পেটে গ্যাস জমা খুবই নর্মাল একটি বিষয়। অন্ত্রে আটকে থাকা অতিরিক্ত বাতাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গ্যাস শরীরের জন্য প্রাকৃতিক উপায়। তবে অত্যধিক গ্যাস কখনও কখনও বিব্রতকর এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। বিশেষ করে রাত্রিবেলায় খাওয়ার পর অনেকেরই গ্যাসের সমস্যা হয়। এটি আপনি রাতে কি খাচ্ছেন তার উপর আসলে নির্ভর করে। তাই কিছু খাবার আছে যা রাতে না খেলে এই সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন নিমেষেই। কোন কোন জাতীয় খাবার রাতে খাবেন না জেনে নিন আজকের লেখায়। মেনে চলুন দেখবেন গ্যাসের কষ্ট থেকে অনেকটা রিলিফ পাবেন।
রাতে গ্যাস হতে পারে কেন?
রাতে যে খাবারগুলি খেলে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে সেগুলিতে প্রায়শই এমন পদার্থ থাকে যা নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে।
- ভাঙ্গা কঠিন
- গ্যাস তৈরি করে যখন শরীর তাদের ভেঙে দেয়
- খাওয়ার সময় ব্যক্তিকে বাতাস গিলতে দেয়
রাতে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবারঃ
- মটরশুঁটি জাতীয় সবজি
- ফুলকপি ও বাঁধাকপি
- গম
- দুগ্ধজাত পণ্য
- চর্বিযুক্ত খাবার
১. রাতে গ্যাস হয় মটরশুঁটি খেলেঃ
মটরশুঁটি বা বিন্স জাতীয় খাবার গ্যাস হওয়ার কারন হতে পারে আপনার। আসলে এতে প্রচুর পরিমাণে রাফিনোজ নামক জটিল চিনি থাকে, যা শরীরে ভাঙতে সমস্যা হয়। এতে থাকে উচ্চ মানের ফাইবার, যা গ্যাস তৈরি করতে সহায়ক।
তবে মটরশুঁটি বা বিন্স কিভাবে রান্না হচ্ছে তার উপর এই গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা নির্ভর করে। ২০১১ সালের একটি সমীক্ষার বিশ্বস্ত সূত্রে দেখা গেছে যে, যারা বেকড বিন্স খান তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। বিশেষ করে শিমের দানা রাতে খাওয়া একদম ঠিক না।
২. ফুলকপি ও বাঁধাকপিঃ
রাতে গ্যাস হওয়া এড়াতে ফুলকপি বা বাঁধাকপি খাবেন না। সকালে খান রাতে অ্যাভয়েড করুন। কারন এতে ও অন্যান্য এই জাতীয় ক্রুসিফেরাস সবজিতে প্রচুর পরিমাণে রাফিনোজ এবং ফাইবার থাকে। ফাইবার থাকা মানেই গ্যাস হওয়ার চান্স থাকা। এগুলো ভালো করে হজম হয় না তাই রাতে এগুলো খেলেই দেখবেন গ্যাস না হয়ে উপায় নেই। বিশেষ করে বাঁধাকপি তো গ্যাস হওয়ার রাজা। তাই সকালে খান খেলে কিন্তু রাতে একদম না।
৩. গম এবং অন্যান্য গোটা শস্যঃ
গম এবং অন্যান্য গোটা শস্য, চাল বাদে, সবগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সহ রাফিনোজ থাকে। এই উভয়ই গ্যাস এবং পেট ফোলার অন্যতম কারণ হতে পারে। কিছু গোটা শস্য যেমন গম, বার্লি এবং রাইতেও গ্লুটেন নামক প্রোটিন থাকে। অনেকেই আছেন যারা গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীল এবং এটি খাওয়ার পরে গ্যাস এবং পেট ফোলা ভাব অনুভব করেন। রাতে এগুলো না খাওয়াই ভালো সেক্ষেত্রে।
বিশেষ কথাঃ
গ্লুটেন সংবেদনশীলতা নন-সেলিয়াক গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থেকে সিলিয়াক রোগ পর্যন্ত বিস্তৃত। যা একটি গুরুতর অটোইমিউন ডিসঅর্ডার।
৪. দুগ্ধজাত পণ্যঃ
দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির এবং দই প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামে ভরপুর। কিন্তু ল্যাকটোজ থাকায় এগুলো হজম করতে সময় লাগে।
২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মানুষের গ্যাস হয় এর থেকে। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে দুগ্ধজাত দ্রব্যের চিনি, ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা কমে আসে। যে ব্যক্তি ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা হারায় সে যদি দুগ্ধজাত খাবার রাতে গ্রহণ করে তবে গ্যাস হবেই হবে।
৫. চর্বিযুক্ত খাবারঃ
চর্বিযুক্ত খাবার হজম হতে সময় লাগে। রাতে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে তা সহজে হজম হয় না। এই খাবার হজম করতে শরীরকে খুব পরিশ্রম করতে হয়। যা রাতে খাওয়ার পর সম্ভব নয়। ফলে গ্যাস অন্ত্রে আটকে থাকে। তাই রাতে চর্বিযুক্ত যেকোনো খাবার এড়িয়ে চলুন যদি আপনার গ্যাসের সমস্যা থাকে।
গ্যাস কমানোর টিপসঃ
উপরের খাওয়ার বস্তু ছাড়া আরও অনেক খাবার আছে যাতে গ্যাস হয় রাতে। যেমন ধরুন, পেঁয়াজ, রসুন, বিয়ার, ঠান্ডা পানীয়, শক্ত চকলেট ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সব সময় এত মেনে চলাও যায় না। তাহলে কি করনীয় !
- সবার প্রথম যেটা করবেন তা হল যে যে খাবার বা পানীয় তাতে খেলে আপনার গ্যাস হয় তা একদম এড়িয়ে যাওয়া। যতই পছন্দের খাবার হোক না কেন রাতে খাবেন না। এটা গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনাকে গোঁড়া থেকেই নির্মূল করে দেবে।
- সব সময় এত মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই যদি রাতে ফুলকপি, বাঁধাকপি মটরশুঁটি এসব জাতীয় খাবার খান তাহলে রান্না আগে এগুলো ৫ মিনিটের জন্য জলে ফুটিয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এতে এর মধ্যেকার থাকা ফাইবার বেরিয়ে যাবে। ফলে গ্যাস হওয়ার ভয় থাকবে না।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে তারপর এক গ্লাস লেবুর জল খান। এটি চর্বি গলাতে দ্রুত কাজে দেবে। সাথে সাথে গ্যাস হতে দেবে না।
- দুগ্ধজাত পণ্য খেলে তা খুব গরম বা ঠাণ্ডা খাবেন না। দুধ খেলে সামান্য হলুদ মিশিয়ে তারপর খান। এতে গ্যাস কেটে যায়। পনির রাতে খেলে ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খান। গিলে খাবেন না। ছোট ছোট গ্রাস নিন খাবারের। এতে দ্রুত হজম হওয়ার চান্স থাকে।
- বিয়ার, ঠান্ডা পানীয়, শক্ত চকলেট রাতে খেলে খালি পেটে খাবেন না। খালি পেটে গেলে গ্যাস হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। কিছু খেয়ে তারপর খান।