দিনভর চাঙ্গা থাকতে বা চটজলদি ক্লান্তি দূর করতে চায়ের তুলনা নেই। কফির চাইতে চা বেশি উপকারী কারণ এতে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম থাকে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ওজন কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত চা খেলে শরীর থাকে সুস্থ্য।
আপনি কি খুব ঘন ঘন চা খান? জানেন কী ধরণের চা আপনার খাওয়া উচিত? চা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বেশিরভাগ লোকের অজানা থাকে। তাই চা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো বজায় থাকে। আজকের লেখা চা-খোর থেকে শুরু করে চায়ের ধারে কাছে না যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য। জেনে নিন ঠিক কিভাবে চা খেলে বহুদিন সুস্থ্য থাকবেন।
ঘন ঘন চা খেলে কি কি চা খাওয়া উচিতঃ
১. লিকার চা
লিকার চা বা কালো চায়ে ক্যাটেচিনস, থিয়াফ্লাভিন, থিয়ারুবিজিনস উপস্থিত থাকে। এসব উপাদান হার্টের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে। আবার এগুলো দেহ থেকে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মানবদেহে পেটে কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা পরিপাকতন্ত্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কালো চায়ের পুষ্টি উপাদান এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ফলে আপনার দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
২. আদা চাঃ
সর্দি-কাশিতে আমরা আদা চা খেয়ে থাকি। এই চা গলায় শুধু সাময়িক আরাম দেয় না, সাথে হার্ট ও ব্লাডকেও সুস্থ রাখে। আদাতে বিদ্যমান ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যামিনো অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এবং ধমনীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়। রক্ত জমাট না বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাই প্রতিদিন গরম চায়ে আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. গ্রিন টিঃ
গ্রিন টি ওজন কমায়, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, কোলেস্টেরল কমায়, এবং হজমশক্তি উন্নত করে। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব পূরণ হবে। ফলে ত্বক ও চুল তার হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাবে। তবে যেহেতু গ্রিন টি ওয়েট রিডিউসার, সেহেতু এটি যতো কম খাওয়া যায় ততো ভালো। প্রতিদিন দুই কাপের বেশি গ্রিন টি খাওয়া উচিত না।
৪. ক্যামোমাইল টিঃ
ক্যামোমাইল নামক এক ধরণের ফুল থেকে তৈরি হয় এই ভেষজ চা। এই চায়ে কোনরকম ক্ষতিকর ক্যাফেইন থাকে না। অনিদ্রার সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য ক্যামোমাইল টি আদর্শ একটি চিকিৎসা। তবে গর্ভাবস্থায় এই চা বিপদজনক। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ক্যামোমাইলটি দ্রুত কাজ করে। ঠান্ডা, শুষ্ক, এবং ছায়াযুক্ত স্থানে কাঁচের জারে এই চা সংরক্ষণ করতে হয়।
৫. জবা ফুলের চাঃ
এই চায়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সম্পূর্ণ ক্যাফেইনমুক্ত এই চা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। ঠান্ডা বা গরম যেমন খুশী যতো খুশী ততো বার খাওয়া যায় জবা ফুলের চা। স্বাদে টক বলে এই চা কে আপনি জুস হিসেবেও খেতে পারেন। হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টেরল, বদহজম, লিভার ডিজিজ, ক্যান্সার, অ্যাংজাইটি কমাতে জবা ফুলের চায়ের জুড়ি নেই।
৬. পুদিনার চাঃ
রান্নায় পুদিনা পুষ্টি সরবরাহ করে এবং সুগন্ধির কাজ করে। এই পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায় বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পুদিনা পাতার মেন্থল শরীরকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি রোগবালাই দমন করতে সাহায্য করে। ৩-৪টি পুদিনা পাতা এক কাপ চায়ে দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন, এরপরে খান। কথা দিচ্ছি উপকার পাবেন।
চা খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
১. বেশি চা একদম নাঃ
চা খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে চা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। চা খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হচ্ছে দৈনিক ৪ থেকে ৫ কাপ। তবে পরামর্শ রইলো প্রতিদিন ৩ কাপের বেশি চা না খাওয়ার। বেশি চা খেলে রাতে সময় মতো ঘুমাতে সমস্যা হবে।
২. দুধ চা থেকে দূরেঃ
দুধ চা অম্বলের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই দুধ চায়ের বদলে লিকার চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। চিনি কিন্তু একদম দেয়া যাবে না। তবে তেঁতো ও কষকষে স্বাদ একেবারে সহ্য করতে না পারলে ২ চা চামচ চিনি দিতে পারেন চায়ে। এর বেশি একদমই নয়। চিনি দেওয়া চা খাওয়ার পরে মুখে টক লাগলে পরবর্তীতে আর চিনি দেবেন না।
৩. চায়ের সাথে ‘টা’ কি খাবেনঃ
চায়ের সাথে ‘টা’, অর্থাৎ হালকা স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাস যাদের আছে তারা সাবধান হয়ে যান। চায়ের সাথে বিস্কুট বা ভাজাপোড়া খেলে সেটা পেটে গিয়ে বিক্রিয়া করতে পারে। যদি ‘টা’ খেতে মন চায় তাহলে অল্প পরিমাণে মুড়ি বা ছোলাভাজা খেতে পারেন।
৪. বেড টি রে মানাঃ
বেড টি দিয়ে যাদের দিন শুরু হয়, তাদের শরীরে এই রুটিন তেমন একটা সমস্যা তৈরি করে না। তবে আধুনিক বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। খালি পেটে চা খাওয়ার চাইতে কিছুটা উদরপূর্তি করে চা খাওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠে আগে সামান্য লেবুর রস বা লবণ মেশানো জল খাবেন এক থেকে দুই গ্লাস। এতে পেট পরিষ্কার হবে। তারপর খাবেন যেকোন ফল অথবা ভেজানো ছোলা বা বাদাম। এটি আপনার মেটাবলিজমকে সজাগ করবে। এরপরে চা খাবেন। এতো ঝামেলা করতে না চাইলে ব্রেকফাস্টের পরে চা খান।
৫. অর্গ্যানিক চাঃ
চা পাতায় থাকে ক্যাটেচিন নামক এক ধরণের উপকারী উপাদান, যা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে নষ্ট হয়। তাই চা যতো কম প্রক্রিয়াজাত হবে ততো ক্যাটেচিন অক্ষুণ্ণ থাকবে। সাধারণত চা পাতার চাইতে গ্রিন টি বেশি উপকারী। কারণ গ্রিন টি কম প্রক্রিয়াজাত থাকে। বাজারের চা পাতায় কৃত্রিম সুইটেনার ও প্রিজারভেটিভ থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই সম্ভব হলে অর্গ্যানিক বা হাতে বানানো চা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬. খাওয়ার পরেই চা নয়ঃ
অনেকে আছে প্রতিবার খাবারের পরে চা খেয়ে থাকেন। এই রুটিন সত্যিকার অর্থে বিপদজনক না। বিপদ হবে তখনই, যখন আপনি খাবারে প্রোটিন আইটেম খেয়েছেন এবং খাওয়ার ঠিক পরেই চা খেয়েছেন। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরপরই চা খেলে মারাত্মক বদহজম হয় এবং শরীর আয়রণ শোষণে বাধা পায়। বদহজমে ভোগার কারণে শরীর প্রয়োজনীয় মিনারেল ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে অপুষ্টি ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবারে যদি মাছ, মাংস, ডিমের মতো উচ্চ প্রোটিন থাকে, সেক্ষেত্রে খাওয়ার অন্তত এক থেকে দুই ঘন্টা পরে চা খাবেন। এক ঘন্টার আগে ভুলেও চা খেতে যাবেন না।