চিকেন কারি, রেস্তোরাঁ বা যে-কোনও অনুষ্ঠানেই জনপ্রিয় চিকেনের এই পদ। চিকেন কারি বানানো খুব একটা কঠিন নয়, তাছাড়া এই পদটি খেতে মুখরোচক হয় বলে সকলেই চিকেন কারি খেতে পছন্দ করেন। তবে এমনিতে রান্না করা সহজ হলেও কিছু দিকে নজর না দিলে এই সহজ রেসিপিটিও কিন্তু হয়ে যেতে পারে ‘ডিজাস্টার’! কী কী ভুল সাধারণত সকলে করে থাকেন চিকেন কারি বানানোর সময়? কীভাবেই বা সেগুলি শুধরে আপনি বানাতে পারেন সুস্বাদু চিকেন কারি? রইল তার হদিশ।
১. পেঁয়াজ, টমেটো বড় বড় করে কাটাঃ
কখনই পেঁয়াজ টমেটো বড় বড় করে কেটে চিকেন কারিতে দেবেন না। এতে রান্নার স্বাদ ভালো হয় না। আর দেখতেও বাজে লাগে। চিকেন কারি সহ অন্যান্য যে-কোনও কারিতেই পেঁয়াজ, টমেটোকে গ্রেভি ঘন করতে ব্যবহার করা হয়। তাই পেঁয়াজ ও টমেটো একরকমভাবে ছোট-ছোট টুকরো বা স্লাইস করে কাটুন। এতে গ্রেভির টেক্সচারটিও একরকম আসবে এবং গ্রেভি ঘনও হবে।
খুব বড়-বড় টুকরো করে পেঁয়াজ বা টমেটো কাটলে আবার সেগুলি মুখে পড়ে, ফলে গ্রেভি খেতেও ভাল লাগে না। তাই মিহি করে পেঁয়াজ কাটুন। দরকার হলে বেটে নিতেও পারেন। টমেটোর পিউরি ব্যবহার করুন। আর যদি ঘনর বদলে পাতলা গ্রেভি দরকার হয়? তাহলে যে-কোনও সময় জল ঢেলে নিলেই হল!
২. মশলা দেওয়ার সময় ঠিক না রাখাঃ
চিকেন কারি বানাতে গেলে অনেকেই জানেন না যে পরপর কোন-কোন উপাদান দিতে হবে। এটি না জানলে কিন্তু স্বাদ খুলবেই না। অনেকেই না জেনে মশলা সঠিক সময়ে না দেওয়ার ভুল করে থাকেন। ফলে কারির স্বাদ খারাপ হয়ে যায়।
প্রথমে তেল গরম করে গোটা মশলা ফোড়ন দিন। তারপর গন্ধ বেরতে শুরু করলে পেঁয়াজ, দিয়ে কষে গুঁড়ো মশলা, নুন, আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কা দিন। খেয়াল রাখবেন, ফোড়ন যেন কোনওভাবেই পুড়ে না যায়। এটি হলে গোটা রান্নার স্বাদই কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে। গুঁড়ো মশলা দেওয়ার পরও সেটি যাতে পুড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেই বুঝে আঁচ বাড়ান বা কমান। তবে কষার গোটা প্রক্রিয়াটি মাঝারি আঁচে করাই ভাল।
৩. গরম মশলা গুঁড়ো দেওয়ার পারফেক্ট টাইম খেয়াল না রাখাঃ
গরম মশলা ঠিক সময় না দেওয়ার ভুল অনেকেই করেন চিকেন কারি বানানোর সময়।
ফ্লেভারফুল চিকেন কারি রান্নার এটি কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গরম মশলা গুঁড়োর ফ্লেভার খুব ডেলিকেট হয়। তাই রান্নার শুরুতে বা কষানোর সময় গরম মশলা গুঁড়ো দিলে তার গন্ধ ও স্বাদ, দু’টিই চলে যায়। তাই রান্নায় টমেটো পিউরি দিয়ে পুরোপুরি কষা হয়ে গেলে গরম মশলা গুঁড়ো দিন। রান্নার শেষেও উপর থেকে গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে স্বাদ বজায় থাকবে।
৪. তাড়াহুড়ো করাঃ
চিকেন কারি বানানোর সময় কিন্তু তাড়াহুড়ো একেবারেই করবেন না। যে-কোনও কারি বানাতেই একটু সময় লাগে। প্রতিটা ধাপে মশলা দিয়ে ভাল করে না কষলে সেটি মোটেও ভাল খেতে হয় না। তাই ধৈর্য ধরুন। মাঝারি আঁচে আস্তে-আস্তে মশলা কষুন। প্রথমে মশলা কষিয়ে তারপর চিকেন দিন। আবার ঢাকা দিয়ে ঢিমে আঁচে কষতে থাকুন। দেখবেন, কষা হলেই উপরে তেল ভাসতে শুরু করেছে। এই তেল ভাসাই কিন্তু ভাল চিকেন কারির লক্ষণ।
৫. গন্ধ না শুঁকেই রান্না করা মেশিনের মতঃ
রান্নার সময় অনেকেই গন্ধ নিয়ে দেখেন না যে পদটি ঠিক আছে কিনা। এটা খুবই কমন একটা ভুল।
আজ্ঞে আপনি ওস্তাদ শেফ না-ই হতে পারেন। কিন্তু কোন রান্নার স্বাদ-গন্ধ কেমন খোলতাই হচ্ছে, সেটি কিন্তু রান্নার মাঝে গন্ধ না শুঁকলে একেবারেই বুঝতে পারবেন না। প্রত্যেকটা উপকরণ যোগ করার পর মশলার গন্ধ নিন। কোনও মশলার গন্ধ বেশি হয়ে গিয়েছে কিনা, বা কোনও মশলা পুড়ে গিয়েছে কিনা, সেটি এই গন্ধ শুঁকেই আপনি বুঝতে পারবেন।
৬. নুনের আন্দাজ সঠিক না রাখাঃ
নুন বেশি বা কম হলে চিকেন কারির স্বাদ মাটি হয়ে যায়। এই ভুল অনেকেই কমবেশি করে থাকেন। চিকেন কারি বানানোর সময় মশলায় ঠিক কতটা নুন দিলে সেটি একেবারে পারফেক্ট হবে, সেটি অনেকসময়েই আন্দাজ করা যায় না। ফলে কখনও দেখা যায় রান্নায় নুন বেশি হয়ে গিয়েছে, আবার কখনও দেখা যায়, নুন একেবারেই হয়নি। নুন কম হলে সেটি রান্নার শেষে অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া যায়। কিন্তু নুন বেশি হলে? সেক্ষেত্রে একটি কাঁচা খোসা ছাড়ানো আলুর টুকরো গ্রেভিতে ফেলে দিন এবং কিছুক্ষণ রাখুন। দেখবেন, এই আলুই রান্নার বাড়তি নুন শুষে নিয়েছে!
৭. পেঁয়াজ সঠিক মাত্রায় না ভাজাঃ
পেঁয়াজ সঠিক মাত্রায় না ভাজার ভুল নিমেষে খারাপ করে দিতে পারে চিকেন কারির টেস্ট। এই পেঁয়াজই কিন্তু আপনার চিকেন কারির গ্রেভির মূল উপাদান। তাই সেটি যথাযথভাবে ভাজা আবশ্যিক। গ্রেভির টেক্সচার কীরকম হবে, তার জন্য পেঁয়াজ কুচি করে কেটে, বেটে বা স্লাইস করে নিতে পারেন। তবে তারপর যদি পেঁয়াজ ভাল করে না ভাজেন বা অতিরিক্ত ভেজে ফেলেন, তা কিন্তু আপনার সাধের চিকেন কারির বারোটা বাজিয়ে দেবে। তাই সেদিকে বিশেষ মন দিন। পেঁয়াজ ভাজার সময় কড়া হাই ফ্লেমে না রেখে মাঝারি আঁচে রাখুন।
এবার থেকে চিকেন কারি বানানোর সময় খেয়াল রাখুন এই ৭টি বিষয়। আর বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু চিকেন কারি।