মা হওয়ার স্বপ্ন থেকে মা হওয়ার যাত্রা একজন নারীর জন্য অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ, আবেগময় এবং দায়িত্বশীলও। এই সময়ে, নতুন জীবনের জন্য শরীরের পরিবর্তনের সাথে একটি উন্নত জীবনের কল্পনাও চলে। মায়ের স্বাস্থ্য এবং সন্তানের বিকাশের জন্য, গর্ভধারণ থেকে নবম মাস পর্যন্ত গর্ভবতী মহিলার খাদ্যের প্রতি সর্বাধিক যত্ন নেওয়া হয় কারণ এটি তার অনাগত সন্তানকে পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে অনেক সময় বিভিন্ন জায়গার খাবারের বিভিন্ন বিশ্বাস, বড়দের অভিজ্ঞতা, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং গর্ভবতী মহিলার নিজের পছন্দ-অপছন্দের কারণে সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আয়ুর্বেদ দ্বারা নির্ধারিত এই পুষ্টিকর খাবারটি খুব উপকারী হতে পারে।
আয়ুষ মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান মেডিকেল হেরিটেজ (National Institute of Indian Medical Heritage) (সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদিক সায়েন্সেস) দ্বারা জারি করা একটি নির্দেশিকা (আয়ুর্বেদ) ইন নিউট্রিশনাল অ্যাডভোকেসি, খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে প্রথম মাস থেকে নবম মাস পর্যন্ত গর্ভবতী মহিলাদের কী খাওয়া উচিত, তাও বলা হয়েছে। আয়ুর্বেদ সবসময় স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধ করে সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের উপর জোর দিয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলার খাদ্য গর্ভের সন্তানের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী, তাই আয়ুর্বেদের এই সুপারিশগুলি গ্রহণ করা খুব উপকারী হতে পারে।
ক. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খাদ্যঃ
প্রথম মাসঃ
প্রথম মাসে মহিলাদের ঠান্ডা দুধ ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যার মধ্যে ফল, সবজি, মসুর ডাল ইত্যাদি নেওয়া যেতে পারে। শাক সবজি শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবু মা আর আসন্ন সন্তানের জন্য। তবে কি কি শাক সবজি খাওয়া ভালো তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। এতে বেশি উপকার হবে। কারণ অনেক সবজি অনেকের সুট করে না তাই কোনটা খাবেন আর কোনটা না তা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো।
দ্বিতীয় মাসঃ
এই মাসে, গর্ভবতী মহিলারা মৌসুমি ফল, শাকসবজি, দুধ, দই, রুটি খাওয়ার সাথে সাথে দুধের সাথে আয়ুর্বেদিক ওষুধ শতবরী খেতে পারেন। অ্যাসপারাগাস উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়া যা শরীরের শক্তি, হাড় ও জয়েন্টের শক্তি বৃদ্ধি করে।
তৃতীয় মাসঃ
এই মাসে মহিলাদের অবশ্যই দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দই, পনির, বাটারমিল্ক, ঘি। এছাড়া এই মাস থেকেই মধু খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন ঠান্ডা দুধে মধু খান। এটি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই উপকারী। পুষ্টিকর খাবার খান।
চতুর্থ মাসঃ
চতুর্থ মাসে দুধ খাওয়ার পাশাপাশি মাখন খাওয়া খুবই উপকারী। বাটার মিল্ক পান করাও উপকারী। পাশাপাশি মৌসুমি ফল, সবজি, সালাদ, জুস খেতে থাকুন।
পঞ্চম মাসঃ
গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে প্রচুর পরিমাণে দুধ ও ঘি খান। তবে খাঁটি দুধ ঘি খাবেন। বিশেষ করে খাঁটি ঘি পাওয়া একটু মুশকিল। বাজারে ভেজালের সংখ্যা বেশি। তাই সতর্ক থাকবেন। খাঁটি না ভেজাল খাচ্ছেন সেই বিষয়ে।
ষষ্ঠ মাসঃ
এই মাসে দুধ, ঘি, মিষ্টি জিনিস, মিষ্টি ফল, শস্য ইত্যাদি সেবন করুন। শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
সপ্তম মাসঃ
সপ্তম মাসে প্রচুর পরিমাণে দুধ পান করুন। এর পাশাপাশি দুধে ঘিও নিতে পারেন। এই মাসে ঘি সেবন করুন।
অষ্টম মাসঃ
এই মাসে গর্ভের শিশুর ওজন বাড়তে থাকে। এই মাসে ঘি মিশিয়ে দুধ খান। পোরিজ গম বা বার্লি হতে পারে।
নবম মাসঃ
এ মাসে রান্না করা ভাত ঘি দিয়ে খাওয়া যায়। কেউ যদি আমিষভোজী হন, তবে তিনি ঘি যোগ করে মাংসের স্যুপও পান করতে পারেন।
খ. প্রসবের পরে এই জিনিসগুলি খাওয়ার কথা বলা হয়ঃ
আয়ুর্বেদের দ্বারা বলা হয়েছে যে প্রসব বা প্রসবের পরপরই মহিলাকে দুগ্ধহীন ঘোল দেওয়া যেতে পারে। এতে বার্লি বা গমের ঘোল থাকতে পারে। এ ছাড়া ছোলার ডাল বা বার্লি যোগ করেও ভাত দেওয়া যেতে পারে। তবে এই জিনিসগুলি হজম শক্তির ভিত্তিতেই দেওয়া উচিত। মুগ ডালের জল, ছোলা ডাল, যব বা গমের ঘোল, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘি ও তেল মহিলাকে দিতে হবে। জিরা, শুকনো আদা, গোলমরিচ এবং পিপল যোগ করে তাদের খাবার তৈরি করতে হবে। প্রসবের আট দিন পর মহিলাকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া যেতে পারে। তবে এর সাথে মেথির লাড্ডু বা শুকনো আদার লাড্ডুও তৈরি করা যেতে পারে যাতে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধের পাশাপাশি মা পুষ্টিও পেতে পারেন।