রবিবারের দুপুরে জমিয়ে মাংস রান্না করবেন বলে ঠিক করেছেন। কিন্তু তার আগে রসুনের খোসা ছাড়াতেই নাজেহাল হয়ে গেলেন আপনি! সত্যি, রান্না করবার আগে রসুনের খোসা ছাড়ানোর নামে গায়ে জ্বর আসে না, এমন মানুষ বোধহয় বিরল। ফলে বাধ্য হয়েই অনেকে শর্টকাটে সারার জন্যে দোকান থেকে রেডিমেড রসুনের পেস্ট কিনে আনেন।
রসুনের পেস্ট দিয়ে রান্না করলে রান্নার ঝামেলা অনেকাংশে কমলেও অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, কেনা রসুনের পেস্টে রান্নার স্বাদ কতটা খোলে। কেনা রসুনের পেস্টে কিন্তু টাটকা ছাড়ানো রসুনের ‘ফ্রেশনেস’ থাকে না বললেই চলে। এছাড়া কেনা পেস্টে নানারকম কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ অনেকসময় থাকে বলে এগুলি বেশি খাওয়াও ঠিক নয়।
তবে রসুনের খোসা ছাড়ানোর নামে গায়ে জ্বর আসার দিন শেষ। আজকের লেখায় রইল চটজলদি ও সহজে রসুনের খোসা ছাড়ানোর সবচেয়ে আরামদায়ক ১০টি কৌশলের হদিশ।
১. রসুন দেখে কিনুনঃ
সহজে রসুনের খোসা ছাড়ানোর এটা প্রথম ধাপ। সাধারণত যে-রসুনের কোয়াগুলি খানিক বড় হয়, সেগুলির খোসাও খানিক মোটা হয়, ফলে সেগুলি ছাড়ানোও অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। তাই বাজার থেকে কেনার সময়েই বড় কোয়ার রসুন বেছে কিনুন। খেয়াল রাখবেন, রসুনের কোয়াগুলি যেন শুকনো না থাকে, এবং খোসা যেন কুঁচকে না থাকে।
২. জল ভিজিয়ে খোসা ছাড়ানঃ
এটি কিন্তু অত্যন্ত সহজ একটি টিপস। একটি বাটিতে হালকা গরম জল নিয়ে রসুনের কোয়াগুলি তার মধ্যে মিনিট দশেক ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দেখবেন জল থেকে তুলে হাত দিয়ে সামান্য ঘষলেই খুব সহজে খোসা ছাড়িয়ে ফেলা যাচ্ছে। তাছাড়া রসুন ছাড়ানোর সময় হাত আঠা আঠা হয়ে যায়। রসুনগুলি আগে জলে ভিজিয়ে রাখলে সেই সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
৩. গরম করে নিনঃ
একসঙ্গে অনেক রসুনের খোসা ছাড়াতে হলে এই পদ্ধতিটি ট্রাই করতে পারেন। চাটু বা কোনও ফ্রাই প্যানে রসুনের কোয়াগুলি নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ধরে শুকনো খোলায় নেড়ে নিন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন, খোসাগুলি শুকনো-শুকনো হয়ে যাচ্ছে। এরপর রসুনগুলি ঠান্ডা করে নিলে দেখবেন, সহজেই খোসা ছাড়িয়ে ফেলা যাচ্ছে।
৪. ক্রাশ করে খোসা ছাড়ানঃ
এই সহজ টোটকাটির কথা অনেকেই জানেন না। খোসা ছাড়ানোর আগে রসুনের কোয়াগুলি নিয়ে একে-একে ছুরির চ্যাপটা দিকটা দিয়ে ক্রাশ করে নিন। এই পদ্ধতির সাহায্যে রসুনের খোসা ছাড়ালে দেখবেন কী সহজে চটজলদি খোসা ছাড়ানো যাচ্ছে।
৫. মাইক্রোওয়েভে গরম করেঃ
চাটুর বদলে অনেকে রসুনের খোসা ছাড়ানোর জন্য আগে কোয়াগুলিকে মাইক্রোওয়েভেও গরম করে নেন। এর জন্যে রসুনের কোয়াগুলিকে ৩০ সেকেন্ড থেকে একমিনিট মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিলেই দেখবেন খোসা ছাড়ানো কত সহজ হয়ে যাচ্ছে!
৬. মাইক্রোওয়েভের অন্য পদ্ধতিঃ
মাইক্রোওয়েভে গরম করে রসুন ছাড়ানোর আর একটি উপায় রয়েছে। রসুনের কোয়াগুলিকে প্রথমে ভিজে কোনও পেপার টাওয়েলের মধ্যে মুড়ে ১৫-২০ সেকেন্ড মাইক্রোওয়েভ ‘হাই’ করে গরম করে নিন। তারপর বের করে পেপার টাওয়েলের সঙ্গে রসুনের কোয়াগুলিকে হালকা করে ঘষে নিন। এতেও আপনি দ্রুত একসঙ্গে অনেক খোসা ছাড়াতে পারবেন।
৭. প্লাস্টিকের কৌটোয় নিয়ে ঝাঁকানঃ
অনেকসময় রসুনের কোয়াগুলিকে আলাদা করার পর একটি প্লাস্টিকের কৌটোয় নিয়ে কৌটোটির ঢাকা বন্ধ করে দিয়ে কৌটোটিকে জোরে খানিকক্ষণ ঝাঁকালেই দেখবেন রসুনের কোয়াগুলি ছেড়ে-ছেড়ে আসছে। এরপর কৌটো থেকে কোয়াগুলিকে বার করে নিলেই নিমেষে খোসা ছাড়ানো হয়ে যাবে।
৮. রসুন আগে কেটে নিনঃ
আজ্ঞে হ্যাঁ, রসুনের খোসা ছাড়ানোর এটি একটি দারুণ উপায়। রসুনের কোয়াগুলিকে ছুরি দিয়ে প্রথমেই দু’টুকরো করে নিন। তারপর খোসা ছাড়িয়ে ফেললে দেখবেন সুবিধা হচ্ছে।
৯. কোয়ার মাথার অংশটি কেটে ফেলুনঃ
প্রথমেই ছুরি দিয়ে কোয়ার মাথার অংশটি কেটে ফেলুন। তারপর সেখান দিয়ে খোসাটি ছাড়ানোর চেষ্টা করে দেখুন, দেখবেন সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি রসুনের খোসা ছাড়িয়ে ফেলতে পারছেন।
১০. গোটা রসুনের খোসা একসঙ্গে ছাড়ানঃ
একসঙ্গে অনেক রসুন যদি আপনার রান্নায় লাগে, তাহলে এই পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। একটি গোটা রসুন নিয়ে তার কোয়াগুলিকে না ছাড়িয়ে প্রথমে ছুরি দিয়ে সেটিকে মাঝ বরাবর দু’টুকরো করে কেটে নিন। তারপর এক-এক করে কোয়াগুলিকে ছাড়িয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন। এইভাবেও আপনি খুব দ্রুত একসঙ্গে অনেক রসুন ছাড়াতে পারবেন।
রসুনের খোসা ছাড়িয়ে ফেলার পর জিপলক ব্যাগে করে ফ্রিজে স্টোর করে রাখলে রসুন ছাড়ানো রসুন কিন্তু ৩-৫ দিন পর্যন্ত ভাল থাকে। ফলে এবার রসুনের খোসা ছাড়ান চটজলদি আর রান্না করুন টেনশন ফ্রি হয়ে।