আজকাল মিষ্টির দোকানে গেলে কাঁচের বাইরে থেকে সবুজ রঙের একটি মিষ্টি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলে বলে ‘পটল মিষ্টি’। খেতেও লাগে বেশ ভালো। প্রথমবার আমি যখন খেয়ে ছিলাম সত্যি অবাক হয়েছিলাম এই ক্ষীর পটল মিষ্টি খেয়ে। তবে আরও বেশি অবাক হয়েছিলাম যেদিন বাড়িতে নিজে বানিয়ে টেস্ট করেছিলাম। ‘আরিব্বাস দোকানের চেয়েও যে এত টেস্টি হতে পারে তা বাড়িতে বানিয়ে না খেলে বোঝা যায় না’।
আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে অপেক্ষা কিসের! আজ রেসিপি শেয়ার করছি হবহু এই পটল মিষ্টি বানানোর। একবার, জাস্ট একবার বাড়িতে বানিয়ে খান। দোকানে গিয়ে কেনা তো দূর, যখন ইচ্ছে হবে ঘরে মাত্র ২০ মিনিটে বানিয়ে এই মিষ্টির স্বাদ নেবেন পরিবারের সকলে মিলে।
উপকরণঃ
নিচে বলে দেওয়া উপকরণের পরিমান অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ পিস পটল মিষ্টি তৈরি করা যাবে একবারে।
- পটল ৮টি খোসা ছাড়ানো
- খোয়া ক্ষীর ১৫০ গ্রাম
- চিনি ২০০ গ্রাম
- দুধ ৪ চা চামচ
- এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ
- কাজুবাদাম ২৫ গ্রাম কুচি
- পেস্তাবাদাম ২৫ গ্রাম কুচি
- কেশর এক চিমটে
- বেকিং সোডা ১/২ চামচ
- রুপোর তবক ১ পিস
পটল মিষ্টি বানানোর পদ্ধতিঃ
পটল মিষ্টি বানানোর চারটি ধাপ বা স্টেপ আছে। চারটি স্টেপ শুনে ঘাবড়াবেন না। খুবই সহজ ও কমসময় সাপেক্ষ। এই চারটি স্টেপে পরপর বানালে এটি বানাতে ইজি হয়। যারা রান্না করেন না তারা এটি মেনে বানলে প্রথমবারেই সফল হবেন, তাই আমি পরপর স্টেপ বাই স্টেপ এটি বানানোর প্রক্রিয়া লিখছি।
প্রথম স্টেপঃ পটলের খোসা ছাড়ানো ও সেদ্ধ করা
যে কটা পটলের মিষ্টি বানাবেন তা আগে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। খোসা ছাড়ানোর পর ছোট ছুরি দিয়ে পটলের পেটের কাছে সামান্য কেটে নিন। সাবধানে করবেন, খেয়াল রাখবেন পটল যেন দুভাগে ভাগ না হয়ে যায়। কেটে নেওয়ার পর চামচ দিয়ে পটলের ভেতরের দানা বের করে নিতে হবে। প্রথম একটা পটল এভাবে পরিষ্কার করলেই ধাতস্ত হয়ে যাবেন ও বুঝে যাবেন কিভাবে এটা করতে হবে। সবকটা পটল এভাবে পরিষ্কার করার পর জলে আরেকবার ধুয়ে নিয়ে একটি বাটিতে রেখে দিন।
পটল সেদ্ধ করার পালা এবার। একটি কড়াইয়ে ৪ থেকে ৫ গ্লাস জল প্রথমে গরম করুন। জল ফুটতে শুরু করলে পটলগুলো এতে ঢেলে দিন। পটল দেওয়ার সাথে সাথেই ১/২ চামচ বেকিং সোডা মেশান। মেশানো হয়ে গেলে ঢাকা দিয়ে ৫ মিনিট মিডিয়াম আঁচে সেদ্ধ হতে দিন। ঠিক পাঁচ মিনিট পর গ্যাস বন্ধ করে পটল ভালো করে জল ঝরিয়ে নিয়ে একটি পাত্রে রাখুন।
দ্বিতীয় স্টেপঃ চিনির সিরায় পটল
পটল মিষ্টি যারা খেয়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে পটল মিষ্টির পটল মুখে দিলেই তা খেতে মিষ্টি লাগে। ক্ষীর বাদ দিয়ে যদি শুধু পটল খান সেটা বেশ ভালো রকমের মিষ্টি হয়। সাধারণত পটল মিষ্টি খেতে নয়। তাই আমাদেরকে দ্বিতীয় স্টেপে পটলকে মিষ্টি বানিয়ে নিতে হবে চিনির সিরায় ফেলে।
একটি কড়াইয়ে ২০০ গ্রাম চিনি ঢেলে দিন ও তাতে এক গ্লাস জল মেশান। ২ মিনিট পর তাতে সেদ্ধ করে রাখা পটল মিশিয়ে দিন। ৩ থেকে ৪ মিনিট মত মিডিয়া আঁচে তা ফুটতে দিন। তারপর গ্যাস বন্ধ করে ৩ মিনিট মত এটা রেখে দিন। তিন মিনিট পর ভালো করে পটল চিমটে দিয়ে চেপে চেপে একটি প্লেটে তুলে রাখুন।
তৃতীয় স্টেপঃ পটলের ভিতরের পুর বানানো
পটলের ভিতরের পুর বানাতে মাত্র ২ মিনিট সময় লাগবে। আগে থেকেই ১৫০ গ্রাম খোয়া ক্ষীর মিক্সিতে গুঁড়ো করে রাখুন। এবার কড়াইয়ে খোয়া ক্ষীর গুঁড়ো দিয়ে মিডিয়াম আঁচে তা ৩০ সেকেন্ড নাড়াচাড়া করুন। চিনির বানানো সিরা ৪ থেকে ৫ চামচ মত এতে মেশান। আর দুধ চার চামচ মত দিন। ৩০ সেকেন্ড পর এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাজুবাদাম কুচি, পেস্তাবাদাম কুচি, ও কেশর মিশিয়ে দিন। ১ মিনিট মত নাড়তে থাকুন সব মেশানোর পর। ক্ষীর মণ্ডর মত হয়ে এলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।
চতুর্থ স্টেপঃ পটলে পুর ভরে পটল মিষ্টির আকার দেওয়া
পটল মিষ্টি বা ক্ষীর পটল বানানো মূল কাজ কিন্তু হয়ে গিয়েছে এবার শুধু আকার দেওয়ার পালা। ক্ষীরের মণ্ড থেকে সামান্য পুর নিয়ে হাতে চেপে পটলের মত সেপ দিন। একটি একটি করে পটলে তা ভরতে থাকুন। ভরা হয়ে গেলে পটলের কাটা অংশ ভালো করে চেপে বন্ধ করে দিন।
এবার সাজানোর জন্য রুপোর তবক নিয়ে তা প্রতিটি মিষ্টির উপর লাগিয়ে দিন। তারপর উপর থেকে সামান্য কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম ও কেশর ছড়িয়ে দিলেই রেডি দোকানের মত পটল মিষ্টি।
বিশেষ কথাঃ
- পটল মিষ্টিটি বানানোর আয়োজন করার সময় লেগেছে ১০ মিনিট। বানাতে সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট।
- ক্ষীর পটল বা পটল মিষ্টি বানানোর সাথে সাথেও খেতে পারেন আবার এটিকে এক দুঘণ্টা ফ্রিজে রেখেও খেতে পারেন।
- ফ্রিজে রাখলে একটি এয়ার টাইট কৌটোর মধ্যে বা টিফিন বক্সের মধ্যে রাখবেন।
- একবারে অনেকটা পরিমান বানিয়ে ফ্রিজে রেখে তা ৫ থেকে ৬ দিন মত খাওয়া যায়।
বিশেষ টিপসঃ
- রুপোর তবক সবার ঘরে সব সময় থাকে না তাই এটি না থাকলে কোন সমস্যা নেই। এর সাথে স্বাদের খুব বেশি সম্পর্ক নেই। এটি সুন্দর দেখানোর জন্যই ব্যবহাত হয়। আর যদি কিনতে চান তাহলে অনলাইনে অ্যামাজনে পেয়ে যাবেন। দশ পিস তবকের দাম পড়বে ২০০ টাকার কাছাকাছি।
- বেকিং সোডা না থাকলে কোন সমস্যা নেই। এটি না দিয়েও পটল সেদ্ধ করতে পারেন। তবে এটির ব্যবহারে পটলের রঙ একদম সবুজ থাকে।
- খোয়া ক্ষীর যদি হাতের কাছে না থাকে তাহলে উপরে বলে দেওয়া তৃতীয় স্টেপ মেনে ছানা দিয়ে মণ্ড তৈরি করে পটলের ভিতরের পুর বানানো যাবে। সেক্ষেত্রে স্বাদের তফাৎ হবে।