মধ্যবিত্তর জীবনে ফ্রিজ এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গিয়েছে। বেঁচে যাওয়া খাবার স্টোর করাই বলুন, কি সবজি, সস, জ্যাম, জেলি কিনে দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে খাওয়াই বলুন, ফ্রিজ না থাকলে একটা দিনও যেন কল্পনা করা যায় না। তাছাড়া সবজি বা অন্যান্য খাবার ফ্রিজে রেখে দিলে রোজ-রোজ বাজারে যাবার খরচাটাও বেঁচে যায়। আর ভালো ভাবে স্টোর করতে পারলে খাবার অনেকদিন ফ্রিজে টাটকাও থাকে। কী কী খাবার জিনিস ফ্রিজে স্টোর করে অনেকদিন ধরে খেতে পারবেন, ঝটপট দেখে নিন।
১. মাখনঃ
মাখন কিন্তু ফ্রিজে রাখা মাস্ট। গরমকালে মাখন বাইরে রাখলে তাতে এমনিতেই কেমন একটা অদ্ভুত তেলচিটে গন্ধ হয়ে যায়। স্বাদও বদলাতে শুরু করে। ফলে গরমকালে মাখন ফ্রিজেই রাখুন। তবে শীতকালে মাখন বাইরে রাখলেও ভাল থাকে কিন্তু রাখার দরকার নেই। ফ্রিজে বহুদিন ধরে রাখলেই মাখন বেশি ভালো থাকে।
২. চিজঃ
আজকাল অনেকেই চিজ খেতে পছন্দ করেন। বাড়িতে যারা স্যালাড বানিয়ে নেন, বা স্যান্ডউইচ খান, তাঁরাও চিজ হাতের কাছে রাখেন। চিজ বাইরে রেখে দিলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় বলে একে ফ্রিজে রাখাই বাঞ্ছনীয়। দেখবেন, এয়ারটাইট বাক্সে রাখলে চিজ অনেকদিন ভাল থাকছে। তবে চিজ ব্যবহার করার পর সেটিকে ভাল করে মুড়ে রাখতে ভুলবেন না, নয়তো ওর খোলা অংশে হাওয়া লেগে সহজেই ছত্রাক জন্মে যেতে পারে।
৩. ডার্ক চকোলেটঃ
ডার্ক চকোলেট খেতে ভালবাসেন না, এমন বোধহয় কেউই নেই। ফ্রিজে যদি ডার্ক চকোলেট ভাল করে এয়ারটাইট কন্টেনারে ভরে রেখে দেন, তাহলে কিন্তু এটি প্রায় দু’বছর পর্যন্ত থাকে।
৪. ড্রাই ফ্রুটসঃ
ড্রাই ফ্রুটস যদি গরমকালে বাইরে রেখে দেন, তাহলে সহজেই আর্দ্রতায় সেগুলি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি ফ্রিজে এয়ারটাইট কৌটোয় রাখেন? তাহলে কিন্তু সেটি অনেকদিন পর্যন্ত থাকে। তাছাড়া বাইরে রাখলে ড্রাই ফ্রুটস নেতিয়ে যেতে পারে। ফ্রিজে রাখলে কিন্তু সেটা টাটকা আর মচমচে থাকে। অনেকে ভাবেন ফিজে এই খাবার রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফিজে বা রেফ্রিজারেটর এটি রাখা বন্ধ করে দেন, যা আসলে ভুল।
৫. কেচাপঃ
ফ্রিজে না রেখে কেচাপকে কিন্তু বাইরেও স্টোর করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে স্থানটি যাতে ‘কুল অ্যান্ড ড্রাই’ হয়, সেদিকে নজর রাখতে হয়। তবে কেচাপ কিনে আনার পর যদি দেখেন সেটি শেষই হচ্ছে না? তাহলে কিন্তু সেটি ফ্রিজে রেখে দেওয়াই ভাল। এতে কেচাপ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। আর যদি আপনি অরগানিক কেচাপ খান, তাহলে ওতে প্রিজারভেটিভ দেওয়া রয়েছে কিনা, দেখে নেবেন। প্রিজারভেটিভ না দেওয়া থাকলে প্রথম থেকেই ফ্রিজে স্টোর করা ভাল।
৬. সয়া সসঃ
বাঙালি বাড়িতে সয়া সস এখন আর কোনও ফ্যান্সি উপাদান নয়। সয়া সসে বেশিমাত্রায় সোডিয়াম থাকার ফলে একে ফ্রিজে স্টোর না করলেও চলে যায়। তবে বেশিদিন বাইরে থাকলে সয়া সস তার ফ্রেশনেস হারিয়ে ফেলে। এমনকি, এর ফ্লেভারও বদলে যায়। তাই প্রথম থেকেই সয়া সস ফ্রিজে রাখুন। দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
৭. ভুট্টাঃ
ভুট্টা বাইরে রাখলেই কিন্তু সেটি শুকিয়ে যায়। তাছাড়া ভুট্টার স্বাভাবিক মিষ্টত্বও বাইরে থাকার ফলে হারিয়ে যায়। তাই সেই মিষ্টত্ব ও ফ্রেশনেস যদি বজায় রাখতে চান, তাহলে বাজার থেকে ভুট্টা এনেই ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিন। ফ্রিজের তাপমাত্রা ভুট্টার ভিতরকার রাসায়নিক ক্রিয়াকে ব্যহত করে তার স্বাভাবিক স্বাদ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮. কলাঃ
পাকা কলা সাধারণত আমরা বাইরেই রাখি। কিন্তু এভাবে রাখলে কলা দ্রুত নরম হয়ে যায়, খোসাও কালো হয়ে যায়। তবে, ফ্রিজে যদি পাকা কলা স্টোর করে রাখেন, তাহলে কলা সহজে নরম হয় না। কলা হলুদ থাকবে বেশিদিন। তবে একটা সময় পর খোসা হাল্কা কালো হয়ে গেলেও দেখবেন ভিতরের কলার স্বাদ একই থাকছে।
৯. পাতিলেবু বা কমলালেবুঃ
বাইরে রেখেও পাতিলেবু বা কমলালেবু খেতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে বেশিদিন বাইরে ফেলে রাখা যায় না। তাই এগুলিকে ফ্রিজে রেখে দিতে পারলে অনেকদিন টাটকা থাকবে, বেশ কিছুদিন ধরে খেতেও পারবেন।
১০. নুন ও চিনিঃ
সাধারণত রোজকার রান্নায় ব্যবহার করতে হয় বলে নুন ও চিনিকে প্রায় সকলেই রান্নাঘরের তাকেই রাখতে পছন্দ করেন। তবে রান্নাঘরের উত্তাপে এবং বাইরের আর্দ্রতায় বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় নুন ও চিনি গলে যায়, বিশেষ করে গরম কালে এটি ঘটে থাকে। এই ঘটনা এড়াতে চাইলে এয়ারটাইট কন্টেনারে করে নুন ও চিনি ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বারবার রান্নার সময় বের করে নিয়ে যেতে হবে বটে, কিন্তু এভাবে অনেকদিন ফ্রেশও থাকবে। মজার ব্যাপার, এভাবে নুন স্টোর করে রাখলে কিন্তু অনেকসময় তা প্রায় বছর পাঁচেক অবধিও থেকে যায়।
এছাড়াও পিনাট বাটার, আঙুর, অ্যালোভেরা, ডিম, ইত্যাদিও ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত রেখে ব্যবহার করতে পারবেন।