পটেটো চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো মুখরোচক খাবার চাইলেও বহুদিন ধরে খাওয়া যায় না। একটু ঠান্ডা হলেই চিপস নেতিয়ে যায়। আবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে পরের দিন একই অবস্থা হয়।
তাই মচমচে খেতে চাইলে হয় চিপস একবারে সব খেয়ে ফেলতে হয় নয়তো প্রতিবার নতুন করে ভাজতে বা কিনতে হয়। এতো ঝামেলা করার চাইতে কিছু কৌশল খাটিয়ে সহজেই চিপস ও ফ্রাই বহুদিন পর্যন্ত মচমচে রাখা যায় বা খাওয়া যায়।
হোমমেইড হোক বা কমার্শিয়াল, বাসি পটেটো চিপস ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মচমচে করার টিপস জেনে নিন।
১. ময়েশ্চার বের করুনঃ
চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস নেতিয়ে যায় ময়েশ্চারের কারণে। আলুতে যে ময়েশ্চার থাকে তা ঠান্ডা অবস্থায় চিপসের মচমচে ভাব নষ্ট করে। পুনরায় চিপস গরম করলেও নেতানো ভাবটা থেকেই যায়। তাই সবার আগে আলুর ময়েশ্চার বা অতিরিক্ত জল দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
- ঘরে বানানো চিপস যত দ্রুত সম্ভব ঠান্ডা করে নিন। বেঁচে গেলে সেটা ফ্রিজে রেখে দিন। পুরোপুরি এয়ার টাইট করে রাখার চাইতে হালকাভাবে চিপস ঢেকে রাখলে ভালো হয়। যখন রি-হিট করবেন তখন যেন চিপস সম্পূর্ণ শুকনো থাকে সেটা খেয়াল রাখবেন।
- নয়তো নরম, স্যাঁতসেঁতে চিপস ভাজতে গেলে নরমই থাকবে। স্যাঁতসেঁতে ভাব কমানোর জন্য কিচেন টাওয়েল দিয়ে হালকা চেপে চিপসগুলো শুকিয়ে নিন। অথবা লবণ মাখিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে পারেন জল বের করার জন্য।
- ফ্রিজে রাখার বদলে রুম টেম্পারেচারে এয়ার টাইট করে রাখতে পারেন। এতে চিপস শুকনো থাকবে আর সহজে নেতিয়ে পড়বে না।
২. ফ্রাইপ্যানে রি-হিট করুনঃ
- নেতিয়ে পড়া চিপস পুনরায় মচমচে করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেগুলোকে উচ্চ তাপে ভাজা। এক্ষেত্রে কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহার ফ্রাইপ্যান নিতে হবে। এবারে খুব সামান্য পরিমাণে তেল দিতে হবে। সেটা ১-২ চা চামচের বেশি না।
- তেল দিলে প্যানে চিপস পুড়ে যাবে না আবার মচমচে স্বাদও ফিরে আসবে। প্যানে তেল ভালোমতো ব্রাশ করে নিন। তারপরে মিডিয়াম হিটে প্যান গরম করুন। প্যান যখন পূর্ণ মাত্রায় গরম হয়ে আসবে তখন নরম চিপসগুলো ঢেলে দিন।
- প্যান ভর্তি করে ঢালবেন না। অল্প করে ঢালবেন যাতে চিপস সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে এবং ঢালার পরে চারপাশে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা থাকে। চারপাশে জায়গা থাকলে হিট সমানভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং চিপস মচমচে হবে।
- চিপসের একপাশ রি-হিট করা হয়ে গেলে উল্টে অপর পাশটাও রি-হিট করবেন। ভাজার ডিউরেশন ৩০ সেকেন্ডের বেশি কোনমতেই করা যাবে না। উভয় পাশ ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে টিস্যু পেপারে বাড়তি তেল শুষে নেবেন।
৩. ওভেন ব্যবহার করুনঃ
প্যানে রি-হিট বা রি-ফ্রাই করার আইডিয়া সবসময় ভালো ফল দেয় না। চিপস অতিরিক্ত অয়েলি বা ওভারকুকড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য ওভেনে কয়েক মিনিট ধরে চিপস রি-হিট করতে পারেন।
- আগে ওভেনটা প্রি-হিট করতে হবে এবং ভালো মানের হেভি বেকিং শীট নিতে হবে। ওভেন বেশি গরম হলে কিন্তু চিপস পুড়ে যাবে। সাধারণত ৩৫০° থেকে ৩৭৫° ফারেনহাইটে প্রি-হিট করতে হয়। ওভেনের ম্যানুয়াল থেকে সঠিক হিসাব জানতে পারবেন।
- বেকিং ট্রে তে শীট বিছিয়ে নিন। চাইলে সামান্য তেল ব্রাশ করে নিতে পারেন, তবে না দিলেও চলে। ওভেন প্রি-হিট হওয়ার সময়ে শীটসহ ট্রে টা ওভেনে দিয়ে দিন। শীট গরম হয়ে আসলে এক পরত চিপস ছড়িয়ে দিন।
- অবশ্যই ঠেসে ছড়ানো যাবে না, সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে আশেপাশে যথেষ্ট জায়গা সমেত। ৪৫০° ফারেনহাইটে ৩-৪ মিনিটের মতো রি-হিট করুন (নতুন ওভেন হলে ৪০০° ফারেনহাইট লাগতে পারে)। ওভেন থেকে বের করে ভালোমতো ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
- বেকিং শীটের বদলে ওভেন-প্রুফ বাটিতে করেও চিপস গরম করতে পারেন। ওভেন প্রি-হিট করে চিপস ৫-১০ মিনিট গরম করুন। এতে আলুর ভিতরকার ময়েশ্চার উবে যাবে আর নেতিয়ে পড়া চিপস পুনরায় মচমচে হয়ে উঠবে। এরপর ভালোমতো ঠান্ডা করে এয়ার টাইট করে সংরক্ষণ করুন। মচমচে না হলে প্রয়োজনে আরো ৫-১০ মিনিট গরম করতে হবে।
৪. মাইক্রোওয়েভে রি-হিট করুনঃ
ইলেকট্রিক ওভেনের চাইতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে চিপস রি-হিট করতে অনেক কম সময় লাগে। ওভেনে যেখানে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট লাগে, মাইক্রোওয়েভে সেখানে সর্বোচ্চ ১-২ মিনিটে কাজ হয়ে যায়।
- চিপস ফ্রিজে থাকলে সেটা বের করে রুম টেম্পারেচারে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। একটি মাইক্রোওয়েভ-সেফ প্লেটে পেপার টাওয়েল বিছিয়ে নিন। তারপর টাওয়েলের উপর এক পরত চিপস ছড়িয়ে দিন। এবারে চিপসের উপর হালকা অলিভ অয়েল বা ভেজিটেবল অয়েল ছিটিয়ে দিন।
- তেল এখানে লুব্রিকেন্টের কাজ করবে এবং নেতিয়ে পড়া চিপস মচমচে করতে সাহায্য করবে। আবার পেপার টাওয়েল তেলতেলে ভাব এবং চিপসের ময়েশ্চার শুষে নেবে।
- চিপস বিছানোর পরে প্লেটটা মাইক্রোওয়েভে দিয়ে হাই হিটে ২০ সেকেন্ড গরম করুন। একপাশ গরম হলে বের করে উল্টে দিন এবং পুনরায় ২০ সেকেন্ড গরম করুন। যতক্ষণ না পর্যন্ত উভয় পাশ গোল্ডেন ব্রাউন কালারের এবং মচমচে হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে গরম করে যান। হয়ে গেলে সাবধানে নামিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
- প্লেটের চাইতে মাইক্রোওয়েভ ক্রিস্পার প্যান ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়। কারণ ক্রিস্পার প্যান চিপস সরাসরি মাঝখান থেকে গরম করে না। বরং এটা মাইক্রোওয়েভের তাপ চিপসের চারপাশে পৌঁছে দেয়। ফলে নরম হয়ে যাওয়া চিপস সহজে ক্রিস্পি হয়।
- মাইক্রোওয়েভে টানা ১ মিনিট ধরে চিপস গরম করলে একপাশ শুধু গরম হয়ে পুড়ে যায়। তাই ২০ সেকেন্ড টাইম লিমিটে উভয় পাশ গরম করা উচিত। এই ধরণের ওভেনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এটা ইলেকট্রিক ওভেনের মতো প্রি-হিট করা লাগে না। শুধু একটি বাটন চেপে কাজ সারা যায়।
বিশেষ টিপসঃ
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য ক্রিস্পার প্যান প্রি-হিট করে ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে মাইক্রোওয়েভে ক্রিস্পার প্যান ৩-৪ মিনিট ধরে প্রি-হিট করুন। তারপরে এক পরত লেফটওভার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিছিয়ে তার উপর ১ টেবিল চামচ অলিভ/ভেজিটেবল অয়েল ছিটিয়ে দিন। এরপরে হাই হিটে ২০ সেকেন্ড করে উভয় পাশ গরম করতে থাকুন বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত।
যদি ক্রিস্পার প্যান না থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। একটি মাইক্রোওয়েভ-সেফ প্লেটে ২-৩ টি পেপার টাওয়েল বিছিয়ে এরপর বাসি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিছিয়ে দিন। হালকা তেল দিয়ে ফ্রাইগুলো ব্রাশ করে নিন। তারপর মাইক্রোওয়েভে প্লেটটা ঢোকানোর সময়ে সাথে আধা কাপ জল দিয়ে দিন।
জলের কারণে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইগুলো একটু ধীরে গরম হবে কিন্তু তাপমাত্রার ডিস্ট্রিবিউশন আরো ভালো হবে। প্রতিটা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই স্টিক সঠিক তাপ পাওয়ায় বেশ ক্রিস্পি হবে। তবে জলের পরিমাণ আধা কাপের বেশি হলে হিট ডিস্ট্রিবিউশনে গড়মিল হয়ে যাবে। ফলে বাসি চিপস ভাজলেও নরম হয়েই থাকবে। আবার জল বেশি হলে ওভেনের ভিতরে গড়িয়ে পড়তে পারে।