তরকারি রান্না করার সময়ে অনেকেই টমেটো দিয়ে থাকেন একটু ভিন্ন স্বাদ পাওয়ার জন্য। অনেকে মাছ বা মাংস টমেটো দিয়ে ঝোল করে খেতে ভালোবাসেন। স্বাদে ভিন্নতা আনতে গিয়ে যদি স্বাদেরই বারোটা বেজে যায় তাহলে বাঁধে মহা ঝামেলা।
যেকোনো টক জাতীয় জিনিসের মাত্র বেশি হয়ে গেলে তরকারি এমন টক হয়ে যায় ,যে এতে আর মুখ দেওয়ার জো থাকেনা। তখন পুরো রান্নাটাই বেকার। তরকারিতে টক কমানোর উপায় জানা থাকলে পড়তে হবে না এমন বিড়ম্বনায়। কি সেই উপায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১. টমেটো বা লেবু দেওয়া তরকারিতে টক কমানোর উপায়ঃ
টমেটো দিলে তরকারি একটু টক স্বাদের হবেই। যদি টক কমাতে চান তাহলে সামান্য চিনি দিয়ে দিন। এটাই সবচাইতে সহজ এবং নির্ঝঞ্ঝাট পদ্ধতি। তরকারিতে এক চিমটি হোয়াইট সুগার, ব্রাউন সুগার, অথবা যেকোন ধরণের চিনি দিয়ে মিক্স করুন। এতে টক ভাবটাও কমবে আবার তরকারি মিষ্টিও হবে না।
চিনির পরিবর্তে সামান্য মধু অথবা গুঁড় দিতে পারেন। আবার ঘন ক্রিম বা ক্রিমজাতীয় লিকুইড, পনির, লবণ দিতে পারেন। বেশি করে জল দিলেও টক ভাব কমে যাবে। আবার শুধু পেঁয়াজ বা ক্যারামেল করা পেঁয়াজ তরকারিতে দিলেও টক কমে যাবে।
ডাল কিন্তু আরেকটা ভালো অপশন হতে পারে টমেটো বা লেবুর টক কমানোর জন্য। তাই যে তরকারিটা টক হয়েছে সেখানে ডাল মিশিয়ে দিন। অথবা পাতে তরকারির সাথে আলাদা করে ডাল মাখিয়ে নিতে পারেন। ভেজিটেবল ব্রথ টক কমায় সাথে স্বাদও বাড়ায়। রান্না করার সময় আধা কাপ ভেজিটেবল ব্রথ দিয়ে দিন।
অনেকে মুরগীর ঝোলে টমেটো দিতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে বেশি করে পেঁয়াজ, গরম মশলা বা মরিচ গুঁড়া দিতে পারেন। গরম মশলার মধ্যে এলাচটা ভালো কাজ করে। শুধু যদি এলাচ দেন তাহলেও চলবে। এলাচ টক কমানোর সাথে সাথে খাবারে ভিন্ন একটা স্বাদ যোগ করবে।
২. যেকোনো রান্নার অতিরিক্ত টক কমানোর উপায়ঃ
আলু অতিরিক্ত লবণ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আবার এটা অতিরিক্ত টক ভাব কিছুটা কমায়। তরকারি রান্না করার সময় টমেটোর সাথে আলু কিংবা গাজর খোসা ছাড়িয়ে চার ভাগ করে কেটে দিয়ে দিন। রান্না হয়ে গেলে আলু বা গাজর তুলে ফেলুন। তরকারি খেতে এখন বেশি টক লাগবে না।
বেকিং সোডা যদি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আরো ভালো হয়। খাবারে অ্যাসিডের পরিমাণ যখন বেশি হয় তখন সেটা খেতে টক লাগে। চিনি অতিরিক্ত অ্যাসিড সূক্ষ্মভাবে কমাতে পারেনা। কিন্তু বেকিং সোডা অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে স্বাদের ব্যালেন্স করতে সক্ষম। প্রতি এক কাপ ঝোলের জন্য ১ চা চামচের এক চতুর্থাংশ বেকিং সোডা মেশাতে হবে। সোডা পুরোপুরি গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। মেশানোর পরে টেস্ট করে দেখবেন যে টক ভাব কমেছে কিনা।
যদি না কমে তাহলে কিন্তু ভুলেও বেকিং সোডা পুনরায় দিতে যাবেন না। অতিরিক্ত সোডা লিকুইডের সাথে বিক্রিয়া করবে। আবার ফুটন্ত গরম তরকারিতেও সোডা দিবেন না। বেকিং সোডায় কাজ না হলে ১ চা চামচ বাটার, ক্রিম, মধু, বা পনির দিতে পারেন। বাটার অথবা ক্রিম দিলে ঝোলটাও ঘন হবে।
৩. তেঁতুল দেওয়া তরকারিতে টক কমানোর উপায়ঃ
কিছু খাবার আছে যেগুলোতে তেঁতুল না দিলে স্বাদ আসে না। যেমন রসম, সাম্বার ইত্যাদি। এগুলো রান্নায় সময় যদি তেঁতুলের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে ১ চা চামচ চিনি দিয়ে দিন। অথবা লবণের পরিমাণ সামান্য বাড়িয়ে দিন। এটা করলেই অতিরিক্ত টকের স্বাদ কেটে যাবে। নুন বা লবণ যদি দেন তাহলে তা দেওয়ার পর এক কাপ গরম জল এতে মিশিয়ে ফুটিয়ে নেবেন। তাহলে লবনের স্বাদ বাড়বে না।
৪. রান্নার মাধ্যমে তরকারিতে টক কমানোর উপায়ঃ
রান্নার সময়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে তরকারির টক অনেকাংশে কমানো সম্ভব। টমেটো বা তেঁতুলের পরিমাণ যতটা সম্ভব কম দেবেন। তাহলে টক কমানোর জন্য বাড়তি ঝামেলা করতে হবে না।
মজার ব্যাপার কি জানেন? টমেটো বা লেবু যত বেশি সময় ধরে রান্না করবেন এর টক তত ভালো তরকারিতে ছড়িয়ে পড়বে। তাই তরকারি টক করতে না চাইলে টক জাতীয় জিনিস বা টমেটো রান্নার সময় কমিয়ে আনুন। রান্নার শেষের দিকে এগুলো তরকারিতে দিন। এতে টক ভাব কম হবে।
সুপার শপে খোঁজ করলে ক্যানড সুইট টোমাটোর খোঁজ পেতে পারেন। এগুলো সাধারণ টমেটোর মত অত টক হয় না। সাধারণত স্প্যাগেটি বা পাস্তার সাথে খাওয়ার জন্য ছোট ছোট মিষ্টি টমেটো ব্যবহৃত হয়। চাইলে এগুলো তরকারিতে দিতে পারেন।
আরেকটি কাজ যেটা করতে পারেন সেটি হল টমেটোর খোসা এবং বীজ আলাদা করে ফেলা। বীজ আর খোসার কারণেই টমেটো টক হয়ে থাকে। তাজা টমেটো প্রথমে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। তারপর জল ঝরিয়ে সাথে সাথে ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখুন। খোসা ছাড়ানো সহজ হয়ে যাবে। তারপরে টমেটো অর্ধেক করে কেটে ধারালো ছুরি দিয়ে সাবধানে বীজগুলো আলাদা করে ফেলুন। পাল্প যেন বেরিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।