একবারে খুব বেশি খাওয়া বা সারাদিনে অনেক বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা সাধারণ অভ্যাস অনেকেরই, যা ভাঙা কঠিন। সময়ের সাথে সাথে, অত্যধিক খাবার খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার বিকাশের ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার ব্যাধি বা ওভার ইটিং এর সমস্যা থাকলে এখনই সতর্ক হন। অতিরিক্ত খাওয়ার চক্র ভাঙা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে অসম্ভব নয়। যাইহোক, কিছু কৌশলের সাহায্য নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১. কোন খাবার বেশি খান পেলেই তা চিহ্নিত করুনঃ
কোন খাবারগুলি অতিরিক্ত খাওয়ার কারণ হতে পারে তা চিহ্নিত করা এবং সেগুলি এড়িয়ে যাওয়া অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আইসক্রিম পেলেই অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, তবে এটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা বন্ধ করে দিন। কোনো কিছু অ্যাক্সেস করা যতটা কঠিন, আপনার সেই খাবারটি অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা তত কম। আরেকটি সহায়ক পরামর্শ হল চিপস, ক্যান্ডি এবং কুকিজের মতো অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক খাবারগুলিকে দৃষ্টির বাইরে রাখা। যাতে সেগুলির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক মুঠো নেওয়ার প্রলোভন না হয়।
২. কিছু করতে করতে খাওয়া বন্ধ করুনঃ
কম্পিউটারের সামনে মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে কাজ করা হোক বা আপনার প্রিয় টিভি শো দেখার সময় চিপস খাওয়া হোক না কেন, বিভ্রান্ত হয়ে খাওয়া বেশিরভাগ লোকের জন্য একটি সাধারণ ঘটনা। যদিও এই অভ্যাসটি ক্ষতিকারক বলে মনে হতে পারে। তাছাড়া এটি অতিরিক্ত খাওয়াতে অবদান রাখতে পারে। ২৪ টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে খাবারের সময় বিভ্রান্ত হওয়ার ফলে লোকেরা সেই খাবার অজান্তেই অনেক বেশি খেয়ে ফেলে। ফলে আরও বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে। যারা খাওয়ার সময় তাদের খাবারের প্রতি মনোযোগ দেয় তাদের তুলনায় এটি বাকিদের দিনের পরে আরও বেশি খাবার খেতে বাধ্য করে। অন্যমনস্ক হয়ে কিছু খাবেন না। এতে করে ওভারইটিং করার অভ্যাস অনেক কমে যাবে।
৩. সব প্রিয় খাবার খাওয়া বন্ধ করবেন নাঃ
নিষেধাজ্ঞামূলক খাওয়ার ধরণ যা আপনার অনেক পছন্দের খাবারকে খেতে মানা করে, তা আপনাকে বঞ্চিত বোধ করায়। ফলে আরও বেশি করে তা খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। আইসক্রিম, পিজ্জার টুকরো বা চকোলেটের টুকরো কখনও না খাওয়ার শপথ করা বেশিরভাগ লোকের পক্ষে বাস্তবসম্মত নয়। তাই মাঝে মধ্যে আপনার প্রিয় খাবারগুলো চেখে দেখুন। ওই যে বললাম ‘চেখে দেখুন’, মানে সামান্য পরিমান খান। আর নিজেকে বলুন আমি তো সবই খেতে পারি বা খাচ্ছি। এতে না খাওয়ার ফলে মন খারাপের ইচ্ছা চলে যাবে। ফলে ধীরে ধীরে আসক্তি কমে আসবে।
৪. সরাসরি পাত্র থেকে খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ
ব্যাগ থেকে চিপস খাওয়া, শক্ত কাগজের কাপ থেকে আইসক্রিম বা সরাসরি বাক্স থেকে খাওয়া বন্ধ করুন। সরাসরি বাক্স থেকে বের করলে, পরিবেশন আকার হিসাবে প্রস্তাবিত খাবারের চেয়ে বেশি খাবার খাওয়া হতে পারে। তারচেয়ে বরং, একটি প্লেটে বা একটি পাত্রে সামান্য পরিমান নিয়ে খান। এর ফলে সবসময় যে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে ক্যালোরি গ্রহণ করেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে। বিভিন্ন ধরণের খাবারের জন্য একটি সাধারণ অংশ কেমন হওয়া উচিত তা আপনার চোখকে প্রশিক্ষণ দিতে পরিমাপের সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করুন।
৫. নিয়মিত খাবার খানঃ
ওজন কমানোর চেষ্টা করার সময়, অনেক লোক এই আশায় খাবার স্কিপ করেন ভেবে যে, এটি তাদের গ্রহণ করা ক্যালোরির সংখ্যা হ্রাস করবে। যদিও এটি কিছু ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে, যেমন বিরতিহীন উপবাস, খাবার সীমাবদ্ধ করার ফলে আপনি দিনের পরে আরও বেশি খেতে পারেন। তবে পরামর্শ না নিয়ে বা ডায়েট ঠিক না করে এটা করা উচিত নয়। বরং সারাদিনে অল্প অল্প পরিমান করে ঘন ঘন খাওয়া ক্ষুধা এবং সামগ্রিক খাদ্য গ্রহণ হ্রাস করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু লোক ক্যালোরি সীমাবদ্ধ করতে দুপুরের খাবার এড়িয়ে যান। শুধুমাত্র রাতের খাবারে অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য। এতে করে অতিরিক্ত খাওয়া কমে না বরং বেড়ে যায়। তবে দুপুরে খাবার খাওয়া দিনের পরে খুব বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে।
৬. পুরানো অভ্যাস ভাঙুনঃ
পুরনো অভ্যাস ভাঙা কঠিন। বিশেষ করে যখন সেগুলি খাবারের সাথে জড়িত। অনেকেরই টিভির সামনে রাতের খাবার খাওয়া বা প্রতি রাতে এক বাটি আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর আচরণগুলি সনাক্ত করতে সময় লাগতে পারে যা অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে টেনে নিয়ে যায় অজান্তেই। তাই এগুলোকে এড়িয়ে চলুন। উদাহরণস্বরূপ, টিভির সামনে খাবারের পরিবর্তে রাতের খাবার টেবিলে বসে খান। টিভি খাওয়ায়র সময় চালাবেন না। রাতে এক বাটি আইসক্রিম খাওয়ার বদলে খাওয়ার পর এক কাপ গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এই প্রতিস্থাপন সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হয়ে যাবে।