আসছে শীত আর কয়েক মাসের মধ্যেই। শীতে বাহারি বিভিন্ন সবজির মধ্যে লাউ শাকের সহজলভ্যতা তুলনামূলক ভাবে বেশী এবং এটা দামে অপেক্ষাকৃত সস্তা। পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং অন্যান্য উপাদানে সমৃদ্ধ লাউ শাক ভর্তা, ভাজি, তরকারি, বা রস করেও খাওয়া যায়। আজকের আর্টিকেলে থাকছে শরীরের জন্য লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
১. রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করেঃ
লাউ শাকে বিদ্যমান আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। যা দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। যেসব রোগে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায় সে সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে লাউ শাক খাওয়া উচিত। এতে আকস্মিক রক্তশূন্যতায় মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।
২. ভ্রুণের দেহ গঠন করেঃ
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন। এটা ভ্রুণের স্পাইনাল কর্ড ও মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে। ফলিক অ্যাসিডের অভাবে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকৃতি, প্যারালাইসিস, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। নিয়মিত লাউ শাক খেলে গর্ভবতী মা ও ভ্রুণের দুজনেরই উপকার হয়। সেই সাথে গর্ভপাতের ঝুঁকিও কমে।
৩. হাড় শক্ত ও মজবুত করেঃ
লাউ শাকে আছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এই শাক খেলে হাড় শক্ত ও মজবুত হয়। তাই বাড়ন্ত শিশুদের হাড় সুগঠিত করার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লাউ শাক রাখা উচিত। সেই সাথে পরিণত বয়সে অস্টিওপোরোসিস ও ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমায় লাউ শাক। নিরামিষভোজীদের জন্য এই শাক অনেক উপকারে আসে।
৪. ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমায়ঃ
লাউ শাকে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেক বেশী। এই শাক ঠান্ডা, সর্দি, এবং ঠান্ডাজনিত অন্যান্য ক্রোনিক ডিজিজকে দূরে রাখে। যদি কাশির সাথে রক্তপাত হয় তাহলে লাউ শাকের পাতার রস দুই টেবিল চামচ করে চার ঘন্টা পর পর খেতে হবে তিন-চার দিন পর্যন্ত। এছাড়াও দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি-এর উপস্থিতি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও প্রতিরোধ করে।
৫. শরীর ঠান্ডা রাখেঃ
লাউ শাক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা রাখে। একই সাথে এই শাক মস্তিষ্কও ঠান্ডা রাখে। ফলে উত্তেজনা ও রাগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার এই শাক ঘুমের সমস্যাও দূর করে। ফলে অনিদ্রা রোগীদের জন্য লাউ শাক আদর্শ একটা খাবার।
৬. পাকস্থলী সুস্থ রাখেঃ
লাউ শাক ফাইবারের একটা উৎকৃষ্ট উৎস। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য পরিষ্কার রাখে এবং পাইলস প্রতিরোধ করে। লাউ শাকের আরেকটা বড় সুবিধা হলো, ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এই শাক অনেকক্ষণ পেটে থাকে। আবার এই শাকে ক্যালরি ও ফ্যাট অনেক কম। ফলে ক্ষুধা কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। ডায়েট কন্ট্রোলের জন্য লাউ শাক প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
৭. দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ
লাউ শাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন, এবং জিয়াজ্যান্থিন নামক উপাদান। লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের নানা ধরণের রোগ প্রতিরোধ করে। আবার এর বিটা ক্যারোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। অপুষ্টিজনিত সমস্যায় লাউ শাকের কান্ড ও পাতার রস দুই টেবিল চামচ করে দিনে দুই বার করে খাওয়া যেতে পারে।
৮. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখেঃ
পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লাউ শাক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আবার কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লাউ শাক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। আবার যেহেতু এই শাক শরীরে রক্ত তৈরি করে, সেহেতু রক্তের প্রবাহ ঠিক থাকে এবং হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল সুষ্ঠুভাবে হয়। লাউ শাকে কোলেস্টেরল কম থাকায় তা হার্টের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। হৃদযন্ত্রের পীড়া থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সকালে লাউ শাকের রস খাওয়া যায়। শাকের পাতা ও কান্ডের টাটকা রস দুই টেবিল চামচ এবং দুই টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে খেতে হবে৷
৯. যকৃতের শক্তি বাড়ায়ঃ
লাউ শাক দুর্বল যকৃত সবল করতে সাহায্য করে৷ যকৃতের সমস্যার সমাধানের জন্য লাউ শাকের কচি পাতা ও ডাল বেটে টাটকা রস বের করতে হবে। এই রসের থেকে এক থেকে দুই টেবিল চামচ পরিমাণ নিয়ে এক কাপ ঠান্ডা জলের সাথে মেশাতে হবে। প্রতিদিন দুই বার করে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত খেলে যকৃত সুস্থ হবে।