চা-প্রিয় লোকেদের কাছে আদা চা এক ভালোবাসার নাম। কাজের ফাঁকে, ক্লান্তিতে, অবসরে এক কাপ চা মুহূর্তে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। তার সাথে যদি যোগ হয় আদা, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
ক্যাফেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর চায়ের সাথে আদার মিশ্রণ দেহ থেকে হাজারো রোগের জীবাণু দূর করতে সক্ষম। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এবং মিনারেলের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম আদা। জেনে নিন আদা চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের লেখা থেকে।
১. স্ট্রেস কমায়ঃ
মানসিক চিন্তা, অবসাদ, বিষন্নতা, ক্লান্তির কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। যখন স্ট্রেস কম থাকবে তখন শরীর এমনিতেই নীরোগ থাকবে। তাই স্ট্রেস কমাতে চাইলে নিয়মিত আদা দিয়ে চা খাবেন। কারণ আদার পুষ্টিগুণ শরীরের যেকোন ক্লান্তি ও চিন্তা দূর করে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অস্বস্তিতে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা যখন হবে তখনই আদা চা খাবেন। পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে আদা। আদা চায়ের পাশাপাশি আদা কুচি বা আদার রস খেলে বাড়তি মেদ-চর্বি দ্রুত ঝরে যাবে।
২. ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়ঃ
আদায় বিদ্যমান অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, এবং মিনারেল রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে এবং ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়। ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না আদা, ফলে হৃদযন্ত্রের যাবতীয় রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
হুট করে ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে সাথে সাথে আদা চা খেতে হবে। এতে অল্প সময়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়াও গরমের সময় নিয়মিত আদা চা পানে অতিরিক্ত ঘাম হওয়াও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়বেটিসের রোগীদের নিয়মিত আদা চা পান করা উচিত, তাতে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. পেটের রোগ কমে যায়ঃ
পাকস্থলীতে পাচক রসের ঘাটতি থাকলে হজমের গোলযোগ দেখা দেয়। আদা পাচক রসের উৎপাদন বাড়িয়ে হজমশক্তি স্বাভাবিক করে। পাশাপাশি, আদার রস হজমে সহায়ক এনজাইমগুলোর নিঃসরণ ঘটাতেও সাহায্য করে।
হজমক্রিয়া ঠিক থাকলে বদহজম, অম্বল, অ্যাসিডিটি, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হওয়ার চান্স খুব কম থাকে। তার সাথে সাথে খাবারে রুচিও ফিরে আসে। খাওয়ার পরে পেট ব্যথা বা অস্বস্তি হলে সাথে সাথে এক কাপ গরম আদা মিশ্রিত চা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. মাথার যন্ত্রণা কমায়ঃ
আদায় এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই চটজলদি কাজ করা শুরু করে। মাথার যন্ত্রণা কমানোর জন্য এই উপাদানগুলো বেশ উপকারী৷ তীব্র মাথা ব্যথায় ঝটপট এক কাপ গরম চা প্রশান্তি এনে দেয়। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, মাইগ্রেন, অথবা মস্তিষ্কের অন্য কোন সমস্যা সমাধানে ডাক্তাররা তাই আদা চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৫. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে আদা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সহায়ক। সেই সাথে এটি দেহে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে। ফলে ছোট বড় যেকোন রোগ থেকে শরীর থাকে সুস্থ। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে আদার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীর অত্যধিক দুর্বল থাকে। তখন মধু-লেবু দিয়ে আদা চা, আদা কুচি, আদা রস করে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
৬. শ্বাসতন্ত্র সুস্থ রাখেঃ
সর্দি, কাশি, কফ, ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যা, এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় আদা চা দারুণ কাজে দেয়। বিশ্বাস না হলে কয়েকদিন টানা আদা চা খেয়ে দেখুন, নিজের চোখেই ফল দেখতে পাবেন। গলা ব্যথায় আদা, এলাচ, লেবুর রস দেয়া চা খেলে আরাম লাগে।
৭. সিকনেস দূর করেঃ
যাত্রাপথে অনেকেই মোশন সিকনেসের কারণে বমি করে একাকার অবস্থা করে ফেলেন। মোশন সিকনেস বা সি সিকনেসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যাত্রা করার আগে এক কাপ আদা চা খেয়ে নিবেন। তাহলে মাঝপথে বমি হবে না। চা খেতে না পারলে যাত্রা শুরু হওয়ার সময়ে এক টুকরা আদা চিবোতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস থেকে আরাম পেতে আদা চা খেতে পারেন।
৮. পিরিয়ডের যন্ত্রণা কমায়ঃ
পিরিয়ডের সময়ে তলপেটের ব্যথা কমাতে শুধু আদা দিয়ে বা আদা-মধু দিয়ে চা খাবেন। আবার গরম জলে আদা দিয়ে তাতে তোয়ালে ভিজিয়ে সেঁক দিলেও পেট ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও মাংসপেশি ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে আদা চা।