গ্রিন টি ওজন কমায় এটা আমাদের সকলের জানা। এটি মেটাবলিজম বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, খাবার হজম করতে সাহায্য করে, এবং অতিরিক্ত মেদ ঝরায়। গ্রিন টি তে আছে কেটাচিন নামক একটি উপাদান যা শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
তবে কিভাবে কেটাচিন আপনার শরীরে কাজ করে সেটা যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন এই আর্টিকেল থেকে।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়মঃ
এক কথায় বলতে গেলে, ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে গ্রিন টি খাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অথবা সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে গ্রিন টি না খাওয়াই ভালো। কারণ সকালে শরীরে মেটাবলিজমের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। তখন গ্রিন টি-র কোন দরকার নেই। সন্ধ্যাবেলা মেটাবলিজমের মাত্রা কমে আসে। সেই সময়টায় গ্রিন টি খাওয়া জরুরি। সারাদিনে কখন কখন গ্রিন টি খেতে পারবেন তা জেনে নিন এখান থেকে।
১. সকালের জলখাবারের পরেঃ
সকালে গ্রিন টি খাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে নাশতার পরে। নাশতায় এমন খাবার খাবেন যাতে সারাদিনের এনার্জি শরীরে জমা থাকে। ব্রেকফাস্টের কিছুক্ষণ পরে গ্রিন টি খাবেন। অনেকে ঘুম থেকে সকালটা শুরু করেন খালি পেটে চা খেয়ে। এটা একদমই অনুচিত। খালি পেটে লিকার চা বা গ্রিন টি খেলে পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, আলসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই খালি পেটে শুধু জল ছাড়া আর কিছু চলবে না। জলখাবারে সকালে হেলদি খাবার এবং তারপরে গ্রিন টি খাবেন।
২. লাঞ্চের বা ডিনারের আগে বা পরেঃ
লাঞ্চের বা ডিনারের অন্তত ৪৫ মিনিট বা ১ ঘন্টা আগে কিংবা পরে গ্রিন টি খাবেন। এতে ভালো ফল পাবেন। খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি খেলে ফ্যাট তো ঝরেই না উল্টো বদহজম এবং অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। খাবারের ১ ঘন্টা আগে বা পরে গ্রিন টি পানে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। এতে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং দ্রুত ফ্যাট বার্ন হয়।
৩. শরীরচর্চার আগেঃ
শরীরচর্চা করে যতটুকু ওজন কমাতে পারবেন, শরীরচর্চার আগে গ্রিন টি খেলে তার চাইতে বেশি ওজন কমাতে পারবেন। ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট আগে গ্রিন টি খাবেন। এতে শরীরের অ্যাক্টিভিটি বাড়বে। চা খাওয়ার পরে ব্যায়াম তো করছেনই, তখন চা আর ওয়ার্কআউটের ডাবল অ্যাকশনে বাড়তি ওজন ও মেদ ঝরে যাবে। আর অল্প দিনে পাবেন আকর্ষণীয় ফিগার।
৪. রাতে ঘুমের আগেঃ
সকালে গ্রিন টি খাওয়া উচিত ব্রেকফাস্টের পরে, আর রাতে গ্রিন টি খাওয়া উচিত ঘুমানোর আগে। বিছানায় যাওয়ার ২ ঘন্টা আগে গ্রিন টি খাবেন। শরীরে চায়ের কার্যকারিতা অনেকক্ষণ থাকবে এবং ওজন কমবে। তবে যদি চা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে খাবার খান তাহলে চায়ের অ্যাক্টিভিটি কমে যাবে। তাই চেষ্টা করুন ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে গ্রিন টি খাওয়ার এবং পরবর্তীতে অন্য কিছু না খাওয়ার। চা খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমানো চলবে না। এমনকি ঘুম ঠেকাতে মাঝরাতে যদি গ্রিন টি খান তাতেও কোন কাজ হবে না।
গ্রিন টি কিভাবে বানাবেন?
শুধু জলে গ্রিন টি গুলিয়ে খাওয়ার চাইতে একটু বিশেষ ভাবে খেলে চায়ের কার্যকারিতা ভালো পাওয়া যাবে। গ্রিন টি বানানোর কিছু নিয়ম আছে। সঠিক নিয়মে না বানালে চায়ের পুষ্টি উপাদান গুলো ঠিকমতো কাজ করে না। জেনে নিন গ্রিন টি বানানোর নিয়ম।
- পরিমাণ মতো জল ফুটিয়ে তা স্টিল বা কাচের পাত্রে ঢেলে সামান্য ঠান্ডা করে নেবেন।
- এবার এতে ১ চা চামচ গ্রিন টি দিয়ে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন।
- চা পাতা পুরোপুরি ভিজে গেলে বুঝবেন এটি পানের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।
- চিনি একদমই মেশাবেন না। চিনির বদলে আদার রস, আদা কুচি, আমলকির রস, আমলা পাউডার, দারচিনি গুঁড়া, এলাচ গুঁড়া, গোলমরিচ, বা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে স্বাদ বাড়বে, উপকারিতাও পাবেন।
সতর্কতাঃ
ওজন কমানোর চক্করে হার্টের সমস্যা যাতে বেড়ে না যায় সেটাও কিন্তু খেয়ালে রাখবেন। গ্রিন টি তে বিদ্যমান ক্যাফেইন শরীরে স্ট্রেস হরমোন গুলোকে অ্যাক্টিভ করে। ফলে ব্লাড প্রেসার ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই হার্টের রোগীদের জন্য গ্রিন টি একদমই নিষেধ।
- দিনে তিনবারের বেশি গ্রিন টি খেলে ডিহাইড্রেশন হয়, শরীর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বেরিয়ে যায়। তাই প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়ার রুটিন দুইবার বা তিনবারে সীমাবদ্ধ রাখুন।
- গ্রিন টি রক্তাল্পতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই আগে থেকে রক্তাল্পতার সমস্যায় ভুগলে গ্রিন টি খাবেন না। তবে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা হলে খাবারের মধ্যে গ্রিন টি খাবেন। এতে শরীর খাবার থেকে আয়রণ শোষণের জন্য আগের তুলনায় বেশি শক্তি পাবে।