সেই ১৯১৩ সালের পর থেকে মানুষ রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা শুরু করেছে। কিন্তু আজও অসর্তকতার দরুন রেফ্রিজারেটর-এ রাখা খাবার যে এর পুষ্টিগুণাগুণ হারায় এটা কজনে গবেষণা করেছেন? এমন অনেক খাবারই আছে যা বাইরের পরিবেশে বেশ ভালো থাকে। তাই সেগুলো রেফ্রিজারেটর-এ রেখে কেনো অযথা কষ্ট করবেন?
আমরা বাড়িতে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ এইজন্যই আনি যেনো এক মাসের বাজার রেখে রোজ রোজ বাজার করার ঝামেলা পোহাতে না হয়। কারণ আমার কাছে বাজার করার মতো ঝামেলাপূর্ণ কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। বাড়িতে এই যন্ত্রটি না থাকলে একেবারেই চলবে না।কিন্তু আপনি কি জানেন, এমন অনেক খাবার আছে, যা ফ্রিজে রাখা অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে? সখ করে বাজার থেকে যে শাক-সবজিগুলো আনবেন তার পুষ্টি গুণাগুণ সেগুলোর কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এখন সক্কলেই প্রশ্ন করবে তাহলে কি উপায়? একটু ধৈর্য্য ধরুন, মনোযোগ দিয়ে কথা শুনুন; ধাপে ধাপে সহজে বিস্তারিত বলছি।
১.আলুঃ
খাবারের স্বাদ বাড়াতে আলু তো আপনার চাই-ই চাই। আলু যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। রেফ্রিজারেটরে রেখে আপনার প্রিয় সবজি আলুর পুষ্টিগুণ নষ্ট করবেন না। আলুর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাহিরের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে। এভাবেই আপনি কয়েক সপ্তাহ সংরক্ষণ করতে পারবেন, কোন চিন্তা নেই। ফ্রিজে রাখলে এর স্বাদ, গুনাগুণ দুই-ই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর স্বাদ ঠিক রাখতে বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে রাখুন। ঠান্ডা পরিবেশ আলুতে থাকা স্টার্চকে ভেঙ্গে ফেলে, ফলে এর স্বাদ মিষ্টি হয়ে যায়।
২.টমটোঃ
বাজার থেকে লাল লাল টমেটোগুলো এনেই রেফ্রিজারেটরে ঢুকিয়ে দেই। এ কাজটি মোটেই উচিত নয়। টমেটো স্বাভাবিক বাতাসের সংস্পশেই ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে জলদি নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজের ঠাণ্ডায় এটি জলদি নরম হয়ে গিয়ে পচে যায়। বাইরে রাখুন দেখবেন বেশিদিন টাটকা থাকছে।
৩.কফিঃ
ক্লান্তি দূর করতে কফি তো খাবেনই। আসলে ব্যাপার হলো, কফির সাথে আর্দ্রতার কিছুটা ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে এবং কিন্তু সে ভালোবাসা মধুর নয়- কফি আর্দ্রতাকে আকর্ষণ করে, কিন্তু আর্দ্রতা আপনার কফির জন্য খুব খারাপ। সমস্যাটি এই নয় যে আপনার রেফ্রিজারেটরে (বা ফ্রিজার) আর্দ্রতা রয়েছে, বার বার রেফ্রিজারেটরের ভিতরে এবং বাইরে রাখার কারণে তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে কফি ফলে দ্রবীভূত হয়। এটি সেই আর্দ্রতা যা কফির খুব অনুত্তম হবে এবং এটি কফির আসল স্বাদকে হ্রাস করতে পারে। তখন কফি খাওয়া মজাই পাবেন না। তাই কফি সংরক্ষণ ও বেশিদিন ভালো রেফ্রিজারেটরে না রেখে ভালো এয়ার টাইট জার ব্যবহার করুন।
৪. পেঁয়াজঃ
পেঁয়াজ রান্নার জন্য অতীব জরুরী মশলা। পেঁয়াজ কাটার সময় বোঝা যায় এর ঝাঁঝ কতটা তীব্র। ঠিক কী কারণে পেঁয়াজ অশ্রু উৎপন্ন করে তা বোঝা সহজ নয়, এতে সমস্ত বিজ্ঞান জড়িত। তবে সংক্ষেপে, এটি একটি পেঁয়াজে উপস্থিত রাসায়নিকের পদার্থের কারণে। পেঁয়াজে সালফোক্সাইড (sulfoxides) নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে এবং যখন সেগুলি কেটে ফেলা হয়, তখন তাদের কোষের দেয়ালগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে সালফক্সাইডগুলি (sulfoxides) ভয়ঙ্কর গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
এই গ্যাসই আপনার চোখের সংস্পর্শে আসে। আপনার চোখের অশ্রু নালী এই গ্যাস থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে অশ্রু উৎপাদন দ্বারা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাই বিনা মেঘে বৃষ্টিপাত, অর্থাৎ কান্নাকাটি শুরু হয়। তাই এখন ভাবুন যদি এই গ্যাস রেফ্রিজারেটরে রাখা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশে তবে কি কি সমস্যা হতে পারে? প্রথমত যে বাজে অভিজ্ঞতা হয় তা হলো এর বাজে দূর্গন্ধ। এটি অন্যান্য খাবারের স্বাদও বিনষ্ট করে।
৫.কলাঃ
কলা ঘরের তাপমাত্রায় স্বাভাবিকভাবে পাকবে এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই, ছেড়ে দিন। রেফ্রিজারেটরের আর্দ্র পরিবেশে কলা দ্রুত পচে যায়। এছাড়াও, ঠান্ডা তাপমাত্রা কেবল তাদের পাকাতে ধীর করে দেবে না বরং ফ্রিজের আর্দ্রতা পচন প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করবে।
৬.আদাঃ
আদা রেফ্রিজারেটরে বড় টুকরো করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তবে এগুলিকে এয়ার-টাইট (কাচের জার হলে সবচেয়ে ভালো হয়) পাত্রে রাখতে ভুলবেন না, ফলে এর ঝাঁঝ অন্য খাবারের সাথে মিশতে পারবে না। আদাকে তাজা রাখতে, সংরক্ষণের সময় খোসা ত্বকে রেখে দিন এবং আপনার খাবারে এটি যোগ করার আগে আদা খোসা ছাড়ার দরকার নেই – শুধু এটিকে ধুয়ে দিন।
৭.মধুঃ
মধু সরাসরি প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে পিওর খাবার। এতে বিদ্যমান উপাদান মধুকে দীর্ঘদিন স্বাভাবিক রাখে। সেটা কয়েক বছরও হতে পারে। তাই মধু অযথা রেফ্রিজারেটরে রাখবেন না।
৮.সস/চাটনিঃ
সস বা চাটনি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার। ফ্রিজে রেখে চাটনি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা গেলেও না করাই শ্রেয়। বিকেলের নাস্তা কিংবা রান্নার কাজে সস ব্যবহার করা হয়। স্বভাবত বাজারের সসগুলো কাচের টেকসই জার বা বোতলে পাওয়া যায়। এগুলো এভাবেই ২/৩মাস সংরক্ষণ করা যায় রেফ্রিজারেটরে রাখার দরকার হয় না। আর যেটা আপনি বাড়িতে তৈরি করেন তার সাথে পরিমাণ মতো সিরকা (Vinegar) মিশিয়ে দিন।
৯.ভোজ্যতেলঃ
তেল রেফ্রিজারেটরে রাখার কোন দরকার নেই। যদিও খূব কম সংখ্যক মানুষ এ কাজটি করে থাকেন, তাই তাদের জন্য পরামর্শ এ কাজটি করা থেকে বিরত থাকুন।
১০. ব্রেডঃ
পাউরুটি তো স্বাভাবিক প্যাকেটেই ভালো থাকে। বরং রেফ্রিজারেটরে এতে আর্দ্রতা তৈরি হয়, ফলে ফাঙ্গাল প্রোবলেম হওয়াটা স্বাভাবিক। আর এর জন্যে আমার পরামর্শ মোটা কাগজের মোড়কে পাউরুটি সংরক্ষণ করুন। তবে ৩/৪ দিনের বেশি না রেখে উদরস্থ করা উত্তম।
Informative
Thank you 🙂
Thanks
You are welcome 🙂