কলাপাতায় খাবার বললেই বাঙালি মনে ভিড় করে আসে একগাদা নস্ট্যালজিয়া। আগেকার দিনে বিয়েবাড়ি বা যে-কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতেই কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হত। বর্তমানে সময়ের দাবি মেনেই কলাপাতা সরেছে, তার বদলে জায়গা করে নিয়েছে কাঁচের বাহারি প্লেট। কিন্তু এখন কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করে এমন রেস্তোরাঁগুলির চাহিদা প্রচুর। শুধু কি দেখতে ভাল লাগে বলেই কলাপাতায় খাওয়া? আজ্ঞে না। কলাপাতায় খাওয়ার উপকারিতা কিন্তু অনেক।
কেন খাবেন কলাপাতায়?
- অনেকেই জানেন না, কলাপাতায় কিন্তু রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ, যা খাবারে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
- এছাড়া কলাপাতার উপর থাকা হালকা মোমের মতো আস্তরণ খাবারে ময়লা ও জীবাণু প্রবেশ করতে দেয় না।
- পলিফেনল নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কলাপাতা নানারকম রোগকে দূরেও রাখতে পারে।
- শেফেরা বলেন, কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করলে নাকি খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
- কলাপাতায় থাকা মোমের আস্তরণ গরম খাবারের সংস্পর্শে গলে যায় এবং তা পরোক্ষভাবে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ দুইই বাড়িয়ে তোলে।
এখন দেখা যাক, কোন খাবার কলাপাতায় খেলে তা সেই খাবারের স্বাদ ও গন্ধ দুইই বাড়িয়ে তোলে।
১. লুচি-ছোলার ডালঃ
পুজোর দিনে লুচি-ছোলার ডাল-কলাপাতা…এই কম্বিনেশন কিন্তু অমৃতসমানই বটে! এখন বেশিরভাগ পুজোর ভোগেই প্লাস্টিকের বা কাগজের প্লেট ব্যবহার হলেও যারা ঐতিহ্যে বিশ্বাসী, তাঁরা কিন্তু এখনও কলাপাতায় ভোগ দেওয়ার ব্যাপারটিকেই ধরে রেখেছেন। বাড়িতেও পুজো থাকলে এভাবে ভোগ দিতে পারেন। দেখবেন, স্বাদই আলাদা হবে।
২. ভাত-ডাল-সেদ্ধ আলুঃ
আজ্ঞে হ্যাঁ, এই নিতান্ত সাদামাটা খাবারই কিন্তু কলাপাতার গুণে হয়ে উঠতে পারে অনন্যসাধারণ। ভাত, মুসুরির ডাল, সঙ্গে রাখুন ঝাল-ঝাল করে মাখা আলু সেদ্ধ বা আলু ভাজা। আর একফালি গন্ধ লেবু। দেখবেন, দুপুরের খাওয়াটা একেবারে জমে গিয়েছে।
৩. ধোসাঃ
কলাপাতা কিন্তু শুধু বাঙালির ঐতিহ্য নয়। দক্ষিণ ভারতেও রান্নায় বা খাবার পরিবেশনে কলাপাতার প্রচলন বহুল। ধোসা, ইডলি, উত্তাপম সহ অনেক খাবারই দক্ষিণে কলাপাতায় পরিবেশন করা হয়।
৪. কেরল কুইজিনঃ
ওনামের ছবি এক্ষেত্রে আপনাদের অনেকেরই মনে পড়ে যাবে। কেরলে তো বটেই, খাস কলকাতাতেও কিন্তু এখন ওনাম উপলক্ষ্যে নামী-দামী অনেক রেস্তোরাঁতে কলাপাতায় ওনাম স্পেশাল খাবার পরিবেশন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী কেরল কুইজিনের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে এর জুড়ি নেই।
৫. পাতুরিঃ
বাঙালিয়ানার সঙ্গে পাতুরির সম্পর্ক বহুদিনের। প্রাচীনকাল থেকেই কলাপাতায় মুড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে রান্না করা হত। কলাপাতায় মুড়ে খাবার স্টিম, গ্রিল বা ডিপ ফ্রাই করলে তা সুসিদ্ধ হয়। কলাপাতায় ভেটকি মাছ থেকে শুরু করে চিংড়ি, বাসা, পনির পাতুরি, ইত্যাদি যে-কোনও কিছুরই পাতুরি বানিয়ে পরিবেশন করুন। গরম ভাতের সঙ্গে মেখে খেতে যে দারুণ লাগবে, তা আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
৬. দামনি ধোকলাঃ
ধোকলা গুজরাতের বিখ্যাত স্ন্যাকস। কিন্তু এই দামনি ধোকলা তার মধ্যে একটু আলাদা। ডাল এবং চালের মিশ্রণে ব্যাটার তৈরি করে কলাপাতায় র্যাপ করে স্টিম করতে বসিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু এই ধোকলা। কলাপাতায় স্টিম করা হয় বলে ভাপ এই ধোকলার সব জায়গাতেই প্রবেশ করতে পারে বলে ধোকলা নরম হয়।
৭. পানকিঃ
এটিও একটি বিখ্যাত গুজরাতি স্ন্যাকস। কলাপাতায় পানকির ব্যাটার ঢেলে তারপর তাকে সামান্য তেল দিয়ে তাওয়াতে সেঁকতে হয়। এভাবে পানকির মধ্যে কলাপাতার ফ্লেভার ঢুকে যায়, ফলে সেটি খেতেও সুন্দর লাগে।
৮. বার-বি-কিউয়ে কলাপাতাঃ
শীতকাল আসছে। এখন অনেকেই বাড়িতে মাঝে-মাঝে বার-বি-কিউ করবেন। আপনারা কিন্তু কলাপাতাকে বার-বি-কিউয়ের জন্য ম্যাট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গ্রিলারের উপর কলাপাতাটি রাখুন। তারপর মাংস বা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য রেখে গ্রিল করুন। এটি খাবার সুন্দর একটি ফ্লেভার যোগ করে।
৯. খিচুড়িঃ
কলাপাতায় গরম-গরম ভোগের খিচুড়ি, সেইসঙ্গে ঘি আর সঙ্গে বেগুনি। এটি কিন্তু খেতে দুর্দান্ত লাগে। আপনি বাড়িতে যদি কোনওদিন খিচুড়ি রান্না করেন, তাহলে সেটি কলাপাতায় পরিবেশন করে দেখুন, দেখবেন স্বাদ কয়েকশো গুণ বেড়ে গিয়েছে।
১০. যে-কোনও খাবারঃ
শেষে বলার, শুধু এই ক’টি খাবারই নয়, কলাপাতায় রেখে কিন্তু আপনি যে-কোনও খাবারই খেতে পারেন। এমনকি ইচ্ছে করলে রোজকার খাবার জন্যেও কলাপাতা ব্যবহার করতে পারেন। আগেই বলেছি কলাপাতায় খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এছাড়া নানা রোগকে দূরে রাখতেও এর জুড়ি নেই। তাছাড়া কলাপাতা খুব সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। তাই একঘেয়ে খাবারে স্বাদ বাড়াতে এবং লাঞ্চ বা ডিনার টেবিলে বাড়তি টুইস্ট যোগ করতে কলাপাতাকে রাখতেই পারেন। সকলে চমকে যাবেন!