আলু ভাজা বানাতে কে না পারে? হ্যাঁ কমবেশি সবাই এটি বানাতে পারে। খেতে ভালবাসে প্রত্যেকেই। কিন্তু পেটুকগণ আজকের আলু ভাজা রেসিপি কিন্তু একটু স্পেশাল। আর স্পেশাল মানেই স্বাদেও অতুলনীয়।
দুরকমের আলু ভাজার স্টাইল আজকের লেখায় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। চটপটে স্টাইলে দুরকমের এই আলু ভাজার জন্য প্রয়োজন একটি বিশেষ মশলার। যা কিনতে কোথাও পাবেন না ঘরে বানিয়ে নিতে হবে। এই মশলাই আলু ভাজার স্বাদ দ্বিগুণ করার মূলে।
আজকের প্রথম রেসিপির মূল উপকরণ যে মশলা আগে তা বানানোর উপায় লিখছি। তারপর মূল রান্না কিভাবে করবেন লিখবো।
মশলা বানানোর উপকরণঃ (২৫০ গ্রাম মশলা)
- কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গোটা ৩টে
- দারচিনি ১/২ ইঞ্ছি
- গোটা ধনে ১ চা চামচ
- গোটা জিরে ১ চা চামচ
- মৌরি ১ চা চামচ
- বড় এলাচ ১ পিস
- গোটা গোলমরিচ ১/২ চামচ
- স্টার এনিস বা তারকা মৌরি ২টো
- মারাঠি মগগু ১ পিস
- লবঙ্গ ৩ পিস
মশলা বানানোর পদ্ধতিঃ
চাটু বা তাওয়া ভালো করে গরম হলে এক এক করে উপরের প্রত্যেকটি উপকরণ দিয়ে দিন। আঁচ কমিয়ে ২ মিনিট মত নাড়তে থাকুন। সব মশলার গন্ধ মিলে একটি সুন্দর এরোমা বের হলে গ্যাস অফ করে দিন। একটি থালায় এটা ঢেলে নিয়ে ঠাণ্ডা করুন ১০ মিনিট ধরে।
ঠাণ্ডা হয়ে এলে মিক্সিতে বা শিল পাটায় বেটে এর পাউডার বানিয়ে নিলেই মশলা রেডি। এটি বোতলে ভরে একমাসের বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় এতে নুন মিশিয়ে রাখতে পারেন। স্যালাড বা কোন চটপটে খাবারের উপর ছড়িয়ে এর স্বাদ উপভোগ করতে পারেন যেকোনো সময়।
দেখলেনই কত সহজে একটি নতুন মশলার সন্ধান আপনাদের দিয়ে দিলাম। আর হ্যাঁ মারাঠি মগগু সাধারণত বাড়ির আশেপাশের মুদির দোকানে পাবেন না। এটি অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। আমি অ্যামাজন থেকে এটি আনিয়েছি। অ্যামাজনে গিয়ে Marathi Moggu সার্চ করলে এটি আপনারা পেয়ে যাবেন। স্টার এনিস বা তারকা মৌরি বিরিয়ানি মশলা যেখানে পাওয়া যায় সেখানে খোঁজ করলেই পাবেন। চাইলে অনলাইনে অ্যামাজন থেকেও আনাতে পারেন।
চলুন মশলা রেডি এবার চলে যাই আজকের আলু ভাজার রেসিপিতে। প্রথম ও দ্বিতীয় আলু ভাজা রেসিপি এই দুই ভাগে দুটো ভাজা ভাগ করে পদ্ধতি লিখছি।
(প্রথম স্টাইল) আলু ভাজা রেসিপির উপকরণঃ
- আলু ৫০০ গ্রাম (চৌক চৌক করে কাটা)
- কালো সরষে ১ চামচ
- হলুদ ১/৪ চামচ
- কারিপাতা ১৫টা
- সরষের তেল ৪ চা চামচ
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
- ঘরে বানানো মশলা ২ চা চামচ
বানানোর পদ্ধতিঃ
আলু খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে চৌক চৌক করে প্রথমে কেটে নিতে হবে। তারপর জল গরম করে তাতে আলু সেদ্ধ হতে দিয়ে দিতে হবে। আলু ৭০% মত সেদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে নিয়ে তা থেকে জল ঝরিয়ে নিতে লাগবে। বুঝবেন কি করে ৭০% শতাংশ সেদ্ধ হয়েছে কিনা? খুব সহজ। একটা কাটা চামচ নিয়ে আলুতে গেঁথে দেখতে হবে তা বিঁধে যাচ্ছে কিনা। আলু না ভেঙ্গে যদি চামচ ঢুকছে তাহলে একদম পারফেক্ট। ভেঙ্গে গেলে জানবেন বেশি সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই আলু সেদ্ধ হতে বসিয়ে ৫ মিনিট পর থেকে একবার দুবার এটি করতে থাকবেন।
আলু থেকে জল ঝরে গেলে একটি কড়াই গ্যাস অন করে বসান। কড়াই গরম হলে তাতে ৪ চা চামচ সরষের তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে প্রথমে কালো সরষে ১ চামচ, কারিপাতা ১৫টা আর হলুদ ১/৪ চামচ দিয়ে নেড়ে নিন। এগুলো দেওয়ার সময় আঁচ কমিয়ে নেবেন না হলে পুড়ে যাবে। সরষে ফাটতে শুরু করলেই তাতে সেদ্ধ আলু ঢেলে দিতে হবে। নেড়েচেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে দিয়ে ৭ থেকে ৮ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকনা ৮ মিনিট পর খুললে দেখতে পাবেন আলু ক্রিস্পি মানে কড়কড়ে হয়ে গিয়েছে। এবার এতে বানানো মশলা ২ চা চামচ ও স্বাদ অনুযায়ী নুন দিতে হবে। ভালো করে আলুর সাথে এগুলো মিশিয়ে নিয়ে মিডিয়াম আঁচে ৫ মিনিট ভাজলেই রেডি চটপটে স্টাইল আলু ভাজার প্রথম রেসিপি। চাইলে উপর থেকে সামান্য ধনেপাতা ছড়িয়ে দিতে পারেন। এর স্বাদ এত টেস্টি যে এটা এমনি এমনি খেয়ে ফেলা যায়।
বানানো ও আয়োজনের সময় মিলে এটি বানাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট মত লাগবে। ৫০০ গ্রাম আলু দিয়ে বানানো এই চটপটে আলু ভাজা ৪জন মত খেতে পারবেন। পরোটা ও রুটি দিয়ে খেতে দারুন লাগে।
(দ্বিতীয় স্টাইল) আলু ভাজা রেসিপির উপকরণঃ
- আলু ৫০০ গ্রাম (লম্বা লম্বা করে কাটা)
- মিডিয়াম সাইজের পেঁয়াজ ২টো কুচি কুচি করা
- সরষের তেল ৬ চা চামচ
- কাঁচা লঙ্কা ২টো
- শুকনো লঙ্কা ২টো
- কালোজিরে ১ চামচ
- পোস্ত দানা ১ চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চামচ
- নুন স্বাদ অনুযায়ী
- ধনেপাতা সামান্য
বানানোর পদ্ধতিঃ
এটি বানানোর আগে আলু সেদ্ধ করতে হবে না। কড়াই গরম হলে তাতে ৬ চা চামচ সরষের তেল দিয়ে তা প্রথমে গরম করে নিন। তেল গরম হয়ে গেলে তাতে কালোজিরে ১ চামচ, পোস্ত দানা ১ চামচ, ২টো কাঁচা লঙ্কা ও ২টো শুকনো লঙ্কা চিড়ে দিয়ে দিন। হাল্কা করে ভেজে নিয়ে এতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন। মিডিয়াম আঁচে ১ মিনিট মত পেঁয়াজ ভাজার পর কেটে রাখা আলু মিশিয়ে দিন।
আলু মেশানোর পর ২ মিনিট মিডিয়াম আঁচে নেড়েচেড়ে ভাজতে থাকুন। তারপর এতে হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চামচ ও স্বাদ মত নুন দিন। কম আঁচে আরও ২ মিনিট ভাজার পর কড়াই ঢেকে দিন। মিডিয়াম আঁচে ২ মিনিট ভেজে ঢাকনা খুলে নেড়ে দিয়ে আবার একই ভাবে ২ মিনিট ভাজলে রেডি আপনার আলু ভাজা। নামানোর আগে ধনেপাতা কুচি দিয়ে ৩০ সেকেন্ড মত রাখুন।
এই রেসিপিটি বানানোর ও আয়োজনের সময় দুই মিলিয়ে মাত্র ২০ মিনিট লাগবে। এই পরিমানে বানালে ৪জন এটি খেতে পারবেন। গরম গরম ডাল ভাতের সাথে হোক বা রুটি দুর্দান্ত লাগবে এটি খেতে।
বিশেষ কথাঃ
- আজকের রেসিপি লেখার শুরুতে যে মশলা বানানোর পদ্ধতি বললাম তা কিন্তু যেকোনো খাবারে ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে। সন্ধ্যে বেলার মুড়ি মাখা থেকে রবিবারের সকালের গরম গরম ঘুগনিতেও এটা উপর থেকে ছড়িয়ে দিতে পারেন।
- একসাথে অনেকটা বানিয়ে দুমাসের উপর স্টোর করে রেখে খাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এয়ার টাইট কণ্টেনারে রাখবেন।
- মাংস ম্যারিনেটের সময় ২ চামচ এই মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করলে তার স্বাদ হবে দ্বিগুণ। ট্রাই করতে পারেন একবার।
বিশেষ টিপসঃ
- আলু ভাজা মানেই এক গাদা তেলে চপচপে করে ভাজা নয়। কম তেলে মুচমুচে ভাজা খেতে হলে আলু অর্ধেক সেদ্ধ করে নিয়ে তারপর জল ঝরিয়ে নিয়ে ভাজুন। টেস্ট একই থাকবে কিন্তু তেলের খরচ কম হবে।
- আলু ভাজা দুদিন স্টোর করে খেতে চাইলে ভাজার পর ভালো করে তেল ঝরিয়ে নিয়ে এয়ার টাইট কণ্টেনারে রাখুন। খাওয়ার আগে চাটু গরম করে হাল্কা গরম করে নিন, স্বাদ একদম এক থাকবে।
Hi i like your aloo vhaja its tasty.
Thank you 🙂