ধনেপাতা খাবার স্বাদ যে দ্বিগুণ করে দিতে পারে নিমেষে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাথে সাথে এই ধনেপাতা আশ্চর্যজনক উপকারি শরীরের জন্যও। ধনেপাতা গাছের সমস্ত অংশই ভোজ্য তবে তাজা সুগন্ধযুক্ত পাতা এবং শুকনো বীজ আমাদের ভারতীয় রেসিপিগুলিতে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। তাই নানা ভাবে এর গুনাগুণের প্রভাব আমাদের উপর পড়ে। যা এত দিন ছিল অজানা। আজ জেনে নেওয়া যাক ধনেপাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
ধনেপাতায় পুষ্টির গুন কি কি আছেঃ
ধনেপাতা হল ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস। এই পুষ্টির পাশাপাশি ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যেমন ডায়েটারি ফাইবার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে, ফসফরাস ইত্যাদি।
তাছাড়া ধনেপাতা হল ১১টি অপরিহার্য তেল সমন্বিত একটি বিস্ময়কর ভেষজ। যার মধ্যে খুব কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, এতে প্রচুর পরিমাণে লিনোলিক অ্যাসিড রয়েছে যা অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এনআইএন অনুসারে, ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় ৩১ কিলোক্যালরি, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.৭ গ্রাম ফ্যাট, ১৪৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫.৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ৪.৭ গ্রাম ফাইবার, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৬৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন রয়েছে।
ধনেপাতার শরীরের জন্য উপকারিতাঃ
১. ধনেপাতা চোখের জন্য খুবই ভালোঃ
আমরা সকলেই আমাদের দিদা বা ঠাকুমার কাছ থেকে শুনেছি সুস্থ চোখের জন্য খাবারে ধনেপাতা অন্তর্ভুক্ত করার কথা। এর কারণ হল ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েড। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ধনেপাতার প্রতিদিনের ব্যবহার বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এআরএমডি) বিলম্বিত করতে এবং কনজেক্টিভাইটিস নিরাময় করতে সহায়তা করে।
২. ইমিউনিটি বাড়ায়ঃ
আজকাল ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য আমরা কত কি না করি। তবে রোজ যদি ৫০ গ্রাম করে ধনেপাতা খাবারে রাখা যায় তাহলে ইমিউনিটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ধনেপাতা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। তাছাড়া ভিটামিন এ রয়েছে এতে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে উন্নত করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকাকে কার্যকরীভাবে কাজ করতে এবং আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
৩. ধনেপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ
ধনেপাতার উজ্জ্বল সবুজ রঙ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণ। যা এনজাইমের কার্যকলাপকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এইভাবে, এটি ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। প্রতিটি খাবারে ধনেপাতা যোগ করা বা প্রতিদিন ধনে-মিশ্রিত জল পান করা উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য উপকারী।
৪. খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করেঃ
বর্তমান জীবনধারায় প্রতি তৃতীয় ব্যক্তি উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন। ধনেপাতার নিয়মিত সেবন এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমাতে এবং এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. হাড়ের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করতে পারেঃ
প্রচুর পরিমাণে হাড় সমৃদ্ধ খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস ধনেপাতায় রয়েছে। ধনেপাতার প্রদাহ-বিরোধী কার্যকারিতা হাড়কে আর্থ্রাইটিসজনিত ব্যথা থেকেও রক্ষা করে।
৬. অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে ধনেপাতাঃ
ধনেপাতায় ভালো পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এটি পেট খারাপ, ডায়রিয়া, অন্ত্রের খিঁচুনি, গ্যাস বা বমি বমি ভাবের মতো বিভিন্ন হজম সমস্যার জন্যও গবেষণা করা হচ্ছে।
৭. ত্বকের যত্ন নিতে ধনেপাতা উপকারিঃ
আয়রন, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ এর পাওয়ার হাউস ধনেপাতা। এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অতিরিক্ত তেল শুষে নেওয়ার ক্ষমতার কারণে ধনেপাতা তৈলাক্ত ত্বকের প্রতিকার হিসেবেও কাজ করে। এটি একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট যা ত্বককে প্রশমিত করতে এবং ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।
৮. হার্টের স্বাস্থ্য বাড়াতে পারেঃ
ধনেপাতার নির্যাস ল্যাবে পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে এটি মানব শরীর থেকে অতিরিক্ত জল এবং সোডিয়াম অপসারণ করতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং যেমন আগে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে পারে। এই কারণগুলি একাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।