ফল শব্দটি শুনলে আমাদের মনে টক বা রসালো মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা অনুভব হয়। ফলকে রান্না করার কথা সাধারনত আমরা চিন্তা করি না। রান্না বান্না ছাড়া খুব সহজেই খাওয়া যায় এই খাবারটি। কিন্তু আজ আপাদের এমন একটি ফল সর্ম্পকে বলব যাকে আপনারা ফল তো বলেন ঠিকি কিন্তু ফল হিসেবে মানেন না বা চিনেন না বরং একে আপনারা মসলা হিসেবে চিনে থাকেন। এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন আমি কিসের কথা বলছি! আজকে কথা বলবো জায়ফল নিয়ে। কিভাবে একে রান্নায় ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে।
একটি ক্রান্তীয় ফল হলো জায়ফল। এটি একটি খোসা ছাড়া শুকনো বীজ। ধোঁয়াবিহীন আগুন দিয়ে একে শুকানো হয়। অনেক ধরনের রান্নায় এটি ব্যবহার করা হয় যেমন- মাংস, বিরিয়ানি, সীফুড, সালাদ, ঘরে তৈরি করা সসেজ, বিভিন্ন ডেজার্ট, প্যাস্ট্রি, চা এবং কফি তৈরিতে। অতি পরিচিত এই মসলাটি ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় একটি গাছ থেকে পাওয়া যায়। আর কথা না বাড়িয়ে মূল কাজে যাওয়া যাক। জেনে নিন রান্নায় কিভাবে এই জায়ফল ব্যবহার করা যায়।
রান্নায় জায়ফলের বিভিন্ন রকমের ব্যবহারঃ
1. মাছ মাংস রান্নায় জায়ফলের ব্যবহারঃ
মাছের ও মাংসের সাথে জায়ফলের ব্যবহার খুব ভালভাবে করা যায়। মাছ বা মাংস মেরিনেট করার সময় এটি যোগ করুন। মেরিনেট করা মুরগির মাংস, হাঁসের মাংস, ছাগলের বা ভেড়ার মাংস, গরুর মাংস, ইত্যদি দিয়ে তৈরি যে কোন রান্না যেমন রোস্ট, রেজালা, কিমা, ফ্রাই ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় মসলাই হবে।
এছাড়াও পোলাও, বিরিয়ানী, ফ্রাইড রাইস ইত্যাদি রান্নায় ও এর ব্যবহার রয়েছে। তবে এই মসলা দিতে হবে পরিমাণমতো, তবেই রান্নার সঠিক স্বাদ ও ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। বেশি বা কম হলে রান্নার স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। উক্ত খাবারগুলিতে জায়ফলের গুড়া বা জায়ফল পেস্ট দেয়ার সঠিক পরিমাণ ২০ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। চেষ্টা করবেন চুলায় রান্না করার এতে করে ঘ্রাণ বেশি করে ছড়ায়।
2. শাক সবজির সাথে জায়ফলের রান্নাঃ
শাক সবজি যদি আপনি রান্না করতে চান, তাহলে খেয়াল রাখবেন যে সব সবজির সাথে জায়ফল ভালো যায় না। এটা সাধারনত আলু, শিম, মটরশুটি, পালং শাক, পেঁয়াজ, ফুলকপি, সাদা ও লাল বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি দিয়ে ভালভাবে যায়। এছাড়া সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। শাক সবজি ও সালাদের জন্য জায়ফল ব্যবহারের আনুমানিক পরিমাণ হলো ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত। তবে কোন মতেই এর চেয়ে বেশি নয়।
3. ডেজার্ট বা মিষ্টি জাতীয় খাবারে জায়ফলের ব্যবহারঃ
আমরা সকলেই জানি যে জায়ফল মাছ, মাংস, সবজি রান্নায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে জায়ফল মিষ্টি জাতীয় রান্নায় ও ব্যবহার করা হয়। চকোলেটের মাফিন কেক, ক্রিম, পুডিং, কেক, বিভিন্ন কুকিজ, ওয়েফার বিস্কুট ইত্যাদি বেক করার সময় জায়ফল একটি দারুন মসলাদার এবং আশ্চর্যজনক ফ্লেবার যোগ করে দেবে। এছাড়াও বেকড করা আপেল, তালের তৈরি কোন ডেজার্ট, এপ্রিকটস তৈরি করার সময় এটি ব্যবহার করতে পারেন। হরেক রকমের পানীয় যেমন মশলাদার পানীয়, টমেটোর রস, লেবু পানি, মুল্ড ওয়াইন, কোকো এবং এমনকি অনেক রকমের মিল্কশেক তৈরিতে এটি দিতে পারেন। নিশ্চই অবাক হচ্ছেন! তবে আজ একবার বাসায় চেষ্টা করে দেখবেন, আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। তবে হ্যা জায়ফলের ব্যবহার পুডিং তৈরির ক্ষেত্রে একটি চমৎকার স্বাদ যোগ করে দিবে যদি তা পরিমাণমতো দেয়া হয়।
4. পনির ও স্যুপ তৈরিতে জায়ফলঃ
পনির এর বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে জায়ফল ব্যবহার করুন। এটি খুব ভালো যায় পনিরের সাথে। এছাড়াও বিভিন্ন শাক, সবজি এবং স্যুপ তৈরিতে এটি যোগ করে দিন। হোক সেটা মুরগীর স্যুপ বা ডিমের স্যুপ অথবা টমেটোর স্যুপ যেটাই হোক না কেন সব গুলোর সাথেই জায়ফল ভাল যায়। আবার ডিমের তৈরি ডিশ যেমন স্ক্র্যাম্বলড ডিম, ভাজা ডিম, ডিমের ঝোল তরকারি এবং অন্যান্য আরো ডিমের রান্নায় এর ব্যবহার করা যায়।
5. ময়দার তৈরি বিভিন্ন খাবারে জায়ফলের ব্যবহারঃ
আপনি জায়ফল দিয়ে ময়দার তৈরি বিভিন্ন খাবার বা সিরিয়াল তৈরি করতে পারেন যেমন- প্যানকেক, নুডলস, পাস্তা, চাউমিং, পাকোরা, সমোচা, রোল, সিঙ্গারা, ডাম্পলিং ইত্যাদি। এই খাবারগুলো তৈরি করার সময় ময়দা গোঁজার সময় এতে জায়ফল রেখে দিন এবং রান্নার সময় এতে সস যোগ করতে পারেন। ফলে আরো ভালো স্বাদ পাওয়া যাবে। তবে এই ধরনের খাবার গুলিতে জায়ফলের ব্যবহার অনেক কম পরিমাণে হতে পারে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম পর্যন্ত তবে এর বেশি না।
বিশেষ টিপসঃ
জায়ফলকে সবসমসয় ঠান্ডা, শীতল, এবং শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। এতে বেশি দিন ভালো থাকবে। কিন্তু তাই বলে ফ্রিজে রাখতে যাবেন না।