ভোজন রসিকরা যে শুধু খাবারের প্রেমী হয় তা কিন্তু নয়। তাদের ভালোবাসার তালিকায় হরেক রকমের সুস্বাদু পানীয়ও নিজস্ব জায়গা করে নেয়। এমনি এক পানীয় হলো বোরহানি। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি মানবদেহের জন্যও অনেক কার্যকরি। বোরহানি তো অনেকেই পান করে থাকি তবে এর পরিচয় কজন জানি? চলুন তবে আজ বোরহানির সাথে নতুন করে পরিচিত হওয়া যাক। সেই সাথে এটা বানানোর ট্রাডিশনাল রেসিপিতো থাকবেই।
বোরহানি আসলে কি?
বোরহানি হলো এক ধরনের পানীয়। যা তৈরির প্রধান উপাদান হলো টক দই। এটি মূলত বাংলাদেশীয় ঐতিহ্যবাহী এক পানীয়। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এটির প্রচলন বেশি। বিয়ের অনুষ্ঠান হোক বা অন্য কোন আয়োজন খাবারের সাথে পানীয় হিসাবে বোরহানি তো থাকতেই হবে। পানীয় হিসাবে এর স্বাদ অতুলনীয়। তবে এটি যে খেতেই শুধু মজাদার তা কিন্তু নয়। এটি খেতে সুস্বাদু হওয়ার সাথে সাথে এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারি। বোরহানির রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি গুণাগুণ। যা আমাদের স্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। যা আপনি অন্যান্য কোমল পানীয়তে কখনোই পাবেন না। তাইতো বাংলাদেশীয় পানীয় হওয়া সত্তেও বিশ্বের প্রায় সব স্থানেই আপনি খোঁজ করলে বোরহানির সন্ধান পেয়ে যাবেন।
বোরহানি বানানোর ট্রাডিশনাল রেসিপিঃ
বোরহানি যেহেতু বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পানীয় তাই এটির আসল রেসিপি বা ট্রাডিশনাল ভাবে বানানোর পদ্ধতি জানা দরকার। কারন আজকাল নানা ভাবে এটি বানানোর কমবেশি প্রয়াস অনেকেই করেন। তাই একদম অথেনটিক রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
যা যা লাগবেঃ
- টক দই – ১ কাপ
- পুদিনা পাতার পেস্ট – ৩ টেবিল চামচ
- কাঁচা লঙ্কা – ২টি ( তবে স্বাদ অনুযায়ী বাড়িয়ে নেওয়া যাবে)
- ধনেপাতা পেস্ট – ৩ টেবিল চামচ
- চিনি – ৪ চা চামচ
- লবণ – ১/২ চা চামচ
- ভাজা জিরার গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- বিট লবণ – ১ চা চামচ
- জল – পরিমান মতো
বোরহানি কিভাবে বানাবেন?
১. প্রথমে একটি পাত্র নিন এবং তাতে কিছু ধনে পাতা ও পুদিনা পাতা নিয়ে নিন। এরপর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে করে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। পুদিনা পাতা ও ধনেপাতা এই পরিমানে নিতে হবে যাতে করে প্রত্যেকটি ৩ টেবিল চামচ পরিমাণে হয়। পেস্ট করার সময় দরকার হলে কিছুটা জল যোগ করা যেতে পারে। সেই সাথে সাথে এগুলোর মধ্যে ২টা কাঁচা লঙ্কা ও দিয়ে দিতে হবে। একটা মিহি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। পেস্ট হয়ে গেলে তুলে একটি বাটিতে করে একটা পাশে রেখে দিতে হবে।
২. এরপর আবার অন্য একটি পাত্র নিয়ে নিন। এতে একে একে সব শুকনো উপকরণ, যেমন লবণ, চিনি, ধনে গুঁড়ো, ভাজা জিরার গুঁড়ো, বিট লবণ এই সব উপকরণ এক সাথে নিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণ এক পাশে রেখে দিন।
৩. এবার আসা যাক মূল পর্বে। একটি বড় পাত্র নিয়ে নিন। তার মধ্যে এক কাপ টক দই ঢেলে দিন। কাঁটা চামচ বা হ্যান্ড হুইক্স দিয়ে ভালো করে দইটি ফেটিয়ে নিতে হবে। এটা একটু সময় নিয়ে করতে হবে। দইটি সর্ম্পূণ মসৃণ করে ফেটিয়ে নিতে হবে। দই ফেটানো হয়ে গেলে এতে আগে থেকে করে রাখা ধনেপাতা ও পুদিনা পাতার পেস্টটি দিয়ে দিতে হবে এবং আবার ফেটিয়ে নিতে হবে। এগুলো মিক্স হয়ে গেলে এবার এই মিশ্রণের সাথে করে রাখা মসলা যোগ করে দিতে হবে। আবারো সব উপকরন ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
৪. তারপর পরিমান মতো জল দিতে হবে। জল যে যার পছন্দ অনুযায়ী দিতে পারবে। কেউ ঘন পছন্দ করলে সে জল কম যোগ করবে। আবার কেউ কিছুটা পাতলা পছন্দ করলে সেক্ষেত্রে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারবে। জল দেওয়া হয়ে গেলে সব কিছু একসাথে করে ভালো করে বেশ কিছু সময় ফেটিয়ে নিতে হবে।
এই পর্যায় একটু টেস্ট করে নিতে পারেন কিছু কম বেশি আছে কিনা। যদি হয় তাহলে তা যোগ করে ব্যালেন্স করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার টেস্টি টেস্টি বোরহানি। আবার কেউ চাইলে সর্ম্পূণ কাজটি ব্লেন্ডারে নিয়েও করতে পারবে। তখন জলের পরিমাণ কম দিতে হবে। এরপর পরিবেশনের আগে কিছু সময় ফ্রিজের নর্মালে রেখে দিতে পারেন। কেননা বোরহানির স্বাদ আরো বেড়ে যায় যদি তা ঠান্ডা ঠান্ডা খাওয়া হয়।
৫. পরিবেশনের সময় যে গ্লাসে পরিবেশন করবেন তার মধ্যে কয়েক টুকরা বরফ দিয়ে দিবেন। সেই সাথে বোরহানির উপরে তাজা একটি পুদিনা পাতা দিতে পারেন। এতে করে দেখতেও খুব দারুন লাগবে।
বিশেষ টিপসঃ
যদি কেউ ঝাল বেশি খেতে পছন্দ করে থাকে তাহলে কাঁচা লঙ্কার পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারেন।
চাইলে এতে গোলমরিচ সামান্য দিয়ে দিতে পারেন। এটা অপ্সানাল। গোলমরিচের পরিমান বেশি দেবেন না। কেননা গোল মরিচের ঝালটা খাওয়ার সাথে সাথে বুঝাতে পারা যায় না। কিছু সময় গেলে এর স্বাদ পাওয়া যায়।