এই গরমে ফ্রিজের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু ফ্রিজ না থাকলে বা ফ্রিজ খারাপ হলে! তাছাড়া ফ্রিজের অ্যাক্সেস ছাড়াই তো রোজ বাইরে বেরতে হচ্ছে। ফ্রিজ না থাকলে কি এই গরমে সবসময় গরম জল খেয়ে থাকতে হবে? একেবারেই না। তাছাড়া ফ্রিজে আর কত জলের বোতল রাখবেন। বাকি জিনিসও তো রাখতে হবে। তাই আজকের এই সামান্য কয়েকটি টিপস মাথায় রাখুন। ফ্রিজ ছাড়াই জল ঠাণ্ডা রাখতে ব্যবহার করুন।
ফ্রিজ ছাড়া জল ঠাণ্ডা রাখার উপায় কি কিঃ
- ঠাণ্ডা জলের বালতিতে বোতল রাখা
- ভেজা কাপড় দিয়ে বোতল মুড়ে রাখা
- রাতের বেলায় বাইরে জলের বোতল রেখে দেওয়া
- ওয়াশিং মেশিনে বোতল রেখে দিন
- মাটির বড় কলসিতে রাখুন জলের বোতল
১. ঠাণ্ডা জলের বালতিতে বোতল রাখাঃ
অনেকেরই হয়তো এই কৌশলটি জানা আছে। তাহলে কেন এটা লিখছি? আসলে ঠাণ্ডা জলের বালতিতে রাখলেও একটা সময় পর সেই জলও গরম হয়ে আসে। ফলে তাতে রাখা জলের বোতল ঠাণ্ডা বেশিক্ষণ থাকে না। সেটা যাতে না হয় তার জন্য আমার এই লেখা। একটি বালতিতে নর্মাল ঠাণ্ডা জল ভরে তাতে ছোট এক বাটি নুন মিশিয়ে নিন। এবার তাতে জলের বোতল রাখুন। উপর থেকে কাপড় ভিজিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। ট্রাই করে দেখুন অবাক হতে বাধ্য হবেন। অনেকক্ষণ পর্যন্ত জল ঠাণ্ডা থাকবে।
নুন বা লবণ জলে মিশিয়ে দিলে তা জলের উত্তাপকে ধীর করে দেয়। ফলে এতে রাখা জলের বোতল দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে। লবণ পানি ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে কেন? আসলে লবণ হল সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের সংমিশ্রণ। লবণের অণু তার উপাদান পরমাণুতে বিচ্ছিন্ন হয়ার জন্য শক্তি গ্রহণ করে যা জল থেকে নেয়। ফলে জলের তাপমাত্রা হ্রাস হয়ে আসে।
২. ভেজা কাপড় দিয়ে বোতল মুড়ে রাখাঃ
ফ্রিজ কয়েক বছর আগে অব্দি একটি বিলাসবহুল আইটেম হিসাবে বিবেচিত হত। যাইহোক, যেসব বাড়িতে ফ্রিজ ছিল না তারা জল ঠান্ডা রাখার জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে জলের পাত্র ঢেকে রাখতেন। তাতে জল ঠাণ্ডা থাকতো অনেক সময় পর্যন্ত। ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব। আসলে সবটাই বিজ্ঞান। যখন একটি তরল গ্যাসে পরিণত হয় তখন তার রূপান্তর হওয়ার জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য, এটি শক্তির নিকটতম উত্সগুলি সন্ধান করে। যদি আপনি একটি জলের বোতলের উপর ভেজা কাপড় ঢেকে রাখেন তবে এটি শক্তি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সেই ভেজা কাপড়ের থেকে তাপ বের করবে। এই তাপ নিষ্কাশন যা জলের বোতলকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। জলের বোতল ভেজা কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখলে মাঝে মাঝে তা ভিজিয়ে পুনরায় মুড়ে রাখবেন।
৩. রাতের বেলায় বাইরে জলের বোতল রেখে দেওয়াঃ
এটা গ্রাম বাংলার অনেক প্রাচীন একটি পন্থা, পানীয় জল ঠাণ্ডা রাখার। ঠাকুমার মুখে শোনা, ট্রাই করে দেখতে পারেন। আগের দিনে জলের মাটির কলসি রাতে ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে ঘরের বাইরে রেখে দেওয়া হত। সূর্য ওঠার আগে তা ভিতরে এনে যথাযথ স্থানে রেখে দেওয়ার চল ছিল। মাটির কলসি তো আর এখন অত ব্যবহার হয় না, সবই বোতল। তাই জলের সবকটা বোতল ভেজা কাপড়ে মুড়ে রাতে বাইরে রেখে দিন। ভোরে বেতরে নিয়ে এসে রাখুন। আমি এটা ট্রাই করিনি। আপনারা করলে জানাবেন কাজ হল কিনা।
৪. ওয়াশিং মেশিনে বোতল রেখে দিনঃ
একসাথে অনেক জলের বোতল ফ্রিজে রাখা সম্ভব হয় না। তাই ঠাণ্ডা জল সবসময় পান করার জলে এবার থেকে কিছু বোতল ওয়াশিং মেশিনে রাখতে পারেন। ওয়াশিং মেশিনের দরজা বা ঢাকনা বন্ধ করে রাখুন এর ভেতর বোতল রেখে। বেশি ঠাণ্ডা চাইলে এক ট্রে বরফ সাথে রেখে দিন। করে দেখুন মজার টিপস।
৫. মাটির বড় কলসিতে রাখুন জলের বোতল
বাজার থেকে একটি বড় মাটির কলসি কিনে আনুন। তা জলে ভিজিয়ে একদিন রাখুন। তারপর তাতে সামান্য জল ভোরে তারমধ্যে জলের বোতল রেখে ঢাকা দিয়ে দিন। বেশি ঠাণ্ডা রাখতে হলে ভেজা কাপড় মুড়ে দিন কলসির গায়ে। দেখবেন এই গরমেও ঠাণ্ডা থাকছে জলের বোতল।
স্পেশাল টিপসঃ
বাইরে যারা যাচ্ছেন তাদের জলের বোতলে অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা জল রাখতে চাইলে এটা করুন। একটি বোতলে অর্ধেক জল ভোরে তা শুইয়ে ফ্রিজারে রেখে বরফ করে নিন। শুইয়ে রাখার দরুন বোতলের একদিকে বরফ জমে যাবে লম্বা হয়ে। বাকি একদিক খালি থাকবে। এবার বাইরে যাওয়ার আগে খালি দিক দিয়ে ঠাণ্ডা জল ভোরে নিন। এতে করে জল ঠাণ্ডা থাকবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। পুরো বোতল জমে গেলে তা থেকে জল খাওয়া যায় না যতক্ষণ না তা গলছে। এই সমস্যা আর নেই। তাছাড়া একদম চিলড জলও খেতে হচ্ছে না। ট্রাই করুন। ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।