আজ আমি এমন কিছু বিষয় আপনাদের কাছে বলতে যাচ্ছি যা জানার পর আপনি আর কখনও অবশিষ্ট আচারের বোয়ামে বেচে যাওয়া রস বা তেলটুকুকে আর অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন না!
আপনি কি জানেন সুস্বাদু আচার এর বিভিন্ন ব্যবহার আছে যা আপনি আপনার কিচেনে অনেক ছোট কাজের বড় সমাধান করতে পারেন? শুধু ভারত উপমহাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশেই এই মুখরোচক খাবারটি বেশ জনপ্রিয়। তবে আমরা আর সেই বিষয় নিয়ে কথা বাড়াবো না। এবার আসল কথায় আসি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন ফলের আচার খাই। আচার খাওয়া শেষে বয়ামের নীচে আচারের অবশিষ্ট তেল রয়ে যায় যা আমরা অনেকেই ফেলে দেই। কিন্তু আজ থেকে আপনারা এই কাজটি আর করবেন না। কেননা আজ আমি আপনাদের এই অবশিষ্ট আচারের তেল বা জুস দিয়ে করা যায় এমন কিছু কাজ বলব। তাহলে জেনে নিন এই অবশিষ্ট আচারের তেল বা জুস দিয়ে করা যায় এমন ৭টি অপ্রত্যাশিত জিনিস।
১. ভিনেগারের পরিবর্তে ব্যবহার করা যায় আচারের তেলঃ
যে সকল খাবার তৈরিতে ভিনেগার ব্যবহার হয় যেমন (স্যালাড ড্রেসিং, স্যুপ, চাউমিন, মুড়ি ভর্তা এবং আরও অনেক কিছুতে) আপনি চাইলে এগুলোর যেকোনো রেসিপিতে আচারের রস বা তেল ব্যবহার করতে পারেন যা ভিনেগারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি ব্যবহারে আপনি যে কোনো খাবারের স্বাদ বাড়াতে পারেন! তাই ফেলে না দিয়ে এটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
২. আচার জাতীয় অন্য কোন খাবার তৈরিতে যুক্ত করুনঃ
আচার শেষ হয়ে গেলে তেল ফেলে না দিয়ে তা আপনার ফ্রিজে রেখে দিন। পরবর্তিতে আবার আচার তৈরি করলে এটা ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু গরম করে নিতে হবে।
৩. মাংস টেন্ডারাইজার বা মেরিনেট করার জন্যঃ
আচারের রস মাংসের মধ্যে একটি মজাদার ফ্লেবারযুক্ত মেরিনেড তৈরি করে। এত করে মাংস নরমও হয়। মুরগীর মাংস মেরিনেট করতে পরিমাণ মতো লবন, আদা, রসুন পেস্ট, আরো কিছু মশলা মিশিয়ে তার সাথে আচারেরর জুস দিয়ে মেরিনেট করে রাখুন কয়েক ঘন্টার জন্য, তবে পারলে সারা রাত রেখে দেবেন, এতে ভালো ফল পাওয়া যায়। তারপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী রান্না করুন। আবার রান্নার সময় ও কিছুটা তেল ব্রাশ করতে পারেন।
৪. স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু পানীয়ঃ
আচারের রসকে আপনি পানীয় হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এতে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইট যা পেশীর ক্র্যাম্প প্রতিরোধ করার সাথে সাথে আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করতে পারে। জিম বা ব্যায়্যামের পরে আচারের রস পান করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ চামচ আচারের রস খাবেন এর বেশি না।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের সমস্যা, অম্বল দূর করেঃ
অম্বল কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজমে সাহায্য করতে অথ্যাৎ পেটের সমস্যা দূর করতে আচারের রস অনেক উপকারি। পেটের সমস্যা সমাধান করতে এক চামচ আচারের রস পান করুন। সাথে সাথেই ফল পাবেন।
৬. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বা ক্লিনিংএর কাজে ব্যবহারঃ
কালো, পোড়া তামার কড়াই বা প্যানগুলিকে চকচকে তকতকে করতে চান? তাহলে দেখুন ম্যাজিক! আচারের রস নিন এবং তা দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। আবার গ্রিল গ্রেটগুলিও পরিষ্কার করতে আচারের রস ব্যবহার করা যায়। এর জন্য আগে কিছু সময় আচারের রসে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
৭. বাগানের কাজেঃ
কিছু কিছু গাছ রয়েছে যারা অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে এবং বৃদ্ধি পায়। এখানেও আপনি আচারের রস ব্যবহার করতে পারেন। গাছগুলির আশেপাশের মাটিতে আচারের রস যোগ করে দিতে পারেন ফলে গাছের অম্লতা বৃদ্ধি পায়। তবে সরাসরি গাছগুলিতে ঢালবেন না। আগাছা পরিস্কারের জন্যও আচারের রস কাজে লাগাতে পারেন। আ্গাছার উপর সরাসরি আচারের রসটা ঢেলে দিলে আগাছা মরে যাবে এবং বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় ও গাছের ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। এবং কোন প্রকার কীটনাশক ছাড়াই আপনি পোকামাকড় দূর করতে পারবেন।
অন্যান্য ব্যবহারঃ
- উপরে বর্ণীত কাজগুলি ছাড়াও আচারের রসের আরো কিছু ব্যবহার রয়েছে। যেমন কয়েকটি ডিম ভালো করে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে তা আচারের তেল বা রসে ছেড়ে দিন। এভাবে তৈরি করতে পারেন আচারের ডিম। এভাবে আচার ডিম তৈরি করে গরম গরম খিচুরির সাথে পরিবেশন করতে পারেন।
- আবার বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের সাথেও এই আচারের রস ব্যবহার করা যেতে পারে, এতে করে সুন্দর একটা ঘ্রাণ ও স্বাদ পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন রকম ভাজা ভাজির কাজ করতেও এই অবশিষ্ট আচারের রস ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যদি ম্যাজিক দেখতে চান তাহলে আচারের রস বা তেলকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। বহুদিন ভালো থাকে আর নানা ভাবে ব্যবহার করা যায়।