skip to content
CurryNaari
Welcome to Nandini’s world of cooking & more...

ইমিউনিটি বাড়াতে পারে যে ৯ ধরণের খাবার জিনিস

চিকেন সুপ

আমরা সবাই জানি যে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, লাল চালের ভাত ইত্যাদি হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। কিন্তু সব খাবারের যে পুষ্টিগুণ বা উপকারিতা সমান তা কিন্তু নয়। কোন খাবার হয়তো অন্ত্রের জন্য ভালো, কোনটা রক্ত পরিষ্কার রাখে, আবার কোনটা হয়তো শ্বাসনালীর জন্য ভালো। মানবদেহের জন্য প্রতিটি পুষ্টিকর খাবারই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়বে যে ৯ খাবারে তা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন কোন কোন খাবার কিভাবে আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করে। তো দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

ক. ইমিউনিটি বাড়বে যে ৯টি খাবারেঃ

১. সাইট্রাস ফ্রুটসঃ

সাইট্রাস ফ্রুটস বা টক ফল হচ্ছে ভিটামিন সি এর উৎকৃষ্ট উৎস। বিভিন্ন টক ফলের মধ্যে পাতি লেবু, কাগজী লেবু, কমলালেবু, মোসাম্বি, এবং জাম্বুরাতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশী। নিয়মিত সাইট্রাস ফ্রুটস গ্রহণ করলে রক্তে শ্বেত কণিকা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশন দমন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সাধারণ সর্দি-কাশি ও ঠান্ডার সমস্যায় সাইট্রাস ফ্রুটস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তাই প্রতিদিন খাবার পাতে এক টুকরো লেবু বা একটি করে সাইট্রাস ফ্রুট খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ৯০ মিলিগ্রাম ও একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারবেন। আপনি যদি ফলের বদলে সাপ্লিমেন্ট আকারে ভিটামিন সি গ্রহণ করেন তাহলে দৈনিক ২০০০ মিলিগ্রামের বেশী একদমই খাবেন না।

২. উজ্জ্বল রঙের শাকসবজিঃ

গাঢ় ও উজ্জ্বল রঙের শাকসবজিতে হালকা রঙের শাকসবজির তুলনায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। পালং শাক, ব্রোকলি, এবং অন্যান্য গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, খনিজ পদার্থ, বিটা ক্যারোটিন, এবং ফাইবার। এগুলো হৃদপিন্ড, মস্তিষ্ক, এবং অন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী।

ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য সবুজ শাকসবজির জুড়ি নেই। পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে সবুজ শাকসবজি হালকা সেদ্ধ বা কম তেল-মশলা দিয়ে রান্না করে খাওয়া ভালো। আবার উজ্জ্বল রঙের সবজি, যেমন গাজর ও লাল ক্যাপসিকাম, ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর। এগুলো ইমিউন সিস্টেম, চোখ, এবং ত্বকের জন্য খুবই ভালো। গাজর ও ক্যাপসিকাম কাঁচা বা হালকা সেদ্ধ করেও খেতে পারবেন।
পাকা পেঁপেও ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। মাঝারি সাইজের একটি পাকা পেঁপেতে দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি দ্বিগুণ পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে পেপেইন নামক এনজাইম আছে যা অ্যান্টিইনফ্লেমেশনের কাজ করে। এছাড়াও পেঁপেতে বিদ্যমান ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৩. শেল ফিশঃ

মাছ নিয়ে কথা বলতে গেলে সাধারণত মিঠা পানির ও নোনা পানির মাছের কথা সবার আগে মাথায় আসে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, শেল ফিশ বা খোসা যুক্ত মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণীও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, ও চিংড়িকে বলা হয় শেল ফিশ। শেল ফিশে জিঙ্ক থাকে প্রচুর পরিমাণে, যা শরীরের ইমিউন সেলসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে মাত্রাতিরিক্ত জিঙ্ক শরীরের জন্য খারাপ। তাই সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম এবং সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্কের বেশী খাওয়া উচিত না।

৪. পোল্ট্রিঃ

মাংস এমনিতেই প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। তবে বিফ ও মাটনের চাইতে পোল্ট্রি অর্থাৎ মুরগী, টার্কি, ও হাঁসের মাংস তুলনামূলকভাবে বেশী সহজপাচ্য ও উপকারী। প্রোটিন, ভিটামিন বি-৬, জিঙ্ক, এবং অ্যামিনো অ্যাসিডে ভরপুর মুরগীর মাংস মানবদেহে নতুন কোষ গঠন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে, ইনফেকশনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, লোহিত ও শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়, এবং ইনফ্লেমেশন কমায়।

সাধারণ অসুখ বা ঠান্ডা-জ্বর হলে অনেকেই চিকেন স্যুপ খেয়ে থাকেন। এই স্যুপ ইনফ্লেমেশন কমানোর মাধ্যমে রোগের প্রকোপ কমিয়ে দেয়। আবার চিকেন স্টক বা ব্রোথে বিদ্যমান জেলাটিন, কনড্রয়টিন, এবং অন্যান্য নিউট্রিয়েন্ট অন্ত্রের সমস্যা কমায় এবং ইমিউনিটি বাড়ায়।

৫. দইঃ

দই ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট একটি উৎস। ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। তাই প্রতিদিন খাওয়ার পরে দই খেলে অসুখবিসুখে ভোগার চান্স অনেকাংশেই কমে যায়। তবে মিষ্টি দইয়ের চাইতে টক দই শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আপনার যদি টক দই খেতে ভালো না লাগে তাহলে টক দইয়ের সাথে যেকোন মিষ্টি ফল খেতে পারেন। আবার টক দইয়ে সামান্য মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দই বাদে অন্য কোন ফার্মেন্টেড ডেইরী প্রোডাক্ট খেতে পারেন। এর প্রোবায়োটিকস আপনার হজমশক্তি ঠিক রাখবে।

৬. চাঃ

এক কাপ গরম চা যেমন শরীরের ক্লান্তি দূর করতে পারে তেমনি রোগবালাইও রাখে শতহস্ত দূরে। লাল চা ও গ্রিন টি উভয়ই পলিফেনলস ও ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লাল চায়ের চাইতে গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য বেশী উপকারী। কারণ গ্রিন টি প্রস্তুত হয় স্টিমিংয়ের মাধ্যমে। তাই এর এপিগ্যালোক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অটুট থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানবদেহের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

কিন্তু ব্ল্যাক টি বা কালো চায়ের দানা তৈরি হয় ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে। যা চায়ের এপিগ্যালোক্যাটেচিন অনেকাংশে নষ্ট করে দেয়। আবার গ্রিন টি থেকে এল-থিয়ানিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এটি দেহে জীবাণু ধ্বংসকারী কোষের উৎপাদন বাড়ায়।

৭. শুকনো খাবারঃ (ড্রাইড ফ্রুটস, বাদাম, বীজ)

আমন্ড, আখরোট, কাজু বাদাম, সূর্যমুখী ফুল ও কুমড়ার বীজ, এবং ড্রাইড ফ্রুটস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিনস (বি-৬, ই), মিনারেলস (ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী। আমন্ড সালাদে বা প্রতিদিন সকালে এক মুঠো করে খেতে পারেন স্ন্যাকস হিসেবে। এটি দিনভর শরীরে এনার্জি যোগানের পাশাপাশি ইমিউনিটি বাড়িয়ে তুলবে।

সূর্যমুখী, কুমড়ার বীজ গ্রহণে দেহ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায়। ১ আউন্স সূর্যমুখীর বীজে যে পরিমাণ সেলেনিয়াম পাওয়া যায় তা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক চাহিদার অর্ধেক পূরণ করে। কুমড়ার বীজে বিদ্যমান ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন কে কাটাছেঁড়া ও ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।

৮. তেলঃ

অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, অ্যাভোকাডো অয়েল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, এবং যেকোন বাদামের তেলে বিদ্যমান ফ্যাটি অ্যাসিড মানবদেহে ইনফ্লেমেশন কমায়, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং মাতৃগর্ভে ভ্রূণের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। মাছের তেলও শরীরের জন্য সমানভাবে উপকারী। স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল মাছের তেল রক্তের শ্বেত কণিকা বাড়ায়। ফলে শরীরে ইনফেকশন সহজে বাসা বাঁধতে পারে না।

৯. মসলাঃ

মসলাও কিন্তু ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলে, জানেন কি সেটা? খাবারের স্বাদ বাড়ানোর সাথে সাথে মসলা মানবদেহে ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও কাজ করে। আদা অসুখ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণ ঠান্ডা ও বমির সমস্যায় আদা আরাম দেয়। এতে বিদ্যমান শক্তিশালী অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ইনফ্লেমেশন কমায়। যার কারণে গলা ব্যথা, বমি ভাব, ক্রোনিক পেইন কমে যায়। এমনকি কোলেস্টেরল কমাতেও আদা কাজ করে।

রসুনে আছে এলিসিন নামক একটি উপাদান যা ঠান্ডা লাগার হাত থেকে বাঁচায়। এটি ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া আটকানো এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ভূমিকা রাখে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় হলুদ। এতে আছে কারকিউমিন নামক একটি উপাদান, যা ইমিউনিটি বুস্ট করে, অ্যান্টিভাইরাল হিসেবে কাজ করে, এবং এক্সারসাইজের কারণে হওয়া মাংসপেশীর ড্যামেজ হওয়া কমায়। এছাড়াও লবঙ্গ, হিং, গোলমরিচ, দারচিনি ইত্যাদি স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে।

Article Categories:
Lifestyle

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *