচি তেলে ভেজে দিনঃ
যদি আগেই কচু রান্না করে ফেলেন তাহলে তরকারিতে টক আচার দিয়ে এরপরে জল দিয়ে ফোটাবেন। আচার না থাকলে বেশি করে রসুন কুচি তেলে ভেজে তা তরকারিতে দিয়ে পুনরায় দিন।
৬. টম্যাটো ব্যবহার করুনঃ
সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে টমেটো ব্যবহার করা। ওল ও কচু শুধু রান্না করুন কিংবা কোন মাছ বা সবজির সাথে, টমেটো বেশি করে দিন। টমেটো লেবুর রস বা তেঁতুলের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তবে রসুন কোনমতেই স্কিপ করা যাবে না।
৭. ভাতে টক খাবেনঃ
রান্নায় টক একেবারেই দিতে না চাইলে ভাতে টক খাবেন। পাতে কচুর তরকারির উপর অনেকটা লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে তারপর খাবেন। ওলের তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ম একই।