ছোলা এমন একটি খাবার যা কাঁচা অবস্থায় ভাজা, সেদ্ধ, শুধু ভেজানো, বা তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়। একে তো ছোলা৷ পুষ্টিগুণ অনেক, তার উপর এটা মাছ ও মাংসের চাইতে দামে সস্তা। তাই প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে ছোলা সহায়ক। যদিও ছোলা কাঁচা হিসেবে খেলে উপকার পাওয়া যায়, তবে সেটা সবসময় সবার শরীরে স্যুট করে না৷ ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে খেলে পেটেও সমস্যা হয় না আবার স্বাস্থ্যও ঠিক থাকে৷ আজকের আর্টিকেলে থাকছে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সেদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
সেদ্ধ ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
১. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করেঃ
ছোলাতে বিদ্যমান প্রোটিন এবং ফাইবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো অনেকক্ষণ পেটে থাকে তাই প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ছোলা খেলে সারাদিনে আর ক্ষুধা লাগে না। ফলে ভাজাভুজি খাওয়ার তাগিদ কমে যায়। ছোলার প্রোটিন ক্ষুধা হ্রাসকারী হরমোনগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
যেহেতু ছোলা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু এটা ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অধিক মাত্রায় থাকলেও ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। আর আমরা জানি দেহে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাঝারি ক্যালরির খাবার ছোলা তাই ডায়েট কন্ট্রোলের জন্য আদর্শ। প্রতিদিনের ডায়েটে সেদ্ধ ছোলা থাকলে কঠোর মিল রুটিন অনুসরণ করা থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। আবার বাড়তি ওজনও হ্রাস পায়।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারে বেশ বাধ্যবাধকতা থাকে। তাদের ডায়েটে শর্করার উপস্থিতি যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করতে হয়। এক্ষেত্রে সেদ্ধ ছোলা কাজে আসতে পারে। এর কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ছোলা খেলে রক্তে সুগার বেড়ে যায় না। আবার এর প্রোটিন ও ফাইবার দেহে শর্করার শোষণ ধীরগতির করে দেয়। তাই চট করে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইনসুলিন নেয়ার দরকার পড়ে না। ছোলায় বিদ্যমান ভিটামিন বি, জিঙ্ক, এবং ম্যাগনেসিয়াম টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৪. হজমক্রিয়া ত্বরান্বিত করেঃ
ছোলার ফাইবারগুলো হজমক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে। এই ফাইবারগুলো দ্রবণীয়, অর্থাৎ এরা দ্রুত জলে মিশে গিয়ে জেলীসদৃশ পদার্থ তৈরি করে। আবার এই দ্রবণীয় আঁশগুলো অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। সেই সাথে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ব্যাকটেরিয়ার এই ব্যালেন্সের কারণে হজমক্রিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হ্রাস পায়। যেমন, আলসার, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি। আবার ছোলা কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পাকস্থলীর বর্জ্য নিষ্কাশন স্বাভাবিক রাখে।
৫. রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখেঃ
ছোলায় আয়রনের আধিক্য আছে। ফলে এটা দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। আবার ছোলা ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটা অল্পবয়সী মহিলাদের শরীরে হাইপারটেনশনের প্রবণতা কমায়। সেই সাথে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রতিদিন আধা কাপ সিদ্ধ ছোলা খেলে পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ছোলায় আইসোফ্লাভন নামক একটি উপাদান বিদ্যমান থাকে যা ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর আর্টারির কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
৫. প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে ছোলার ভূমিকা অনবদ্য। তবে এক্ষেত্রে সেদ্ধ ছোলার চাইতে ভেজানো ছোলা বেশি কার্যকর। কাঁচা ছোলা সারারাত ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে। তবে প্রথম অবস্থায় ভেজানোর পরে সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। পেঁয়াজ দিয়ে খেলে আরো ভালো হবে।
৬. হৃদরোগ দূরে থাকেঃ
ছোলার আঁশ, বিশেষ করে দ্রবণীয় আঁশ ট্রাইগ্লিসারিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আবার এই খাবার দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। আবার যেহেতু ছোলা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে তাই আচমকা ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায় না এবং হার্ট অ্যাটাকও হয় না।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
দৈনিক সেদ্ধ ছোলা গ্রহণে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়৷ ছোলার ফ্যাটি অ্যাসিড কোলনের প্রদাহ কমায় এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে৷ আবার এর ফলিক অ্যাসিড রেক্টাল ক্যান্সারের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়। ছোলাতে সেপোনিন নামক উদ্ভিজ্জ যৌগ পাওয়া যায় যা দেহে ক্যান্সারের বিকাশ ঘটতে দেয় না এবং টিউমারের বৃদ্ধি আটকে দেয়। পাশাপাশি ছোলার ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ফুসফুসের ক্যান্সার এবং মেয়েদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েঃ
ছোলাতে বিদ্যমান বিভিন্ন ভিটামিন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, কপার, ট্রিপটোফেন, ফোলেট, ক্লোরোফিল, অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান, এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি এটা ছোটবড় নানা দৈহিক সমস্যাও দূরে রাখে। প্রতিদিন সকালে লবণ ও আদা দিয়ে সেদ্ধ করা ছোলা সারাদিনের জন্য শক্তির যোগান দেবে। এতে শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় শারীরিক অস্থিরতা কমে যায়। আবার এর সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত ও পায়ের জ্বালাপোড়া কমায়। ঘন ঘন বা অল্পতে বমি করার সমস্যা থাকলে সেদ্ধ ছোলা খাওয়া উপকারী। এর ভিটামিন বি মেরুদণ্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।