রান্না করতে গেলে রান্নায় চিনি না দিলে মোটে চলে না? এদিকে মিষ্টি খাওয়ার বদভ্যাসে দিনকে দিন মুটিয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই ধরা পড়েছে ডায়াবেটিস? যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কি রান্নায় চিনি দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেবেন? একথা ভেবে মন খুঁতখুঁত করে সব বাঙালিরই! চিনির বদলে ব্যবহার শুরু করুন এই ৪টি জিনিসের যেকোনো একটি।
চিনির অপকারঃ
- চিনি কিন্তু শুধু ডায়াবেটিসেরই কারণ নয়, এটি শরীরে বাড়তি কার্বোহাইড্রেট রূপে জমে গিয়ে এটি ফ্যাটে পরিণত হয়। যে-কারণে কোলেস্টেরল, ওবেসিটি ও ফ্যাটি লিভার ডিজিজের সম্ভাবনা দেখা যায়।
- এছাড়া অতিরিক্ত চিনি খাওয়া ব্লাড সুগার বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগের সম্ভাবনাও বাড়ায়।
- অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি খেলে তা শরীরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন ও তৈল নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, ফলে ব্রণর সম্ভাবনা দেখা যায়।
আজকের লেখায় রইল এমন কয়েকটি জিনিসের সন্ধান, যেগুলি চিনির বদলে রান্নায় ব্যবহার করলে স্বাদের হেরফের তো হবেই না, উলটে চিনি খেয়ে ফেলার অপকারের হাত থেকেও বাঁচবেন।
১. গুড়ের ব্যবহারঃ
- আজ্ঞে হ্যাঁ, রান্নায় গুড়ের ব্যবহারের কথা শুনে নাক সিঁটকোলেও গুড়ের উপকারিতা প্রচণ্ড। আখ থেকে মিষ্টি রস বের করে নেওয়ার পর সেই ঘন রসকে দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোটালেই গুড় তৈরি হয়। গুড় সাধারণত চটচটে আঠালো হলেও আজকাল বাজারে চিনির বদলে ব্যবহার করার জন্য গুঁড়ো বা পাওডার করা গুড়ও (জ্যাগারি) কিনতে পাওয়া যায়।
- আপনারা সকলেই জানেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণের ফলে চিনিতে কোনও প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান থাকে না। গুড়ের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয় না। প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এই গুড় লিভার থেকে ক্ষতিকরক পদার্থ দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে এবং সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে।
- এছাড়া শরীরে এনার্জির জোগান দিতে এবং শরীর গরম রাখতেও গুড়ের জুড়ি নেই।
- গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে বলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সার্বিকভাবে বৃদ্ধি করে। গলা, ফুসফুসের সমস্যাতেও গুড়ের ব্যবহার জনপ্রিয়।
- পাওডারড জ্যাগারি আজকাল মোটামুটি সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। রান্নায় চিনির বদলে একে আপনি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন।
২. ব্রাউন সুগারঃ
- ব্রাউন সুগার সাধারণত বেকিংয়ের ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার করা হলেও রান্নাতেও আজকাল এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাদা চিনির দানা এবং গুড়ের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। এতে প্রায় ৫% গুড় থাকে এবং ব্রাউন সুগারে ক্যালোরিও অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
- ব্রাউন সুগারে প্রক্রিয়াকরণ কম হয়, ফলে এতে সাদা চিনির চেয়ে বেশি পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, মিনারেল ইত্যাদি উপস্থিত থাকে। এছাড়া এই চিনি ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামে ভরপুর। গুড়ের মতো ব্রাউন সুগারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সর্দি-কাশির প্রবণতা কমায়।
- এছাড়া আপনার হাঁপানি থাকলেও আপনি ব্রাউন সুগার ব্যবহার করতে পারেন। রান্নায় এটি ব্যবহার করলেও স্বাদের খুব একটা হেরফের হয় না। তবে ব্রাউন সুগার কিন্তু হোয়াইট সুগারের চেয়ে বেশি মিষ্টি, সেটা মনে রাখবেন।
৩. মধুঃ
- প্রাচীনকাল থেকেই মধুকে প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। মধুর একাধিক গুণের জন্য বর্তমানে অনেকে রান্নাতেও মধু ব্যবহার করে থাকেন।
- মধু যেহেতু সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়, ফলে মধুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে। এতে ৪০% ফ্রুকটোজ, ৩০% গ্লুকোজ, জল ও আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো মিনারেলস থাকে।
- এছাড়া মধু চিনির চেয়ে মিষ্টি হওয়ায় রান্নার সময় সামান্য মধুতেই কিন্তু কাজ চলে যাবে।
- এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট ও সহজপাচ্যতার কারণে মধু বর্তমানে বাঙালির হেঁশেলে সমাদরের সঙ্গে জায়গা করে নিচ্ছে।
৪. কোকোনাট সুগারঃ
- কোকোনাট সুগারের কথা হয়তো আপনারা অনেকেই শোনেননি। কিন্তু চিনির বদলে অনায়াসে এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক শর্করাকে আপনি নিত্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
- নারকেল গাছের ফুলের রস থেকে এই সুগার তৈরি হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রনের পাশাপাশি নানারকম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও থাকে।
- এছাড়া এতে থাকা ফাইবার শরীরে গ্লুকোজের শোষণ ক্ষমতা হ্রাস করে। তাই অনায়াসে আপনি একে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া ম্যাপল সিরাপকেও আজকাল অনেকে রান্নায় চিনির বদলে ব্যবহার করছেন। তাহলে আর চিন্তা কীসের? চিনির বদলে আজ থেকেই রান্নায় এগুলি ব্যবহার করুন, আর ডায়াবেটিসকে দূরে রাখার পাশাপাশি পেয়ে যান পর্যাপ্ত পুষ্টিও।
Very good
Thank you 🙂