ছানা এবং পনির দুটোই দুধ থেকে তৈরি হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে ছানা এবং পনিরের মধ্যে পার্থক্য কি। গরম দুধে টক মেশালে ছানা হয়। কিন্তু পনির যেহেতু স্বাদে নোনতা, তাই গরম দুধে নুন দিলেই কিন্তু পনির হয় না। এরকম আরো অনেক পার্থক্য আছে। আজকের আর্টিকেলে থাকছে ছানা পনিরের পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ছানা ও পনির এক না পার্থক্য আছে এদেরঃ
এক কথায়, ছানা হচ্ছে পনিরের আগের রূপ। ছানা তৈরির পরে আরো কিছু স্টেপের মাধ্যমে পনির তৈরি করা হয়। তাই পনির তৈরিতে সময় বেশি লাগে। আর এই দুটো জিনিস স্বাদ ও আকারেও আলাদা।
ছানা ও পনিরের পার্থক্যঃ
ক. তৈরির পদ্ধতি আলাদাঃ
ফুটন্ত গরম দুধে এডিবল অ্যাসিডিক উপাদান (যেমন লেবুর রস বা ভিনেগার) দিলে দুধ কেটে ছানা তৈরি হয়। এটা ছানার প্রাথমিক পর্যায়। সেই ছানা পরে ভালো করে ছেঁকে, ধুয়ে নিলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। কিন্তু পনির করতে গেলে এই প্রসেসড ছানায় প্রয়োজন মতো নুন মেশাতে হয়। তারপর সেটা পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হয় কয়েক ঘন্টা। এটা পরে শক্ত হয়ে পনিরের রূপ নেয়৷
দুধ কেটে ছানা হওয়ার পরে সেটা বরফ ঠান্ডা জলের নিচে ধুয়ে নিতে হয়। এতে ছানা জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকেনা। পনির বানানোর সময় জলের কোন ব্যবহার হয় না।
এছাড়া ছানায় প্রোটিন, কার্ব, এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু পনিরে প্রোটিনের পরিমাণ ছানায় তুলনায় কম থাকে।
খ. জায়গা আলাদা আলাদাঃ
যদিও ভারতেই ছানা এবং পনিরের জন্ম, তবু দুটো খাবারের মধ্যে অঞ্চলগত পার্থক্য আছে। ছানার উৎপত্তিস্থল পশ্চিমবঙ্গ, আর পনিরের উৎপত্তিস্থল পাঞ্জাব।
গ. ছানা ও পনিরের ব্যবহারঃ
ছানা প্রধানত মিষ্টি বানাতে, বিশেষ করে বাঙালি মিষ্টি খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তরকারিতে এর ব্যবহার কম। অন্যদিকে পনির দিয়ে ঝাল-মশলার তরকারি তৈরি করা যায়। উত্তর ভারতীয় কারি রেসিপিতে পনিরের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যারা নিরামিষ খান।
ঘ. আকারের তফাৎঃ
ছানা দেখতে পাউডারের মত, তবে প্রথম অবস্থায় ছোবড়া ছোবড়া লাগে। তাই অনেকে ছানাকে ‘ক্রাম্বলড পনির’ বলে থাকেন। পনির শক্ত থাকে। ছানাকে মুঠো করে বলের মতো বানানো যায়। পনির যেহেতু শক্ত তাই এটাকে ত্রিভুজাকৃতির বা কিউব করে কেটে নেয়া যায়৷
ঙ. বড় পার্থক্য হচ্ছে ময়েশ্চারঃ
ছানা এবং পনিরের মধ্যকার সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে ময়েশ্চার। ছানায় ময়েশ্চার থাকে, তাই এটা মসৃণ এবং নরম। এটা সফট চিজ নামেও পরিচিত। পনিরে ময়েশ্চার থাকেনা, বা থাকলেও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই পনীরের টেক্সচার রুক্ষ হয়।
ছানা থেকে যে জল বের হয় সেটাকে মাঠা বা ঘোল বলে। ছানা এমনভাবে ছাঁকতে হয় যাতে ছেঁকে নেয়ার পরেও এর ভিতরে আংশিক জল থাকে। ছানার জল খাওয়া যায় বা পরে অন্য রান্নায় ব্যবহার করা যায়। পনিরের থেকে এই জল সম্পূর্ণভাবে বের করে ফেলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। ছানার জল বের করতেও বেশি সময় লাগেনা। কিন্তু পনিরের জল বের করতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়।
চ. মূল উপাদানের বৈষম্যঃ
ছানা তৈরির জন্য গরুর দুধ হচ্ছে বেস্ট অপশন। গরুর দুধ থেকে তৈরি ছানা বেশ সফট আর স্মুদ হয়। আর এটা দিয়ে মিষ্টি বানালে কোয়ালিটিও ঠিক থাকে। মহিষের দুধ দিয়ে বানানো ছানা কিছুটা শক্ত এবং অমসৃণ টেক্সচারের হয়। এই ছানার মিষ্টি খেতে খুব একটা ভালো লাগে না। পনির বানাতে ঘরে বেশি সময় লাগে। তবে পনির গরু এবং মহিষ উভয়ের দুধ থেকেই বানানো যায়।