আপনি আপনার বাড়ির বাগানে যদি খাদ বা সার দেওয়ার কথা ভাবছেন, তাহলে আজকের লেখা পড়ে আপনি তা অনায়াসে করতে পারেন। এর জন্য একটা টাকাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। সাথে এটি স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট উপকারী। সকলের বাড়িতে রান্নাঘর থেকে রোজই সবজির খোসা আনাজের বর্জ্য বের হয়। কিন্তু আমরা তা ফেলে দিয়ে থাকি। এখন থেকে সেটা না করে বরং ব্যবহার করুন সার হিসেবে। কিভাবে করবেন সব লিখছি স্টেপ বাই স্টেপ।
ক. সার বানাতে রান্নাঘরের কোন কোন বর্জ্য ব্যবহার করবেনঃ
- শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ বা খোসা
- শুকনো পাতা
- রুটি, সিরিয়াল বা গমের ফ্লেক্স
- ওষুধ
- মসলা
- কলা, কমলার মত ফলের খোসা
- ঘর ধুলো
- উদ্বৃত্ত খাদ্য
- বাসি প্রাণীর খাবার যেমন বিড়াল বা কুকুরের খাবার
- খড়,
- জৈব সার যেমন গোবর সার
- চা পাতা / চা ব্যাগ
- আখরোটের শাঁস
- টুকরো টুকরো কাগজ
- কাটবোর্ড
- ডিমের কার্টন বা টয়লেট রোল
খ. কিভাবে বানাবেন রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে সারঃ
একবার আপনি আপনার রান্নাঘরের সবুজ এবং শুকনো বর্জ্যের মিশ্রণ তৈরি করার পরে, আপনি কম্পোস্ট তৈরি করা শুরু করতে পারেন, এর জন্য আপনাকে প্রায় ১৪ ইঞ্চি গভীর একটি গর্ত খনন করতে হবে এবং সেই গর্তে সবুজ-বাদামী বর্জ্য পদার্থ রাখতে হবে। সম্পূর্ণরূপে দমন করা হবে। কার্বন-সমৃদ্ধ পদার্থ অর্থাৎ শুষ্ক পদার্থের বর্জ্যের আগে নাইট্রোজেনাস অর্থাৎ সবুজ পদার্থ গর্তে ফেলতে হবে, কারণ এটি পুষ্টিকে দ্রুত ভেঙে যেতে সাহায্য করে।
যদি গর্তে কম্পোস্ট তৈরি করতে না চান, তবে পরিবর্তে একটি বড় এবং গভীর পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। আপনাকে বর্জ্যের পরিমাণ অর্থাৎ বর্জ্যের পরিমাণ অনুযায়ী একটি পাত্র নিতে হবে। আপনি যদি কম্পোস্ট তৈরি করতে চান, আপনি ভিজা এবং শুকনো বর্জ্য বিভিন্ন পাত্রে রেখে উপরে থেকে ঢেকে রাখতে পারেন।
মনে রাখবেন যে পাত্রে ৫-৬টি ছিদ্র থাকতে হবে যাতে অক্সিজেনের প্রবাহ ভাল থাকে এবং আরও একটি জিনিস মনে রাখবেন যে বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট তৈরি করতে মিশ্রণে আর্দ্রতা থাকতে হবে।
যে গর্তে বা পাত্রে আপনি কম্পোস্ট বা সার তৈরি করতে চান, সেখানে বর্জ্য রাখার পর সেগুলোতে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো ধীরে ধীরে রান্নাঘরের বর্জ্যগুলোকে পচাতে শুরু করে। যদি একটি পাত্রে কম্পোস্ট তৈরি করছেন, তবে আপনাকে বর্জ্যের মিশ্রণটি আর্দ্র করতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহে সেই মিশ্রণটি নাড়তে হবে।
কেঁচোর পেলে সেগুলোকে বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কম্পোস্টিং প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হতে সাহায্য করবে। একটি প্লাস্টিকের শীট বা কাঠের তক্তা দিয়ে পাত্রটিকে ঢেকে রাখলে এটি আর্দ্রতা এবং তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
গ. রান্নাঘরের বর্জ্য কম্পোস্ট হতে কতক্ষণ লাগে?
বাড়িতে রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট তৈরি করতে ৩ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এই সময়কাল ধরে কম্পোস্ট চালু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর ২-৩ মাসের মধ্যেই আপনার বর্জ্যের স্তূপ থেকে শুকনো মাটির গন্ধ আসতে শুরু করবে। যখন গর্তের বর্জ্য পদার্থ পচে যায় সম্পূর্ণরূপে তখন তা সার বা মাটিতে রূপ নেয়।
ঘ. রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে সার বানিয়ে ব্যবহারের সুবিধাঃ
- গৃহস্থালির বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার করা হয় কম্পোস্টের মাধ্যমে, তাই এই বর্জ্য থেকে সার/কম্পোস্ট তৈরি করা সস্তা এবং সহজ।
- এই সারটিতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে এবং এটি এনপিকে-এর একটি উচ্চ উৎস, যা গাছ ও গাছের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী।
- এটি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়।
- এটি আপনার গাছ এবং গাছপালাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়।
- রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে তৈরি কম্পোস্টে কোনো ধরনের রাসায়নিক না থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী।
- এই কম্পোস্ট মাটির উর্বরতা উন্নত করে এবং গাছপালাকে সম্ভাব্য রোগ থেকে দূরে রাখে।
ঙ. কম্পোস্ট তৈরিতে কোন বর্জ্য ব্যবহার করা উচিত নয়?
- সব ধরনের তৈলাক্ত পণ্য
- দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, দই, পনির
- তাজা মাংস
- মাছের পণ্য
- ডালপালা
- টিস্যু পেপার
- তেল ধারণকারী অন্য কোন কাগজ
- সব ধরনের রান্নার তেল
এই সব জিনিস থেকে কম্পোস্ট তৈরি হয় না। এগুলিকে একটি গর্তে বা পাত্রে রাখলে তীব্র গন্ধ বের হতে পারে। তাই সবসময় মনে রাখবেন কোন জিনিস থেকে কম্পোস্ট তৈরি করা যায় আর কোনটা থেকে করা যায় না।