রান্নাঘরে রান্না করা একটি দৈনন্দিন কাজ, কিন্তু তবুও রান্নাঘরে যাওয়ার সময় আপনাকে অনেক নিরাপত্তা এবং যত্ন নিতে হবে। কারণ রান্নাঘর এমন একটি জায়গা যেখানে আপনাকে সরাসরি গ্যাস, গরম বাসন, ফুটন্ত জল এবং ফুটন্ত জিনিসের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় আমরা রান্নাঘরে কাজ করার সময় তাড়াহুড়ো করে থাকি এবং এর খেসারত বাবদ আমাদের ত্বক পুড়ে যায়।
রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে যখন কারও কারও ত্বক পুড়ে যায়, তখন তাদের কী করা উচিত তা তারা জানেন না। অনেক সময় সামান্য পুড়ে গেলেও কোনো পার্থক্য হয় না, কিন্তু শরীরের বেশি অংশ পুড়ে গেলে সমস্যা বাড়ে। যদি পোড়া জায়গাটি অবিলম্বে চিকিত্সা না করা হয় তবে এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি করার পাশাপাশি আপনার ক্ষতি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে কি করলে তৎক্ষণাৎ আরাম পাবেন জেনে নিন।
১. হলুদ পেস্ট এবং জলঃ
পোড়া জায়গায় হলুদ মাখিয়ে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে আবার হলুদ মাখিয়ে নিন। এটা বারবার করলে ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে হলুদের জল পোড়া জায়গায় লাগাতে পারেন। এতে জ্বালাপোড়া কমে যায় এবং ব্যথাও কম হয়। এমন অবস্থায় হলুদের জলও পোড়া জায়গার জন্য খুব কার্যকরী প্রতিকার।
২. ঠান্ডা জল ব্যবহার করুনঃ
রান্নার সময় বা অন্য কোনো কারণে হাত বা শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে প্রথমে সেই অংশ ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা না করলে শরীরে ফোস্কা পড়তে পারে। এছাড়া ঠাণ্ডা জলে একটি কাপড় ভিজিয়ে পোড়া অংশ মুড়ে নিন। রেখে দিন এইভাবে ঘণ্টাখানেক। দেখবেন জ্বালা করছে না একটুও।
৪. করলার রসঃ
তুলোর সাহায্যে করলার রস পোড়া জায়গায় লাগালে জ্বালাপোড়া দূর হয়। একটা করলা সামান্য থেঁতে নিয়ে তার থেকে রস বের করে নিন। এবার সেই রস তুলো দিয়ে পোড়া জায়গায় লাগান। লাগিয়ে রেখে দিন ১৫ মিনিট মত দেখবেন জ্বালা নেই। আর পোড়ার দাগ পড়বে না এটা করলে।
৫. ঘৃতকুমারী লাগানঃ
পোড়া জায়গায় অ্যালোভেরার পাল্প লাগালে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়। পোড়া জায়গাটি জল দিয়ে ধুয়ে অ্যালোভেরার পাল্প লাগিয়ে রাখুন মিনিট কুড়ি। পুড়ে গেলে ঘৃতকুমারী খুব উপকারী ব্যাথা ও জ্বালা কমানোর জন্য।
৬. কলার কামাল দেখুনঃ
পোড়া জায়গায় কলার পাল্প লাগালে জ্বালাপোড়া কম হয়। পাকা কলা চটকে পোড়া জায়গায় লাগালে ফোস্কাও পড়ে না। অনেকটা বেশি পুড়ে গেলে এই প্রতিকারটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
৭. তুলসি পাতার প্রলেপঃ
পোড়া জায়গায় তুলসী পাতার রস লাগালে তাও বেশ কার্যকরী। তুলসীর রস লাগালে পোড়ার পর কোনো প্রকার দাগ থাকে না। প্রায়শই দেখা যায় যে পোড়ার পরে সেই অংশে দীর্ঘ সময় ধরে দাগ তৈরি থেকে যায়। কিন্তু তুলসীর রস লাগালে ক্ষতস্থানে দাগ পড়বে না।
৮. অন্যান্য প্রতিকারঃ
- পোড়া জায়গায় টুথপেস্ট লাগিয়ে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। না ব্যাথা থাকবে আর না জ্বালা করবে। দারুণ উপায় এটা।
- আলু থেঁতো করে পুড়ে যাওয়া জায়গায় লাগান, জ্বলন্ত অনুভূতি সঙ্গে সঙ্গে প্রশমিত হয়।
- মধুর সাথে লবঙ্গ পিষে পোড়া জায়গায় লাগালে ক্ষত হয় না এবং জ্বালাপোড়াও দূর হয়। মধুতে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পোড়ার ক্ষতের জন্য অনেক উপকারী। মধু ব্যবহার করলে ক্ষত থেকে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
- জ্বালাপোড়া দূর করতে ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। ব্যথা উপশম করতে এবং দাগ রোধ করতে এটি কয়েকবার প্রয়োগ করতে হতে পারে।
- ডালিমের পাতা পিষে পোড়া জায়গায় লাগালে জ্বালাপোড়া দূর হয়।
বেশি পুড়ে গিয়ে ব্যাথা হলে যা করবেনঃ
পরিষ্কার এবং ঠান্ডা জল দিয়ে আলতো করে পোড়া জায়গা ধুয়ে ফেলুন। Silverex বা Bernal প্রয়োগ করুন। সোফ্রামাইসিনও প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে পোড়া জায়গায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি অনেকটা বেশি পুড়ে যায় রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।
ঘরে যদি অ্যালোভেরা জেল বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম থাকে তবে এটি পোড়া জায়গায় লাগাতে পারেন। ক্ষত সারানোর পাশাপাশি অ্যালোভেরা ত্বককে ঠান্ডা করে। ক্ষতের উপর একটি আলগা ব্যান্ডেজ বা নন-আঠালো ব্যান্ডেজ রাখুন এবং ব্যথা কমাতে বাতাস থেকে দূরে রাখুন। ক্ষতটি কিছুটা শুকিয়ে গেলে, শুকনো ব্যান্ডেজটি আলগা করে বেঁধে দিন, যাতে ময়লা এবং সংক্রমণ না ছড়ায়। পোড়ার পরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।