দোকানের চাল পলিশ করা থাকে। চালের দানায় বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো থাকে যাতে গুদামে বা দোকানে দিনের পর দিন পড়ে থাকলেও নষ্ট না হয়। সঠিকভাবে না ধুলে এই রাসায়নিক পেটে চলে যেতে পারে। আমরা সাধারণত দুই-তিনবার চাল ধুয়ে রান্না করতে বসে যাই। কিন্তু চাল ধোয়ার কাজ সঠিকভাবে করতে চাইলে অনেক সময় লাগে, কয়েকটি ধাপে ধোয়ার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। আবার সব চাল এক নিয়মে ধোয়া যায় না।
চাল ধোয়ার স্টেপ বাই স্টেপ গাইড নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য আজকে। এভাবে চাল ধুলে চাল হবে পরিষ্কার, রাসায়নিকমুক্ত, ঝরঝরে, আর খেতেও লাগবে সুস্বাদু।
স্টেপ ১ – পরিষ্কার পাত্রে চাল নিনঃ
চাল ধোয়ার জন্য পরিষ্কার পাত্র নিতে হবে। ট্রান্সপ্যারেন্ট বা স্বচ্ছ পাত্র হলে আরও ভালো। এতে চালের ভেতরে পোকামাকড় আছে কিনা দেখা যাবে। পরিষ্কার, স্বচ্ছ একটি পাত্রে প্রয়োজনমতো চাল নিন। আজকাল বাজারে চাল ধোয়ার জন্য বিশেষ ঝাঁজরি পাওয়া যায়। যেটায় খুবই ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, চাল পড়ে যায় না কিন্তু জল ঝরে যায়। চাইলে সেরকম ঝাঁজরিও ব্যবহার করতে পারেন।
স্টেপ ২ – পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ঢালুনঃ
পাত্রে চাল নেওয়ার পরে এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ঢালুন। চাল যতটুকু নেবেন তার তিনগুণ জল নিতে হবে। যেমন, এক কাপ চালের জন্য তিন কাপ জল এরকম। চাল জলে সম্পূর্ণ ডুবে থাকা চাই। সাধারণত চাল ধোয়ার জন্য ট্যাপের জল ব্যবহৃত হয়। সম্ভব হলে ফোটানো জল দিয়ে চাল ধুতে পারেন। ট্যাপের জলে অনেক জীবাণু থাকে, তা দিয়ে চাল না ধুলেই ভালো হয়।
স্টেপ ৩ – আলতো করে চাল ধুয়ে নিনঃ
এবারে পরিষ্কার হাতে চাল ধোবেন৷ আলতো করে কচলাবেন দানাগুলো যাতে চালে লেগে থাকা ময়লা আলাদা হয়ে যায়। তবে বেশি জোরে কচলালে দানা ভেঙে যেতে পারে। কচলানোর পরে হাত দিয়ে কয়েকবার ঘুরিয়ে দেবেন চাল। খেয়াল করলে দেখবেন, পাত্রের জল পরিষ্কার ছিল কিন্তু এখন ঘোলাটে হয়ে গেছে। কারণ চালের ময়লা, কেমিক্যাল, এবং স্টার্চ জলে মিশে গেছে। চালে পোকামাকড় থাকলে এতে তা একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়।
স্টেপ ৪ – জল ফেলে দিনঃ
চাল কচলে ধোয়ার পর কয়েক মিনিট রেখে দিন। এতে চাল নিচে চলে যাবে আর উপর থেকে জলটা ফেলা সহজ হয়ে যাবে। পাত্র সামান্য কাত করে জল ফেলে দেবেন। ফেলার সময়ে পাত্রের গায়ে এক হাত দিয়ে রাখবেন যাতে চাল গড়িয়ে পড়ে না যায়। চাল কখনোই একবার ধোয়ায় পরিষ্কার হয় না। কয়েকবার ধুতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত চালের জল পরিষ্কার দেখাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ধোবেন। ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেলেই জল স্বচ্ছ দেখাবে। এই জল পরবর্তীতে রান্না বা রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যদি ট্যাপের জল দিয়ে চাল পরিষ্কার করেন তাহলে তা ফেলে দিলে ভালো হয়।
স্টেপ ৫ – চাল ‘পাঞ্চ’ করুনঃ
এই স্টেপটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। সাধারণত আমরা চাল ধোয়ার পর সাথে সাথে গ্যাসে বসিয়ে দিই। কিন্তু চাল নরম ও ঝরঝরে করতে চাইলে চালকে হালকা ‘পাঞ্চ’ করা জরুরি। জল ঝরানোর পরে ভেজা চাল হালকা মুষ্টিবদ্ধ হাতে আলতো করে ঠেসে দিন। প্রেস করার সময়ে পাত্র ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করতে হবে। এভাবে পাত্রের গায়ে চাল হালকা করে ঠেসে দিতে হবে।
স্টেপ ৬ – চাল পুনরায় ধুয়ে নিনঃ
চাল একবার প্রেস করার পরে পাত্রে জল ঢালুন, চাল কয়েকবার ঘুরিয়ে ধুয়ে নিন, এবং জলটা ফেলে দিন। এভাবে কয়েকবার পাঞ্চ করে ধুতে হবে চাল। যতক্ষণ না পর্যন্ত জল স্বচ্ছ হচ্ছে ততক্ষণ পাঞ্চিং আর ওয়াশিং চালিয়ে যেতে হবে। চালভেদে এই কাজের সময় কমবেশি হতে পারে।
স্টেপ ৭ – চাল ভিজিয়ে রেখে দিনঃ
স্টেপ ৬ এর পরে আপনি চাল রান্না করতে পারেন অথবা ভিজিয়ে আরো কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন। হাতে সময় থাকলে ৭ নম্বর স্টেপটি অনুসরণ করুন। ভেজা চাল একটি পাত্রে জলপূর্ণ করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এভাবে ভিজিয়ে রাখলে চালের দানাগুলোতে জল ঢুকবে এবং শিথিল হবে। ফলে রান্না করতে সময় লাগবে কম এবং প্রতিটি দানা রান্নার পরে নরম এবং ঝরঝরে হবে। কোন কোন চাল ৩০ মিনিটের কম সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে, কোনটা বেশি। বাসমতি এবং জেসমিন রাইসের মতো সুগন্ধি চাল অনেকক্ষণ ধরে রান্না করলে গন্ধ থাকে না। এগুলো ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে দ্রুত রান্না করা যায় এবং গন্ধ অটুট থাকে।