আমরা প্রায়ই পনির দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক ডিশ রান্না করে থাকি। অবশিষ্ট থাকলে সেটা রেফ্রিজারেটরে স্টোর করি পরে ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু পরে রেফ্রিজারেটর থেকে পনির বের করে রান্না করতে গেলে বিরাট ঝামেলায় পড়তে হয়। ফ্রোজেন পনির থেকে ঠান্ডা ভাবটা সহজে যায় না। আর ঐ শক্ত পনির দিয়ে রান্না করলে পনির একেবারে ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। আবার ফ্রোজেন পনির নরম করতে পারলেও কিছু ভুলের কারণে পনির শক্ত থেকেই যায়। ফ্রিজের শক্ত পনির নরম করার ৭টি টিপস জানলে সবসময় পাওয়া যাবে নরম ও সুস্বাদু পনির। কিভাবে করবেন তা জেনে নিন আজকের লেখায়।
১. রুম টেম্পারেচারে রাখুনঃ
মাছ-মাংস যেমন রুম টেম্পারেচারে থাকলে নরম হয়ে যায়, ঠিক সেভাবে ফ্রোজেন পনিরও নরম হবে। পনির যদি বড় খন্ড আকারে থাকে তাহলে সেটা ১ ইঞ্চি সাইজের কিউব করে কেটে নিন। তারপর ফ্রোজেন পনিরের কিউবগুলো রান্নার আগে সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট বা সর্বোচ্চ ৩ ঘন্টা রুম টেম্পারেচারে রাখবেন। এতে ঘরোয়া তাপমাত্রার সাথে পনির এডজাস্ট করবে এবং আপনা আপনিই নরম হয়ে যাবে। যদিও এখানে ঘরোয়া তাপমাত্রায় সর্বনিম্ন ৩০ মিনিট রাখার কথা বলা হয়েছে, জেনে রাখুন সঠিক কনসিসটেন্সি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২ ঘন্টা সময় লাগবেই।
২. গরম জলে ডুবিয়ে রাখুনঃ
শীতকালে আবহাওয়ার সাথে রুম টেম্পারেচারও ঠান্ডা থাকে। তাই তখন পনির রুম টেম্পারেচারে পনির নরম করা বৃথা। এই সময়টাতে গরম জলে ডুবিয়ে শক্ত পনির নরম করতে পারেন। মাঝারি সাইজের একটা বাটিতে হালকা গরম (১১০ ডিগ্রী তাপমাত্রার) জল ঢেলে নিন। এতে পনিরের কিউবগুলো ঢেলে দিন। জলের পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে পনির ডুবে যায় ঠিকই কিন্তু ভেসে না থাকে। এভাবে ৫ মিনিট পনির ভিজিয়ে রেখে তুলে ফেলুন এবং জল ঝরিয়ে রান্নার কাজে লাগান। যদি ৫ মিনিটেও নরম না হয় তাহলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখবেন। এর বেশী সময় ধরে ডুবিয়ে রাখলে পনিরের বাইন্ডিং হারিয়ে যাবে। রান্নার সময়ে ভেঙে যাবে আর স্বাদটাও পাল্টে যাবে।
৩. সেদ্ধ করুনঃ
সেদ্ধ করেও ফ্রোজেন পনির নরম করা যায়। ছোট একটা সসপ্যানে ২ কাপ জল ঢেলে গ্যাসে বসিয়ে দিন। জল যখন ফুটে উঠবে তখন পনিরের কিউবগুলো দিয়ে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সেদ্ধ করুন। এরপর জল ঝরিয়ে সাথে সাথে ঠান্ডা জলে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। গরম জলের পরে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে ফ্রোজেন পনির নরম হয় এবং সঠিক কনসিসটেন্সি ফিরে পায়। যদি ঠান্ডা জলে না ভেজান, তাহলে অল্প সেদ্ধতে পনির তো নরম হবেই না, উল্টো ঐ পনির রান্নায় দিলে রাবারের মতো শক্ত হয়ে যাবে। আবার অতিরিক্ত সেদ্ধ করলে পনির ভেঙে যাবে।
৪. হালকা ভেজে নিনঃ
গ্যাসে মাঝারি সাইজের একটি ফ্রাইপ্যান বসিয়ে দিন। এবারে এতে ১-২ টেবিল চামচ ঘি বা তেল দিয়ে মাঝারি আঁচে ১ মিনিট গরম করুন। পনিরের কিউবগুলো এতে দিয়ে প্রতি ১০-১৫ সেকেন্ডে উল্টে দিন। ২-৩ মিনিট পরে দেখবেন কিউবের ধারগুলো হালকা গোল্ডেন ব্রাউন রঙের হয়েছে। তখন নামিয়ে ফেলবেন। পনির ভাজার সময় আস্তে আস্তে প্যানটা নাড়াবেন যাতে কিউবগুলো প্যানে আটকে না যায়। আর ২-৩ মিনিটের বেশী ভাজবেন না। এতে কিউবগুলো শক্ত হয়ে যাবে৷
৫. ভাপিয়ে নিনঃ
গরম জলে ডুবিয়ে রাখলে বা সেদ্ধ করলে পনিরে কিছুটা জল ঢুকে পড়ে৷ ফলে এর স্বাদ ও টেক্সচারে পরিবর্তন আসে। পনির ভাপিয়ে নিলে এই সমস্যাটা হয় না। আপনার যদি প্রি-কাট পনির কিউব থাকে, তাহলে সেগুলোও স্টিম করতে পারেন। একটা ডিপ ফ্রাইপ্যান বা সসপ্যানে আধা থেকে ১ কাপ জল ঢালুন এবং ফুটিয়ে নিন। জল যখন টগবগ করতে থাকবে তখন গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার পাত্রের মুখের সমান জালি বা ছাঁকনী নিয়ে পাত্রের উপর বসিয়ে দিন। পনিরের কিউবগুলো এমনভাবে ছাঁকনীতে ছড়িয়ে দিন যাতে একটা আরেকটার সাথে লেগে না থাকে এবং বাষ্প সব কিউবে পৌঁছায়। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, এতে বাষ্প বাইরে যেতে পারবে না। ১০-১৫ মিনিট অথবা ততক্ষণ পর্যন্ত ঢেকে রাখুন যতক্ষণ না পর্যন্ত পনির সফট এবং স্পঞ্জি হচ্ছে।
৬. ফ্রিজে ঢেকে রাখুনঃ
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, পনির রেফ্রিজারেটরে কখনোই খোলা অবস্থায় না রাখা। এতে পনির শক্ত হবে না। রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডা আবহাওয়া পনিরের ময়েশ্চার শুকিয়ে ফেলে এবং রাবারের মত শক্ত করে ফেলে। তাই পনির যখন রেফ্রিজারেটরে রাখবেন তখন কোন এয়ার টাইট বক্সে বা কন্টেইনারে করে রাখবেন। বক্সের মুখ যেন ভালো করে আটকানো থাকে সেটাও খেয়ালে রাখবেন। ভালো হয় যদি একেবারে অনেক পনির না কিনে প্রতিবার অল্প করে কিনেন। তাহলে স্টোর করার ঝামেলাও থাকবে না।
৭. রান্নায় প্রথমেই দিবেন নাঃ
আপনি জলে ভিজিয়ে, স্টিম করে, বা প্যান ফ্রাই করে পনির নরম করতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, পনির আগে থেকে যতই নরম করে রাখুন না কেন, রান্নার শুরুতেই নরম করা পনির দিলে কিন্তু সেটা শক্তই থেকে যাবে। তাপের সংস্পর্শে বেশীক্ষণ থাকলে এমনটা হয়। আবার কেউ কেউ পনির আগে ভেজে তারপর রান্নায় দেন। ডিপ ফ্রাই করা পনিরের টেক্সচারও রাবারের মতো হয়ে যায়। তাই সফট পনির পেতে চাইলে আগে ফ্রোজেন অবস্থা থেকে নরম তো করবেনই, সেই সাথে রান্নার শেষের দিকে কড়াইতে পনির দিবেন। এতে পনিরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ, এবং টেক্সচার অটুট থাকবে। শেষের দিকে পনির দিলে খেয়াল রাখবেন তা যেন গ্যাসের তাপে বেশীক্ষণ না থাকে।